Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

সাম্প্রতিক খবর


খেলাধুলা

বিনোদন

ফিচার

mujib

w

যাবতীয় খবর

জিওগ্রাফিক্যাল

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » একবিংশ শতাব্দীকে যেভাবে নিজের করে নিচ্ছে এশিয়া




আমরা অবশ্যই বাস করছি অনিশ্চয়তার যুগে। কাজেই একুশ শতকের এশিয়ার অগ্রযাত্রার বর্ণনায় ভুল হতেই পারে। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য বিরোধ, এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, মহামারির আঘাত এবং ইউক্রেন যুদ্ধ–সবই এই উপমহাদেশের ভবিষ্যৎ এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও এগোচ্ছে এশিয়া। বিশ্ব মানচিত্র। ছবি: সংগৃহীত ব অস্বীকার করার উপায় নেই যে জনসংখ্যা ও সামাজিক শক্তি এশিয়াকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নেতৃত্বের জায়গায় যেতে বেশ সহযোগিতা করছে। বর্তমান এশিয়ার ভোক্তাসমাজ এই মহাদেশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মডেল হিসেবে দাঁড়াতে শক্তি জোগাচ্ছে। এই স্বপ্নের রূপান্তর চলছে এবং চলবে কয়েক দশক ধরে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ব্যবস্থায়ও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনগুলোর চালিকাশক্তি ও মূল কারণসমূহ হচ্ছে রাজনৈতিক গতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এশিয়ার এই অগ্রযাত্রার পেছনে বিশাল তরুণ জনসংখ্যাও রয়েছে, যা এ অঞ্চলের প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করছে। দক্ষিণ এশিয়া মূলত আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা নিয়ে গঠিত। ২০২২ সালে এ অঞ্চলের গড় প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি মূলত চীন ও ভারতের দ্রুত সম্প্রসারণ এবং এর বিশ্ববাজারে গুরুত্বের জন্য হচ্ছে। ভারত তর্কাতীতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কাতারের দেশ। আর ভূমি আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা প্রাইভেট ইকুইটি এবং পুঁজিবাজার উভয়ের মাধ্যমেই মনোযোগ দিচ্ছে এশিয়ায়। সিবি ইনসাইটসের তথ্যানুসারে, চীনে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক ‘ইউনিকর্ন’ রয়েছে। ভারতও দ্রুত ইউনিকর্ন র‍্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এদিকে মহামারি চলাকালীন চীনা পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা রেকর্ড পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। বৈশ্বিক জিডিপিতে এশিয়ার শেয়ার ৩৮ থেকে বেড়ে ৪৫ শতাংশ হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগের দুই দশকে গড়ে ৫১/২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এশিয়ার অর্থনীতি। একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য খাদ্যের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। তাই কৃষির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ অপরিহার্য। সুতরাং পৃথিবীতে কৃষি একটা বড় অর্থনীতি। এশিয়া সেদিকেই আছে। চীন বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্য উৎপাদক এবং আমদানিকারকও বটে। এদিকে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ। ভারতের মোট রফতানির প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষিপণ্য। অন্যদিকে বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ প্রাথমিকভাবে কৃষিতে নিযুক্ত এবং দেশের ৭০ শতাংশেরও বেশি জমি চাষের কাজে ব্যবহার হয়। বাংলাদেশের প্রধান ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট, গম, চা, ডাল, শাকসবজি ও ফলমূল। আরও পড়ুন: বিশ্ব রাজনীতি, পর্ব-২ / মধ্যস্থতাকারী থেকে মোড়ল হয়ে উঠছে চীন তা ছাড়া এশিয়ার ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির কথা ভুলে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এশিয়াজুড়ে কয়েক কোটি মানুষ নতুনভাবে মধ্যম আয়ের স্থিতিতে যোগ দিয়েছে, যাদের ক্রয়ক্ষমতা ব্যাপক। তারা আবার খুব বেশি পছন্দ করছে চীনা পণ্য। এর মধ্য দিয়ে বিস্তার ঘটছে চীনা বাজারের। এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব পুরো খেলা পরিবর্তনের একটি প্রধান নিয়ামক। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এ অঞ্চলে চীনের অর্থনৈতিক পদচিহ্নকে প্রসারিত করেছে, অন্যদিকে প্রসারিত হয়েছে তাদের সামরিক ও কৌশলগত স্বার্থ। তা ছাড়া ভারত তার আঞ্চলিক প্রভাব প্রসারিত করতে এবং চীনের উত্থানকে মোকাবিলা করার জন্য আরও দৃঢ় বিদেশনীতি অনুসরণ করতে শুরু করেছে। জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিকেও ভারত কৌশলগতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি প্রাকৃতিক সংযোগ হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে একটি এবং ভারতের ভূরাজনৈতিক মিত্র। আসলে ইন্দো-প্যাসিফিকের একটি মধ্যম শক্তির দেশ বাংলাদেশ। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। বাংলাদেশ এ অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে একটি প্রধান অবদানকারী দেশও বটে। তা ছাড়া বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ গত এক দশকে এশিয়ার অন্যতম এবং অপ্রত্যাশিত সাফল্যের গল্পে পরিণত হয়েছে। এই গল্পের মূলে রয়েছে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ৭ শতাংশ গড়। হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের মতো তাদের অর্থনীতির শিল্পায়নের সময় বাংলাদেশের যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তার বেশির ভাগই এসেছে পোশাক রফতানি থেকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ইউরোপে চীনের পণ্য বাজারের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে নিয়েছে। চ্যালেঞ্জ বিশ্বমঞ্চে এশিয়ার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির সঙ্গে বর্ধিত চ্যালেঞ্জও আছে। যেমন: আফগানিস্তান। তালেবান ২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে নেয়। এ অঞ্চলের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্যকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা এখনও দেখার বিষয়। তবে এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য ভীষণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা বলা যায়। আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংঘাতের ইতিহাসও রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে কাশ্মীরের বিতর্কিত ভূখণ্ড নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের চলমান দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বগুলো এ অঞ্চলকে ভবিষ্যতে অস্থিতিশীল করতে পারে এবং বাধাগ্রস্ত করতে পারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে। সন্ত্রাস দক্ষিণ এশিয়া সন্ত্রাসবাদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি চরমপন্থি গোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করতে পারে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে এবং মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি করতে পারে ব্যাপকভাবে। শক্তিধরদের প্রতিযোগিতা দক্ষিণ এশিয়া এখন একটি কৌশলগত মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। কারণ, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এই ক্ষমতার প্রতিযোগিতা আঞ্চলিক সংঘাতকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং উসকে দিতে পারে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা। জলবায়ু পরিবর্তন দক্ষিণ এশিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ক্ষেত্রে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ঘনঘন বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন: বন্যা ও খরা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলে। এতে জীবনহানি, মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং অবকাঠামোর ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। পানির সংকট দক্ষিণ এশিয়ার অনেক আন্তঃসীমান্ত নদীর আবাসস্থল। ফলে অনেক দেশকে পানি ভাগাভাগি করে নিতে হয় এসব নদী থেকে। পানি সম্পদের জন্য ক্রমেই প্রতিযোগিতা ও উত্তেজনা বাড়ছে, যা এ অঞ্চলের দেশগুলোকে সংঘর্ষের দিকেও নিয়ে যেতে পারে যেকোনো সময়। আরও পড়ুন: বিশ্ব রাজনীতি, পর্ব-৩ /মুসলিম বিশ্বকে কোন দিকে নিতে চান যুবরাজ সালমান? ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং চ্যালেঞ্জ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক উন্নয়নের ওপর বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কাজেই এ অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। এডিবির এক রিপোর্ট অনুসারে, এশিয়ায় অতিরিক্ত প্রায় তিন বিলিয়ন মানুষ বর্তমান ইউরোপের মতো জীবনযাত্রার মান উপভোগ করতে পারে এবং এই শতাব্দীর মাঝামাঝি এ অঞ্চলটি বিশ্বব্যাপী অর্ধেক উৎপাদনের আধার হতে পারে। এ অঞ্চলের জন্য এই সম্ভাব্য প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যৎকে কখনো কখনো ‘এশিয়ান সেঞ্চুরি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যদিও তা কোনোভাবেই পূর্বনির্ধারিত ব্যাপার নয়। আস্তে আস্তে একবিংশ শতাব্দীকে নিজের করে নিচ্ছে এশিয়া। এশিয়াবাসী এখন এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, তারা একটা বড় ধরনের লাফ দিতে প্রস্তুত বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুনভাবে সাজানোর জন্য। এটি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তথ্যসূত্র: এএনআই, এডিবি






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply