শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন নতুন শিক্ষাপদ্ধতির যুগে বাংলাদেশ শিক্ষার্থীদের শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে সারা বছর ধরে * এসএসসিতে থাকবে না কোনো বিভাগ, পরীক্ষা শুধু দশম শ্রেণির লেখাপড়ায় নতুন শিক্ষা পদ্ধতির যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকে একাধিকবার শিক্ষাক্রম পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থাকে কখনোই মুখস্থ বিদ্যা আর পরীক্ষানির্ভর মূল্যায়ন থেকে বের করা যায়নি। ADVERTISEMENT পাশাপাশি পুঁথিগত মুখস্থ বিদ্যার কারণে শিক্ষাজীবনের বেশিরভাগ জ্ঞান কর্মজীবনে তেমন কাজে আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আর পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির বাস্তবতা সামনে রেখে শিক্ষা ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে ফেলা হয়েছে। প্রবর্তন করা হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম ও শিক্ষাপদ্ধতি। নাম ‘অভিজ্ঞতামূলক শিখন পদ্ধতি’। তবে নতুন এই পদ্ধতি জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু করা হচ্ছে। এ অবস্থায় স্বভাবত প্রশ্ন উঠেছে, এটাই যদি শিক্ষা ব্যবস্থার উৎকৃষ্ট পন্থা হবে, তাহলে এতটা বছর ধরে শিক্ষার্থীদের ওপর কেন ভুল শিক্ষানীতির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলো। কেননা, উন্নত দেশেগুলোতে বহু আগে থেকে কর্মমুখী ও গবেষণাধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। মাধ্যমিকের প্রতিটি শ্রেণিতে তাদের কারিগরি বা ভোকেশনাল শিক্ষা বাধ্যতামূলক। এর ফলে লেখাপড়া শেষ করে কাউকে বেকার থাকতে হয় না। এমন অর্থবহ ও কার্যকরী শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা ২০-৩০ বছর আগে চালু করতে পারলে দেশের চেহারা পালটে যেত। শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির অভাব হতো না। দেশে চাকরির সংস্থান না হলে অনায়াসে বিদেশের শ্রম বাজারে ভালো বেতনে চাকরি হতো। এমনটিই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে নতুন শিক্ষাক্রম প্রবর্তনের কোর কমিটিতে বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসাবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম তারিক আহসান। বুধবার তিনি
বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী দিক হচ্ছে-ক্লাসরুমে শেখা ও শেখানো। মূল্যায়নে পরীক্ষার বদলে সারা বছর ধরে নিরীক্ষা ও তদারকি (মূল্যায়ন) এবং ব্যতিক্রমী পাঠ্যবই। পহেলা জানুয়ারি থেকে তিনটি শ্রেণির শিশুদের হাতে যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়েছে সেটা মুখস্থ বা কনটেন্ট (পাঠ) নির্ভর নয়। প্রত্যেকটি বই একেকটি রিসোর্সবুক। এতে পাঠের তথ্য শিক্ষার্থীরা কিভাবে সংগ্রহ করবে তা উল্লেখ আছে। শিক্ষকরা আগের মতো মুখস্থ গ্রহণ করবেন না। আবার শেখার জন্য শিশুকে শিক্ষকের কাছে বা নোট-গাইডের ওপর নির্ভর করতে হবে না। এর পরিবর্তে তারা নিজের সহপাঠী, পরিবার ও সমাজ থেকে শিখবে। শিক্ষক শুধু এখানে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন এই পদ্ধতিতে কোনো কিছু না বুঝে পাশ করার জন্য শিক্ষার্থী তোতা পাখির মতো মুখস্থ করবে না। যা জানবে, তা মুখস্থ করবে না। সেটা বুঝে প্রয়োগ করবে। এর ফলে তার দক্ষতা বাড়বে। দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসবে। অর্থাৎ, কোনো কিছু বোঝার জন্য তা ইতিবাচকভাবে নেওয়া দরকার। এই আবেগত সংযুক্তি তা ঘটানো হবে। এতে তার সার্বিক বিকাশ ঘটবে। এক কথায়, নতুন শিক্ষাক্রম ও শিক্ষাপদ্ধতি সামাজিক, মানসিক, একাডেমিক বিকাশের পাশাপাশি শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এটি কর্মক্ষম মানুষ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। সৃষ্টিশীল মানুষ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে, যাতে তারা আবিষ্কার বা সৃষ্টি করার মতো মানুষ হিসাবে বিকশিত হবে। এটি শিক্ষার্থীকে তার কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতেও ভূমিকা রাখবে। সবমিলে শিক্ষার্থীর বিভিন্ন মাত্রার জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি ও চেতনা বিকাশে ভূমিকা রাখবে।’ সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন শিক্ষাক্রমে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হচ্ছে পরীক্ষা পদ্ধতিতে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে প্রথাগত পরীক্ষা থাকছে না। সারা বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে শিখন কার্যক্রমের মূল্যায়ন করা হবে। কোনো সামস্টিক বা অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে না। বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষা হয় নবম-দশম শ্রেণিতে দুই বছরে পাঠদানের ওপর। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে শুধু দশম শ্রেণির লেখাপড়ার ওপর এসএসসি পরীক্ষা হবে। নবমে স্কুলেই মূল্যায়ন করা হবে। অপরদিকে এইচএসসি পরীক্ষা বর্তমানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির লেখাপড়ার ওপর করা হয়ে থাকে। কিন্তু নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী একাদশ ও দ্বাদশে দুবার পরীক্ষা হবে। দুটির ফল মিলিয়ে এইচএসসির ফল দেওয়া হবে। বর্তমানে এই পদ্ধতি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি ও এইচএসসি এবং বিদেশি শিক্ষাক্রমের ইংলিশ মিডিয়ামে চালু আছে। এই মূল্যায়নের নাম দেওয়া হয়েছে ‘শিখনকালীন মূল্যায়ন’। এছাড়া পাঠদানের একটি অংশ থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে ‘সামষ্টিক মূল্যায়ন’র প্রস্তাব আছে। তবে কোচিং আর নোট-গাইড ব্যবসা দূর করতে সামষ্টিক পরীক্ষা বাতিলের চিন্তাও আছে। ফলে কাগজ-কলম নির্ভর পরীক্ষা থাকবে না। অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন, যোগাযোগ, হাতে-কলমে কাজ ইত্যাদি বহুমুখী পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না। শিক্ষকরাই তাদের দেওয়া গাইড থেকে শেখাবেন। তবে এবার এই স্তরে আগের মতোই থাকছে। তাদের একটি বই ও ওয়ার্কবুক দেওয়া হয়েছে। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি করে বই থাকবে। নতুন শিক্ষাক্রমে চতুর্থ ও ৫ম শ্রেণিতে ৮টি বিষয় আছে। কিন্তু পাঠ্যবই দেওয়া হবে আগের মতোই ৬টি। এর মধ্যে পাঁচটি বিষয় হচ্ছে-বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান। বাকি তিনটি হলো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্পকলা। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন ১০টি বিষয় থাকবে। এগুলো হলো-বাংলা, ইংরেজি, গণিত, জীবন ও জীবিকা, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। নবম-দশম শ্রেণিতেও ১০টি বিষয় থাকবে। প্রস্তাব ছিল এই স্তরে ৫০ শতাংশ হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন, বাকি ৫০ শতাংশ হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। এইচএসসিতেও দুইভাবে মূল্যায়নের প্রস্তাব ছিল। এতে একাদশ ও দ্বাদশে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ, আর সামষ্টিক মূল্যায়ন ৭০ শতাংশ। কিন্তু এসএসসি ও এইচএসসির বিষয়ে প্রস্তাব এখনও চূড়ান্ত নয় বলে জানান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তারিক আহসান। তিনি আরও জানান, ৫ম ও অষ্টম শ্রেণিতে কোনো শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা থাকবে না। প্রথম পাবলিক পরীক্ষা হবে দশম শ্রেণিতে। তাও শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর। আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষার সমন্বয়ে এইচএসসি পরীক্ষার ফল তৈরি করা হবে। এসএসসি স্তরে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হচ্ছে এখনকার মতো বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের মধ্যে কোনো বিভাগ থাকছে না। শিক্ষার্থীরা নবম-দশম শ্রেণিতে পড়বে সব ধরনের বিষয়। বিভাগ নির্বাচন শুরু হবে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি থেকে। এইচএসসিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজ বিভাগ থাকবে। এই পদ্ধতি চালু হতে ৫ বছর বা ২০২৭ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। পদ্ধতি পুরোপুরি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নেবে বিদ্যমান সৃজনশীল পদ্ধতি। এর ফলে কোচিং আর গাইড ব্যবসাও বিদায় নেবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, নতুন এই শিক্ষাক্রম পর্যায়ক্রমে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী বছর চালু হবে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। ২০২৫ সালে চালু হবে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে চালু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের প্রস্তাবে দেখা যায়, বর্তমানে পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীকে নম্বর বা গ্রেড দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে এটি থাকবে না। এর পরিবর্তে তিন স্তরে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। যারা মূল্যায়নের প্রাথমিক স্তরে থাকবে তাদের প্রাথমিক স্তর, পরের স্তর থাকবে তারা মধ্যম স্তর এবং সবচেয়ে ভালো করা শিক্ষার্থীদের পারদর্শী স্তর হিসাবে চিহ্নিত করে সনদ দেওয়া হবে। তবে এ বিষয়গুলো নিয়েও আরও চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা গেছে।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
সাম্প্রতিক খবর
খেলাধুলা
বিনোদন
ফিচার
mujib
w
যাবতীয় খবর
জিওগ্রাফিক্যাল
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
English News
»
lid news
»
national
» শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন নতুন শিক্ষাপদ্ধতির যুগে বাংলাদেশ
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: