Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » » ফিরে দেখা ২০২৩ যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লিপনা: দিন বদলায়, বদলায় না স্বভাব




যুক্তরাষ্ট্র। ধন-সম্পদে বিশ্বের অন্যমত শীর্ষ দেশ। সামরিক শক্তিতেও তারা বিশ্বে অন্যতম প্রভাবশালী। দেশটি চাইলেই এ প্রভাব ব্যবহার করে পৃথিবীকে ভরিয়ে দিতে পারতো শান্তি ও সমৃদ্ধিতে। কিন্তু না, দেশে দেশে আধিপত্য বিস্তারেই নিজের সব সম্পদ ও শক্তি ক্ষয় করছে তারা। সব বিষয়ে দেশটির অযাচিত হস্তক্ষেপ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাদের কথা শুনলেই ‘বন্ধু’, না শুনলে চরম ‘শত্রু’। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রধান দিক হচ্ছে বিভিন্ন কল্পিত শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। ছবি: সংগৃহীত যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বজায় রাখতে চাওয়া মানে দেশে দেশে তাদের প্রভাব বিস্তার করা; নিজের কর্তৃত্ব যেকোনো উপায়ে বজায় রাখা। সহজ ভাষায় মোড়লিপনা বা খবরদারি করা। যা কিনা দেশটি তার পররাষ্ট্রনীতির মধ্যদিয়ে করে থাকে। এটা সবারই জানা যে, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রধান দিক হচ্ছে বিভিন্ন কল্পিত শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। যুক্তরাষ্ট্রের আশপাশে কোনো শক্তিশালী শত্রু নেই, যার সঙ্গে যুদ্ধ করে সে নিজের শক্তি দেখাবে। তাই নিজের ক্ষমতা, শক্তি ও সামর্থ্য প্রমাণে তাকে বারবার আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিতে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যদিয়ে সামরিক পরাশক্তি হিসেবে উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের। এরপর গত সাত দশকে বৈশ্বিক পরিসরে নেতৃত্ব দিয়েছে দেশটি। কিন্তু চীন ও রাশিয়ার মতো নতুন নতুন শক্তির উত্থানে সেই পরাশক্তির সূর্য এখন অস্তাচলে, যা দেশটির রাজনীতিকরাও স্বীকার করছেন। আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সহায়তার শেষ চালান পেল ইউক্রেন ডুবন্ত সেই ভাবমূর্তিকে আবারও চাঙা করতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধের ময়দান থেকে জ্ঞানের জগৎ—সর্বত্রই আধিপত্য প্রমাণের চেষ্টা করছে দেশটি। তবে অবস্থার খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্বের যে ক্ষতি করে গেছেন, জো বাইডেন তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেও সাফল্যের মুখ দেখছেন না। দিন যতই গড়াচ্ছে, বিশ্ব রাজনীতির সমীকরণ যেন ততই জটিল হয়ে উঠছে। ইউক্রেন যুদ্ধকে পুঁজি করে হারানো ভাবমূর্তি কিছুটা ফেরানো যাবে বলে ভেবেছিলেন বাইডেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে সেটাও সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও চলতি বছর পুরোটা সময়জুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রকে মোড়লিপনা করতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে সরাসরি সামরিক শক্তি প্রয়োগ, প্রক্সি যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার মতো বহু বছরের পুরনো সব অস্ত্রই ব্যবহার করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সমস্যা হলো, তাদের দাবি তারাই ‘বিশ্বের এক নম্বর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ ও ‘মানবাধিকারে চ্যাম্পিয়ন’। তারা ‘উন্নত’ গণতন্ত্রের সেই বেদিতে দাঁড়িয়ে বিশ্বের অপরাপর রাষ্ট্রগুলোকে অবলোকন করে। কিন্তু ধন-সম্পদ ও সামরিক প্রভাব-প্রতিপত্তিতে এগিয়ে থাকায় তাদের এ অদ্ভুত দাবিকে খুব কম দেশই প্রশ্ন করতে পারে। ফলে দেখা যায়, কখনও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে আবার কখনও মানবাধিকার রক্ষা বা সমুন্নত করার নামে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলায় যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, নানা অজুহাতে পরদেশে সামরিক আগ্রাসন চালাতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না দেশটির প্রশাসন। আধিপত্য বিস্তারের পড়ন্ত বেলায় চলতি বছরও সেই নীতিতেই চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোর নিরাপত্তার কথা বলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া সীমান্তে সেনা সংখ্যা বাড়াতে থাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো। যার জেরে সৃষ্ট উত্তেজনার একপর্যায়ে গত বছরের শুরুর দিকে (২৪ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। কিয়েভের প্রতিরোধের মধ্যদিয়ে যা রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নেয় এবং এখনও চলমান। আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় এবার ১৪ ব্যক্তি এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নেয়নি। শুরু থেকেই ইউক্রেনকে সর্বাত্মক সমর্থন এবং সামরিক ও আর্থিক সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। যদিও ইউক্রেনকে আর সামরিক সহায়তা না দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে ওয়াশিংটন। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এখন কার্যত পরাজয়ের দিন গুনছে। এরই মধ্যে গত ৭ অক্টোবরে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর পর প্রত্যাশিতভাবেই দখলদার ইসরাইলের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাজনৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি দুহাতে সামরিক ও আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে জো বাইডেন প্রশাসন। উদীয়মান চীনকে এ মুহূর্তে নিজেদের ‘সবচেয়ে বড় হুমকি’ বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে দেশটিকে চাপে রাখতে তারই প্রতিবেশী দেশ তাইওয়ানকে নানাভাবে উসকানি দিচ্ছে তারা, যা চলতি বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, তাইওয়ানকে ‘গোপনে’ অস্ত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক সহযোগিতা ও অস্ত্র বিক্রির পাশাপাশি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার নামে চলতি বছর বহু দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার পুরনো ‘অস্ত্র’ও ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর পরই রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জো বাইডেন প্রশাসন, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করায় কয়েক দফায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় ইরানের ওপরও। নির্বাচনে কারচুপি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে নাইজেরিয়া, নিকারাগুয়া, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, এল সালভাদর ও কম্বোডিয়ার মতো কয়েকটি দেশের বেশ কয়েকজন রাজনীতিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞায় পড়ায় এরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি ভিসা নীতি ঘোষণা করে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। বিশ্বের বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, এটা তারা করেছে নিজেদের স্বার্থে এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে। বিশ্লেষকদের মতে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার রক্ষা আর সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক ভোটের অজুহাতে এটা বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এক ধরনের ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা। এর পেছনের কারণ উল্লেখ করে তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন ভালো নয়। তাই তাদের লক্ষ্য বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ঘুরিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করা। আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি রাশিয়ার বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সবশেষ দুটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেই ভোট কারচুপির অভিযোগ ওঠেছে। এখন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নানাভাবে ঘায়েল করতে তৎপর বাইডেন প্রশাসন। নিজেদের দেশের এসব অগণতান্ত্রিক আচরণ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। উল্টো নিজের মোড়লিপনা জাহির করে সেসব অপকর্ম ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তাদের প্রধান অস্ত্র হয়ে ওঠেছে নিষেধাজ্ঞা। বছরের শেষে এসেও নিষেধাজ্ঞা জারি অব্যাহত রয়েছে। চলতি সপ্তাহেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ১৩ দেশের ৩৭ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের সর্বজনীন ঘোষণা দিবসকে সামনে রেখে গত ৮ ডিসেম্বর এ ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের এ ‘স্যাংশন পলিটিক্স’ এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। যার শুরু মূলত গত শতকের ৯০-এর দশকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যেটাকে ‘স্যাংশন ডিকেডস’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মানবাধিকার বা গণতন্ত্রের কথা বলে স্যাংশন দেয়া হলেও বেশিরভাগ সময় ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থসহ অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আরও পড়ুন: এবার মাছের ওপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের স্কুল অব সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্লোবাল স্টাডিজের অধ্যাপক সায়ীদ ইফতেখার আহমেদ মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন-এর ক্ষেত্রে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বললেও অনেক দেশ, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে, তাদের ব্যাপারে চুপ থাকে। যেমন ‘সৌদি আরব’। সেখানে মানবাধিকার বা গণতন্ত্র না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র কখনই তাদের নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। একইভাবে পাকিস্তানের দিকে তাকালে দেখা যাবে, দেশটি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, উগ্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপে বিপর্যস্ত। দীর্ঘদিন গণতন্ত্র নেই। তারপরও পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দেয় না। উল্টো আমেরিকার কথিত গণতন্ত্র সম্মেলনে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ পাঠায়। ফলে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র কিংবা মানবাধিকার রক্ষা নয়, নিজেদের স্বার্থ ও আধিপত্য বিস্তারের জন্যই নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘন, কোথাও গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্র, আবার কোথাও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মকে।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply