এবার বিচারকাজে বাধা দেয়ায় অভিযুক্ত বব মেনেনডেজ
আবারও অভিযুক্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির সিনেটর বব মেনেনডেজ এবং তার স্ত্রী নাদিন মেনেনডেজ। এবার বিচারকাজে বাধা দেয়ার জন্য উভয়কে অভিযুক্ত করেছে মার্কিন বিচার বিভাগ। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) মার্কিন বিচারালয় থেকে এ সম্পর্কিত রায় আসে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
সিনেটর বব মেনেনডেজ ও তার স্ত্রী নাদিন মেনেনডেজ। ছবি: সংগৃহীত
এই মেনেনডেজ সেই ক্ষমতাধর মার্কিন সিনেটর, যিনি ২০২০ সালে বাংলাদেশে কথিত বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ভুয়া অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনকে আহ্বান জানান। অথচ আজ তিনিই নিজ দেশে বিচারের সম্মুখীন।
এর আগে ঘুষের অভিযোগ মাথায় নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত এই সিনেটর।
মিশরীয় সরকারকে গোপনে সহায়তা করা, বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে নগদ টাকা স্বর্ণালঙ্কারসহ দামি সামগ্রী ঘুষ নেয়ার দায়ে আদালতের কাঠগড়ায় মেনেনডেজ। বিচার থেকে বাঁচতে একের এক অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একে একে বেরিয়ে আসছে তার সব থলের বিড়াল।
আরও পড়ুন: সরে দাঁড়ালেন হ্যালি, আবারও বাইডেন ও ট্রাম্পের লড়াই
নিউইয়ক টাইমসের রিপোর্ট বলছে, ঘুষকে ‘ধার’ বলে চালাতে গিয়ে আবারও ধরা খেয়েছেন বব দম্পতি। এমনকি নিজের আইনজীবীর কাছেও মিথ্যা বলেছিলেন বব। বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত করতে তাদের অপকৌশলের প্রমাণ মেলায় এ অভিযোগেও বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে তাদের।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুর্নীতির দায়ে পদত্যাগ করতে হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বব মেনেনডেজকে। দুর্নীতিতে নাম আসে তার স্ত্রী নাদিন মেনেনডেজেরও।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের কৌঁসুলিদের অভিযোগ, মেনেনডেজ ও তার স্ত্রী গোপনে প্রভাব খাটিয়ে মিশরীয় সরকারের সহায়তা পাইয়ে দিতে এবং তিন ব্যক্তিকে আর্থিক সুবিধা দিতে ঘুষ নিয়েছিলেন। ওই তিন ব্যক্তি হলেন ওয়ায়েল হানা, জোসে উরিবে ও ফ্রেড ডাইবস।
তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগে ২০১৫ সালেও সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল তাকে। ওই সময় ফ্লোরিডার এক চক্ষুচিকিৎসকের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল বব মেনেনডেজের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র / প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন কিনা, জানালেন মিশেল ওবামা
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী অবমুক্ত করা ৩৯ পাতার অভিযোগে বলা হয়েছে, মেনেনডেজের রাজনৈতিক অবস্থান ও ক্ষমতা তাকে এ ধরনের দুর্নীতিতে জড়াতে উৎসাহিত করেছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে মেনেনডেজ ও নাদিনে দম্পতি নিউ জার্সির তিন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে নগদ অর্থ, সোনা, দামি গাড়ি ও একটি বাড়ির বন্ধক নিয়েছেন।
বব মেনেডেজ কে, কেনোইবা তার দুর্নীতি নিয়ে এতো আলোচনা?
বারবার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠা মেনেনডেজ বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচিত সমালোচিত নানা কারণে। মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যানের পদ ব্যবহার করে আরও সাত সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় নেমেছিলেন বব।
সে সময়ের ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও'র কাছে বাংলাদেশে মানবাধিকার হরণের অভিযোগ তুলে নিষেধাজ্ঞার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।
মেনেনডেজ ও তার সহকর্মীরা দাবি করেছিলেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত র্যাব চারশ মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। গুম খুন মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ তুলে র্যাবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দাবি করেন বব মেনেনডেজ।
তবে এসব দাবি করে লিখিত অভিযোগ দিলেও চিঠিতে অভিযোগের সপক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি মেনেনডেজ।
আরও পড়ুন: সুপার টুয়েসডে /আবারও ট্রাম্প-বাইডেন লড়াই দেখতে যাচ্ছে বিশ্ব?
পর্যবেক্ষকদের কারও কারও ধারণা, বৈদেশিক কমিটির চেয়ারম্যানের পদ ব্যবহার করে মেনেনডেজ সে সময়ের মার্কিন সরকারের প্রভাবশালীদের দিয়ে র্যারবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আদায় করে নিয়েছিলেন।
পর্যবেক্ষকরা এও বলছেন, বব নিজের পদের প্রভাব খাটিয়ে মিসরীয় সরকারকে সহায়তায় দেয়া, কিংবা বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ওঠা ইঙ্গিত দেয়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও হয়তো কারো কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকতে পারেন তিনি।
তবে মেনেনডেজ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের চূড়ান্ত ফয়সালা হবে আদালতেই। আইনি প্রক্রিয়ায় হয়তো বের হয়ে আসতে পারে থলের ভেতরে থাকা আরও অনেক অন্ধকারের বিড়াল।
Tag: English News politics world
No comments: