উত্তপ্ত ইরান অধিকার আদায়ে সফল হতে পারবেন কি নারীরা?
ইরানের চলমান বিক্ষোভের তিন মাস পার হলো। গত ১৬ সেপ্টেম্বর দেশটির নৈতিকতা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনীর হেফাজতে ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর শুরু হয় এ বিক্ষোভ। আর এতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় দেখা গেছে নারীদের। ফলে দেশটিতে নারী অধিকার নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশের নারীরা কি বৈষম্যের শিকার?একবিংশ শতাব্দীর নারীরা নিজেদের অধিকার বিষয়ে বেশ সচেতন। আধুনিক সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা পুরুষদের পাশাপাশি সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সমাজ ভেদে নারীদের অধিকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সীমিত। অনেক সমাজে তাদের অধিকারকে অস্বীকার করতেও দেখা যায়। ইরানের বর্তমান বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর নারী অধিকারের বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। নারীরা নিজেদের অধিকার রক্ষায় রাস্তায় নেমে এসেছেন। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। তবে বিক্ষোভকারী নারী হলেও কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না। কারণে-অকারণে আটক করা হচ্ছে। শাস্তির মুখোমুখি করা হচ্ছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া বিক্ষোভ সমর্থন করে যারা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে তাদেরও কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লব হয়। তবে কয়েক দশকেও দেশটি ধর্মীয় নেতাদের তৈরি পোশাকনীতি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। আইন অনুযায়ী দেশটির নারীদের মাথা ও চুল ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। এমন লম্বা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে, যাতে শরীরের গঠন বোঝা না যায়। তবে ইরানে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণির অনেক নারী আঁটসাঁট পোশাক পরেন। তারা ঊরু পর্যন্ত কোট পরেন। পাশাপাশি এমন উজ্জ্বল রঙের স্কার্ফ পরেন, যাতে মাথার চুল বেরিয়ে থাকে। আরও পড়ুন: ইরানে তীব্র বিক্ষোভের নেপথ্যে কি শুধুই তরুণীর মৃত্যু? ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানের কর্তৃপক্ষ নারীদের রক্ষণশীল পোশাক পরার বিষয়টিকে কঠোর করে। ফলে কঠোর হিজাববিধি নিয়ে সে সময় থেকেই দেশটিতে একটি বিরোধ আছে। ইসলামি বিপ্লবের শুরুর বছরগুলোয় ধীরে ধীরে নারীদের ইসলামিক পোশাক পরার জন্য নিয়ম আরোপ করে রাষ্ট্র। ইরানে ইসলামি বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি। তিনি ছিলেন হিজাবের পক্ষে। তাই বিপ্লবীরা তাদের নেতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে দেশটির সড়কে যথাযথ পোশাক না পরা নারীদের ওপর চড়াও হতেন। নারী বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের নিপীড়ন নারী বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রথম থেকেই পুলিশি নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। নিজেদের অধিকারের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে মুসলিম প্রধান একটি দেশে পুলিশি নিপীড়নের শিকার হন তারা। ইরানে বিক্ষোভরত এক তরুণীকে আটকের সময় পুলিশি নিপীড়নের ঘটনায় দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। বিক্ষোভ শুরুর পরের মাস তথা অক্টোবরে এমন দুটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওগুলো যাচাই করে দেখেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। একটি ভিডিওতে এক নারী বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতারের সময় পুলিশকে নিপীড়ন করতে দেখা গেছে। একদল পুলিশ কর্মকর্তা সড়কের মধ্যে এক নারীকে ঘিরে রেখেছে। এরপর দেখা যায়, পুলিশ কর্মকর্তাদের একজন ওই নারীর ঘাড় চেপে ধরে পুলিশ সদস্যদের ভিড়ের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বেশির ভাগই মোটরসাইকেলে ছিলেন। ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারীকে টেনে একটি বাইকের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সে সময় কর্মকর্তাদের একজন পেছন থেকে তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করছেন। দেশটিতে নারীদের হিজাব পরা ও লম্বা চুল রাখার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই আইন কোনোভাবেই বাতিল করছে না প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সরকার। বিশেষজ্ঞদের দাবি, হিজাব নিয়ে চলা আন্দোলন দ্রুত বন্ধ করতে চাইছে তেহরান। নারী অধিকারের বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন আইন পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয় রাইসি প্রশাসন। তারা এক পর্যায়ে নৈতিকতা পুলিশের বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নেয়। হিজাব থেকে শুরু ইরানের বিক্ষোভের সূচনা মূলত হিজাবকে কেন্দ্র করে। দেশটিতে ইসলামি অনুশাসন কঠোরভাবে অণুসরণ করা হয়। যেটি দেখাশোনা করে দেশটির নৈতিকতা পুলিশ। হিজাব পরাকে কেন্দ্র করে নৈতিকতা পুলিশের হাতে মারা যান ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি। এর পরই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গড়ে ওঠা বিক্ষোভ সহিংস পন্থাতেই দমন করছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। যেটি নিয়ে তারা ইতোমধ্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশে-বিদেশে। দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হলেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। দেশটির জাতীয় পুলিশ ও নৈতিকতা পুলিশের ওপর তার কর্তৃত্ব আছে। এই নৈতিকতা পুলিশের কর্মকর্তারা মাহসা আমিনিকে আটক করেছিল। আটকের তিনদিন পর তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি শীর্ষ নির্বাচিত নেতা। সর্বোচ্চ নেতা খামেনির পরই তার অবস্থান। তিনি দৈনন্দিন সরকার পরিচালনা করেন এবং একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নীতি ও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে তার ব্যাপক ভূমিকা থাকে। তবে তার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে সীমিত, বিশেষ করে নিরাপত্তা ইস্যুতে। বিক্ষোভ দমনে পুলিশের ভূমিকায় সর্বোচ্চ অবদান রাখছেন খামেনি। তিনি বিক্ষোভ দমনে আটকের আদেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা না থাকায় বিক্ষোভ দমনে সম্পূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তিনি। ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ও উচ্চপদস্থ নেতারা বহুবার বিরোধীদের বিশেষ করে নারীর বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে যৌনতাসূচক অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করেছেন। এমনকি খোমেনিবিরোধী অন্য ইসলামি দলগুলোকে পর্যুদস্ত করতেও এগুলো ব্যবহার করা হয়। পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে হাজারে হাজারে নারী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগে শত শত নারীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারপরও আন্দোলন থামছে না। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না আন্দোলন। তাই ভিন্ন পথে যায় রাইসি প্রশাসন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্দোলন দমাতে উদ্যোগ নেয় ইব্রাহিম রাইসির সরকার। হিজাববিরোধী আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের সবাইকেই চিহ্নিত করে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে কারণে ‘ফেসিয়াল রিকগনিশন’ প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরানের পুলিশ। এদিকে ইরানে পুলিশি হেফাজতে তরুণী মৃত্যুর প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভ পশ্চিমাদের মদতেই হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনি। আর এ ঘটনায় সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। এরই মধ্যে ইরানকে শাস্তি দিলে ইউরোপের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আয়াতুল্লাহ আল খোমেনি সেসময় বলেন, ‘এই বিক্ষোভের পরিকল্পনা দেশের ভেতর থেকে হয়নি। শত্রুরা এটা করেছে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। সহিংসতা অব্যাহত রাখতে উসকানি দেয়া হচ্ছে।’ বিক্ষোভকারীদের ফাঁসির দাবি সরকারপন্থিদের পুলিশ হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর যখন বিক্ষোভে উত্তাল পুরো ইরান, ঠিক তখনই পাল্টা কর্মসূচি শুরু করে দেশটির সরকারপন্থিরা। গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাস্তায় জড়ো হয়ে হিজাব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের ফাঁসি দেয়ার দাবি তোলেন তারা। সরকারবিরোধীরা মাহসা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে বলেও দাবি তাদের। এদিকে মাহসার মৃত্যুর বিচার দাবিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির অন্তত ৫০টিরও বেশি শহরে। সে সময় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত বিভিন্ন ফুটেজে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছেন, কোরআন অবমাননাকারীদের অবশ্যই ফাঁসি দিতে হবে। তবে হিজাব আইনের বিরোধিতা ও মাহসা আমিনির হত্যকাণ্ডের বিচার দাবিতে চলমান বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক করেছে ইরানের সেনাবাহিনী। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন না চালাতে আগে থেকেই সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। শিশুদের পরিণতি নারী অধিকার ও হিজাব বিরোধী আন্দোলনে বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও অংশ নেয়। তারা নারীদের অধিকারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। এরপর তাদের ওপর নেমে আসে পুলিশি নিপিড়ন। গত অক্টোবরে ইরানের এব স্কুলে অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় শিশুদের জাতীয় সংগীত গাইতে বলা হলে তারা অস্বীকার করে। তখন পুলিশ তাদের বেধড়ক পেটায়। এ ঘটনায় অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। অনেককে গ্রেফতারও করা হয়। এমনকি তাদের অনেককেই মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এ ঘটনার দায় অস্বীকার করে ইরান কর্তৃপক্ষ। নারী অধিকার রক্ষায় শিশুদের প্রতি এমন অবিচার সে সময় বহির্বিশ্বেও সমালোচিত হয়। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অবস্থান ইরানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ অব্যাহত আছে। চলমান বিক্ষোভে একের পর এক আন্দোলনকারী নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘও। ইরান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে বলেও দাবি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা। গত ২৮ সেপ্টেম্বন বিক্ষোভ সমর্থনে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামলে বিক্ষোভ দমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টিয়ারগ্যাস ও গুলি ছুড়লে আন্দোলনকারীরাও পাল্টা ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে হতাহতের খবর প্রকাশিত হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে জাতিসংঘ। তারা এ ঘটনা তদন্তের ইচ্ছা প্রকাশ করে। এদিকে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। সরকার বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছে কিনা তা তদন্তের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাকে ‘রাজনৈতিক কমিটি’ অভিহিত করে সহযোগিতা করা হবে না বলে জানায় দেশটির কর্তৃপক্ষ। গত ২৮ নভেম্বর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কেনানি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ গঠিত রাজনৈতিক কমিটিকে কোনো সহযোগিতা করবে না ইরান। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর এই বিক্ষোভে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে; যার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।’ তদন্ত কমিটি গঠনের পর পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলেছিলেন, স্বাধীন এই তদন্তের মাধ্যমে মানবাধিকার লংঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হবে এবং দেশটির নারীদের সমর্থন করে শক্ত বার্তা দেয়া হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) বলেছে, ইরানের বিক্ষোভে ৩০০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৪০টি শিশু রয়েছে। এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গত মাসে ইরানে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও পুলিশসহ ৪৬ জন বিক্ষোভে নিহত হয়েছেন। তবে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ইরান সরকার প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে। দেশটির একটি নিরাপত্তার সংস্থার বরাতে গত ৩ ডিসেম্বর আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা জানায়, সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। দাঙ্গার ফলে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের বেশিরভাগই ‘দাঙ্গাকারী’ এবং ‘সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সদস্য’। বউত্তপ্ত ইরান অধিকার আদায়ে সফল হতে পারবেন কি নারীরা? ইরানের চলমান বিক্ষোভের তিন মাস পার হলো। গত ১৬ সেপ্টেম্বর দেশটির নৈতিকতা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনীর হেফাজতে ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর শুরু হয় এ বিক্ষোভ। আর এতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় দেখা গেছে নারীদের। ফলে দেশটিতে নারী অধিকার নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশের নারীরা কি বৈষম্যের শিকার?িক্ষোভ দমনে যত কৌশল বিক্ষোভ দমনে প্রথম থেকেই নানা কৌশল নেয় রাইসি প্রশাসন। বিক্ষোভকারীদের আটকসহ নানা ভাবে তাদের দমনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্দোলন দমাতে উদ্যোগ নেয় ইব্রাহিম রাইসির সরকার। হিজাববিরোধী আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের সবাইকেই চিহ্নিত করে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে কারণে ‘ফেসিয়াল রিকগনিশন’ প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরানের পুলিশ। যারা আন্দোলনকারীদের সমর্থন দিচ্ছেন তাদের কণ্ঠরোধও করা হয়। দেশটির পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য হামিদ রাসাই এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আপনি কি জানেন রাস্তায় মাথার স্কার্ফ খুলে নাচিয়ে বেড়ানো গুটিকয়েক নারী কী চান?... তারা একমাত্র যে ‘স্বাধীনতাটি’ চান তা হলো প্রতি রাতে কারও সঙ্গে ঘুমানো এবং পশুর মতো আচরণ করা।’ মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে ইরানজুড়ে পোশাকের স্বাধীনতা দাবিতে রাস্তায় নামা নারীদের সম্পর্কে এমনটাই বলেন তিনি। নারীদের নিয়ে শাসকগোষ্ঠী সংশ্লিষ্টদের এমন অবমাননাকর মন্তব্য ইরানে অতিপরিচিত। এর আগেও নারী স্বাধীনতা প্রশ্নে বিভিন্ন আন্দোলনের সময় দেশটির উচ্চপদস্থরা এমন অসংখ্য মন্তব্য করেছেন। নারীদের অধিকারের বিষয়টি আড়াল করতে যৌন সুড়সুড়িমূলক ব্যাঙ্গ দেশটিতে নিয়মিত ঘটনা। আন্দোলনকারীদের ‘নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে’ বা তারা ‘যৌনকর্মী’ এমন কথাও বলা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে বিপ্লবী রেভিলিউশনারি গার্ডের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক জেনারেল মোহাম্মদ রেজা নাগদি হিজাবের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ‘যৌনকর্মী’ বলে আখ্যায়িত করেন। ইরানে চলমান প্রতিবাদ বিক্ষোভের পক্ষে কথা বলায় গত ১৭ ডিসেম্বর বিখ্যাত অভিনেত্রী ও অনুবাদক তারানেহ আলিদুস্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিজের দাবির পক্ষে তথ্যপ্রমাণ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিচারিক কর্তৃপক্ষের আদেশে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আলিদোস্তি (৩৮) ইরানের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী ও অনুবাদক। তিনি ২০১৬ সালের অস্কার জয়ী সিনেমা ‘দ্য সেলসম্যান’-এ অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি পান। তিনি গত ৮ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোহসিন সেকারির মৃত্যুদণ্ড নিয়ে কথা বলেন। ওই দিনই বিক্ষোভে জড়িত থাকার দায়ে মোহসিনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ ছাড়া বিক্ষোভে সমর্থনের দায়ে আরও দুই অভিনেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইরানে চলমান হিজাববিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণের অভিযোগে অন্তত ৪০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। গত ১৩ ডিসেম্বর রাজধানী তেহরানের একটি আদালত এ রায় দেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভে অংশগ্রহণের দায়ে ১৬০ জনকে পাঁচ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সাজা দেয়া হয়েছে। আর বাকিদের দুই থেকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে। এ ছাড়াও অন্তত ৭০ জনকে জরিমানা করা হয়। বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত পাঁচজন বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ইরান সরকার। এরমধ্যে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনাও রয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ মাসের শুরুর দিকে সতর্ক করে দিয়ে জানায়, বিক্ষোভে অংশগ্রহণের কারণে ইরানে অন্তত ২৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে পারে। কর্তৃপক্ষ গণঅভ্যুত্থানের অবসান ঘটাতে রাজনৈতিক দমনের হাতিয়ার হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ব্যবহার করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা। জাতিসংঘের নারী অধিকার কমিটি থেকে বাদ ইরান চলমান বিক্ষোভে নারীদের ওপর দমন-পীড়ন ও তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার দায়ে জাতিসংঘের নারী অধিকার কমিটি থেকে বাদ পড়েছে ইরান। গত ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড স্যোশাল কাউন্সিলের এক ভোটাভুটিতে ইরানকে ওই কমিটি থেকে বাদ দেয়ার পক্ষে ভোট দেয় বেশিরভাগ সদস্যরাষ্ট্র। এদিকে নারী অধিকার বিষয়ক কমিটি থেকে বাদ দেয়ায় জাতিসংঘের তীব্র সামলোচনা করে একে সম্পূর্ণ বেআইনি বলে উল্লেখ করেছে তেহরান। জাতিসংঘের ৫৪ সদস্যের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিলে ইরানকে কমিটি থেকে বাদ দেয়ার পক্ষে ভোট দেয় ২৯টি দেশ। বিপক্ষে ভোট পড়ে ৮টি। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘে ইরানের দূত আমির সাঈদ ইরাভানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উস্কানি ও তাদের ষড়যন্ত্রেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে জাতিসংঘ। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘গুণ্ডামির’ অভিযোগও আনেন ইরানি দূত। অবশেষে কি হিজাব আইনে পরিবর্তন আসছে ইরানের সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হিজাব সংক্রান্ত এক দশকের পুরোনো আইন সংস্কারে তারা পর্যালোচনা করছে। দেশটিতে চলমান বিক্ষোভ দিন দিন সহিংস রূপ নেয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানানো হয়। গত ৩ ডিসেম্বর ইরানের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা ইরনাকে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফার মোনতাজেরি জানান, হিজাব সংক্রান্ত আইনটি পরিবর্তনের দরকার কি না, পার্লামেন্ট এবং বিচার বিভাগ এই ইস্যুতে কাজ করছে। এদিকে বিক্ষোভের জেরে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অবশেষে নৈতিকতা পুলিশ বিলুপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। ইরানের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফার মোনতাজেরির উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা আইএসএন জানিয়েছে, বিচার বিভাগের সঙ্গে নৈতিকতা পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এদিকে গত ৩ ডিসেম্বর ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, ইরানের প্রজাতন্ত্র ইসলামের মৌলিক গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। তবে সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নমনীয় হওয়া যেতে পেরে। ১৯৪৩ সাল থেকে ইসলামিক আন্দোলনে শাহ রাজবংশের পতনের পর ইরানে নারীদের মাথায় হিজাব পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়। এ বছরের জুলাই মাসে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি সব প্রদেশে হিজাব আইন কঠোরভাবে পালনের আহ্বান জানান। পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ আর নারীবিদ্বেষী আচরণে জর্জরিত ইরানের নারীদের নিত্যদিনের জীবন। বৈষম্যমূলক আইনের কারণে দিনদিন পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বেড়ে চলছে দেশটিতে। জাতিসংঘে ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ দূত ও স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ জাভেদ রেহমান এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেন। এতে বলা হয়, জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই চরম বৈষম্যের শিকার ইরানের নারীরা। উদ্বেগ জানানো হয় নারীদের ওপর পারিবারিক সহিংসতা নিয়েও। প্রতিবেদনে নারীদের ওপর অ্যাসিড সন্ত্রাস বন্ধে ইরান সরকারের গৃহীত নতুন আইনের প্রশংসা করেন রেহমান। যদিও নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে আরও অনেকটা পথ যেতে হবে দেশটিকে, এমন মতও দেন তিনি। এ ছাড়া বিয়ের ক্ষেত্রেও নারীদের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয় দেশটিতে। তাদের বিয়ের বয়স অনেক কম। দেশটিতে ১০ বছর থেকে ১৪ বছর বয়সী ১৬ হাজার কন্যা শিশুর বিয়ে হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, ইরানে বাবার অনুমতি সাপেক্ষে কন্যাসন্তানের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৩ বছর। বিচারকের বিশেষ অনুমতি নিয়ে আরও কমবয়সেও মেয়েদের বিয়ে হওয়ার নিয়ম আছে দেশটিতে। দেশ ও নারীদের উন্নয়নের পথে বাল্যবিবাহ বড় বাধা। শিক্ষা, কর্মসংস্থান আর সহিংসতামুক্ত জীবন সবকিছুতেই নারীদের পথে বড় বাধা হয়ে থাকছে বাল্যবিবাহ। ইরানে নারীর অধিকার নিয়ে সোচ্চার কণ্ঠ দমনে শুরু থেকেই ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির শাসকগোষ্ঠী যৌনতাকেন্দ্রিক ‘কলঙ্ককে’ অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, এমনকি উদার ইসলামি দলগুলোও এই অস্ত্র থেকে রেহাই পায়নি। পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রসারে আজকালকার নারীরা শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হচ্ছে। এ সময়ে মানসিকভাবে মেয়েরা যতটা পরিণত, অগ্রগামী, পুরুষেরা ঠিক ততোটা এখনো হয়ে ওঠেনি। তাই সংঘাত হয়ে উঠেছে অনিবার্য। হাজার ট্যাবু ভেঙে অনেক মেয়েই নিজেদের প্রকাশ করছেন। বায়োগ্রাফি লিখছেন, সেগুলো নিয়ে সিনেমা হচ্ছে, সারা পৃথিবী দেখছে, শিউরে উঠছে, আইন তৈরি হচ্ছে কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
সাম্প্রতিক খবর
খেলাধুলা
বিনোদন
ফিচার
mujib
w
যাবতীয় খবর
জিওগ্রাফিক্যাল
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
English News
»
Featured
»
lid news
»
others
»
world
» উত্তপ্ত ইরান অধিকার আদায়ে সফল হতে পারবেন কি নারীরা?
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: