এখন ‘প্রবাস গ্রাম’ একসময়ের ‘চোরের গ্রাম’ একসময় গ্রামটির নাম শুনলেই আঁতকে উঠত মেহেরপুরসহ আশপাশের জেলার মানুষ। কারণ গ্রামের সবাই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও রাহাজানিতে জড়িত ছিল। আশপাশের যেখানেই চুরি-ডাকাতি হতো, সব দায় এসে পড়ত গ্রামটির ওপর। কোথাও চুরি-ডাকাতি হলে জিনিসপত্র খুঁজতে এখানে আসত সবাই। এ গ্রামের মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তা করতেও সতর্ক থাকত অন্যরা। কিন্তু হঠাৎ করে বদলে গেল সেই গ্রামের চিত্র। কেউ এখন আর কেউ চুরি-ডাকাতি করে না। আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়ে গ্রামের সবাই এখন স্বাবলম্বী। গ্রামটিতে বইছে শান্তির সুবাতাস। কারণ গ্রামের প্রতিটি পরিবারের সদস্যই এখন প্রবাসী। মেহেরপুর সদর উপজেলার টেঙ্গার মাঠ গ্রাম একসময় ‘চোরের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেলেও এখন ‘প্রবাস গ্রাম’ হিসেবে চেনে আশপাশের জেলার মানুষ। মেহেরপুর জেলা সদর থেকে, মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে টেঙ্গার মাঠ। অর্ধশত বছর আগে এখানে ছিল ধু-ধু বালু আর মাঠ। ১৯৭৬ সালের দিকে জেলার কাজিপুর থেকে সর্বপ্রথম আকবর আলীসহ ছয়জন ব্যক্তি পরিবার নিয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করেন। অভাব-অনটনের কারণে শুরু করে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে। শুধু দেশ নয়, ভারত থেকেও চুরি-ডাকাতি করত তারা। এলাকার কোনো ডাকাতি ও গরু চুরির ঘটনা ঘটলে লোকজন খুঁজতে যেত টেঙ্গার মাঠে। ক্রমেই লোকজন বাড়তে থাকে গ্রামটিতে। সবাই জড়িয়ে পড়েন চুরির পেশায়। এলাকার লোকজন চোরের গ্রাম আখ্যা দিয়ে কেউ আত্মীয়তা করতে চাইত না। এমনকি ওই গ্রামের মানুষকে অন্য গ্রামের মানুষ কাজেও নিতে চাইত না। ওই গ্রামের মানুষ ভিন্ন গ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্যে গেলেও ভয়ে নিজের গ্রামের নাম বলত না। এলাকার মানুষ মনে করত টেঙ্গার মাঠ মানে শুধুই চোর-ডাকাতের বসবাস। স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৮ সালের দিকে তৎকালীন পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দীন উদ্যোগ নেন গ্রামের লেকজনকে সুপথে ফিরিয়ে আনার। সেই সঙ্গে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখান। গ্রামের লোকজনকে খাবার ও পোশাক দেন। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সবাই একতাবদ্ধ হন এবং যার কাছে যা আছে, তা বিক্রি করে সমবায় সমিতি গঠন করেন। এ সমিতির টাকা দিয়ে আকবর আলী নামের একজনকে বিদেশে পাঠানো হয়। আকবর আলী বিদেশ গিয়ে আরও অনেককে বিদেশ নিয়ে যেতে অর্থসহায়তা করেন। একে একে গ্রামের লোকজন বিদেশ যেতে শুরু করেন। গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারের লোক বিদেশ খেটে বাড়িতে টাকা পাঠান, আস্তে আস্তে হয়ে ওঠেন সাবলম্বী। সরেজমিনে জানা যায়, বর্তমানে গ্রামের দেড় শতাধিক ছেলে বিদেশে রয়েছেন। এদিকে পুরুষদের পাশাপাশি গ্রামের নারীরা হাঁস-মুরগি লালনপালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। প্রবাসীদের টাকায় গ্রামে স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, ঈদগাহ ও বিদ্যালয়। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া সাবু (আগে ডাকাতি করতেন) জানান, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে অভাব-অনটন ছিল। জমিজিরাত না থাকায় দিনমজুরি করা হতো। আবার অনেক সময় কোনো কাজ পাওয়া যত না। ফলে চুরি-ডাকাতি করতে হতো। এ কারণে অনেকেই কামলা নিত না। এমনকি কেউ আত্মীয়তা করতে চাইত না। পুলিশের পরামর্শ আর নিজেদের অপরাধ বুঝতে পেরে গ্রামের সবাই একটি সমিতি করে বিদেশ যায় একজন। পরে একে একে অনেকেই বিদেশ যায়। এভাবে গ্রামের প্রায় ১৫০ মানুষ এখন বিভিন্ন দেশে রয়েছে। সাবুর স্ত্রী সুরাতন বেগম জানান, স্বামী-সন্তান চুরি-ডাকাতি করার কারণে দিনরাতে পুলিশ তাড়া করত। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো। ক্ষণিকের জন্য স্বামী-সন্তানকে দেখতে পাওয়া যেত। এখন আর সে ভয় নেই। বেশ শান্তিতে রয়েছেন গ্রামের সবাই। আকবর (আগে ডাকাতি করতেন) জানান, টেঙ্গার মাঠের বাসিন্দা পরিচয় দিলে কেউ কামে নিত না। তাই অন্য গ্রামের নাম করে কাজ করতে হতো। শেষমেশ নিজেই গ্রামের উঠতি বয়সীদের রাজমিস্ত্রির কাজ শিখিয়ে বিদেশে পাঠাই। বিদেশ থেকে ফিরে সকলেই এখন ব্যবসা করছে। চুরি-ডকাতি ভালো কাজ না। কেউ ভালোবাসে না, এমন বাণী দিয়ে স্থানীয় আব্দুল হামিদ বলেন, এসব কথা বোঝানোর পরও অভাবের তাড়নায় চুরি করত সবাই। পরে আমি ছেলেকে বিদেশ পাঠাই। সেই আয়ের টাকায় কেনা হয় আবাদি জমি। এখন চাষাবাদ করা হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। প্রবাস থেকে ফিরে এসে গ্রামেই ব্যবসা করছেন মকলেছুর রহমান। বাবা-দাদাদের চুরি ডাকাতির গল্প করছিলেন প্রতিবেদকের সঙ্গে। যে গ্রামের মানুষ সবাই চুরি পেশায় নিয়োজিত ছিল, সেই গ্রামের মানুষ এখন জেলার সবচাইতে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। যারা আমাদের ঘৃণা করত, তারাই আমাদের সঙ্গে আত্মীয়তা করার জন্য মরিয়া। আমাদের বদলে যাওয়া একটি উদাহারণ বলে জানান তিনি। মেহেরপুর জজ আদালতের অপরাধ বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট
আলম বলেন, মানুষ কেউ অপরাধী হয়ে জন্ম নেয় না। সময়, পরিবেশ, পরিস্থিতি তাকে অপরাধী করে তোলে। সুপথে ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক সহযোগিতা। আর এ সহযোগিতা পেলে সবাই আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে। তিনি বলেন, এমনই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মেহেরপুরের টেঙ্গার মাঠের বাসিন্দারা। একসময় যে গ্রামের লোকজন চুরি-ডাকাতি করত, তারা আজ আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়ে স্বাবলম্বী।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
মেহেরপুর জেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
মেহেরপুর সদর উপজেলা
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: