যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেন দুর্ঘটনা বিষাক্ত রাসায়নিকে ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও রাজ্যের ইস্ট প্যালেস্টানে বিষাক্ত রাসায়নিকবাহী ট্রেন দুর্ঘটনায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষের স্বাস্থ্য। সেই সঙ্গে প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দুঘর্টনার পর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত রাসায়নিক। এতে ওই এলাকার বিভিন্ন প্রাণী অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। নালা ও ছড়ায় মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে।
এখন থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ওহাইও’র ইস্ট প্যালেস্টাইন নামের শহরের কাছে টেন দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনের বেশ কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এরপরই বগিগুলোতে আগুন লাগে। এতে শহরটিতে বিষাক্ত ধোঁয়ার স্তম্ভ দেখা যায়। এ ঘটনায় কয়েক গ্রাম দূরে বসবাসরত বাসিন্দারাও ভয় পেয়ে যান। অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালায়।
ট্রেনের বগিগুলোর কয়েকটাতে ভিনাইল ক্লোরাইড নামের বিষাক্ত ও বিপজ্জনক রাসায়নিক ছিল। ঘটনার কয়েক দিন পর স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, অবিস্ফোরিত বগিগুলো থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক নিয়ন্ত্রিতভাবে বের করে নেয়া হয়েছে। যারা এলাকা ছেড়েছিল তাদের আবার ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়।
স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে নানা প্রশ্নের জবাব চাইছেন সেখানকার বাসিন্দারা। কারণ কয়েক দিন ধরে খাল-বিল ও ছড়াগুলোতে হাজার হাজার মাছ মারা গেছে।
আরও পড়ুন: রহস্যজনক বস্তু সম্পর্কে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য
বাসিন্দাদের বরাতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, খামারের মুরগিও হঠাৎ করে মারা গেছে, শিয়ালগুলো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ও পোষা প্রাণীগুলোও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এছাড়া মাথাব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া, গলা ব্যথার অভিযোগও করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
শহরটির গভর্নর মাইক ডিওয়াইন অবশ্য বলেছেন, শহরে বাতাসের গুণমান নিরাপদ আছে। তবে বিষাক্ত রাসায়নিক যে স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই স্থানের কাছাকাছি বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে হবে ও তাদের অবশ্যই বোতলজাত পানি পান করতে হবে। কর্মকর্তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেছেন, তারা দুর্ঘটনাস্থল থেকে দূষিত মাটি অপসারণ করছেন এবং বাতাস ও পৌরসভার পানির গুণমান এখন স্বাভাবিক।
আরও পড়ুন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নতুন চমক নিকি হ্যালি
গত ৩ ফেব্রুয়ারি লাইনচ্যুত হওয়া বিষাক্ত রাসায়নিকবাহী নরফোক সাউদার্ন ট্রেন নামের ট্রেনটি পেনসিলভানিয়ায় যাচ্ছিল। ট্রেনটিতে ১৫০টি বগি ছিল, যার মধ্যে ৫০টি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ১০টিতে কয়েক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক ছিল। কী কারণে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়েছে সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করেনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড। কিন্তু তারা বলছে, যান্ত্রিক সমস্যার কারণে হয়ত এমনটা ঘটেছে।
ট্রেনটি যেসব পণ্য বহন করছিল তার একটি হলো ভিনাইল ক্লোরাইড। এটি একটি রংহীন বিপজ্জনক গ্যাস, যা পিভিসি প্লাস্টিক ও ভিনাইলের পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ভিনাইল ক্লোরাইড একটি কার্সিনোজেন হিসেবেও পরিচিত। এটি দাহ্য ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী গ্যাস। এই রাসায়নিকের তীব্র উপস্থিতির কারণে মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, তন্দ্রাভাব হতে পারে। এছাড়া লিভারের ক্ষতি ও লিভার ক্যান্সারের কারণও হতে পারে এই গ্যাস।
কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, লাইনচ্যুত বগিগুলোর পাঁচটি থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া বের হচ্ছিল। দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের এক মাইলের মধ্যে বসবাসরত সবাইকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন তারা। আশপাশের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার পর ৬ ফেব্রুয়ারি বগিগুলো থেকে নিয়ন্ত্রিতভাবে ভিনাইল ক্লোরাইড বের করে নিকটবর্তী একটি স্থানে জমা করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন।
আরও পড়ুন: আলাস্কার কাছে রুশ যুদ্ধবিমানকে ধাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের
তবে পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এতে করে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। বাষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও ইস্ট প্যালেস্টাইনের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই এলাকায় এখন আর বিপজ্জনক কিছু নেই। কিন্তু স্থানীয়রা তাদের এ কথায় আশ্বস্ত হতে পারছেন না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী বিশেষ করে টুইটার ও টিকটক ব্যবহারকারীরা ভিনাইল ক্লোরাইড পোড়ানোর ছবি, ক্ষতির শিকার প্রাণীদের ছবি পোস্ট করে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আরও স্পষ্ট জবাব চাইছেন।
মরা মাছের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, এটা সত্যি। ওহাইও ডিপার্টমেন্ট অব ন্যাচারাল রিসোর্সেস জানিয়েছে, ইস্ট প্যালেস্টাইনের সাড়ে সাত মাইল এলাকাজুড়ে ওই দুর্ঘটনার প্রভাবে ১২টি প্রজাতির প্রায় সাড়ে তিন হাজার মাছ মারা গেছে।
আরও পড়ুন: টেক্সাসে শপিংমলে বন্দুক হামলা, নিহত ১
যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রেন লাইনচ্যুতি বা রাসায়নিক পোড়ানোর কারণেই যে এত মাছের মৃত্যু বা পোষা প্রাণী বা এলাকার পশুপাখির মৃত্যু হয়েছে এ রকম কোনো প্রতিবেদন তাদের কাছে আসেনি। অন্যদিকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, রাসায়নিক পোড়ানোর এক সপ্তাহ পর স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, মাথা ঘোরানো, মাথা ব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা হচ্ছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইস্ট প্যালেস্টাইনের দুর্ঘটনার পর বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে আবারও তাদের সেখানে দ্রুত ফেরত পাঠানো সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের আপত্তি ছিল। পেনএনভায়রনমেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ডেভিড মাসুর বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে সরকার ও স্থানীয় কর্মকর্তারা খুব তাড়াতাড়ি বাসিন্দাদের ফেরত যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। সে কারণে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস আর সংশয় তৈরি হয়েছে এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে, যেটা একটা বড় সমস্যা।’
Tag: English News lid news world
No comments: