বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচনী ‘চাঁদাবাজি’র অভিযোগ, মোদির হুঁশিয়ারি
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী ‘চাঁদাবাজি’ করার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। তবে এ অভিযোগ নিয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার মতে, নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিরোধীরা যতই ‘নাচানাচি’ করুক, তা ভোটে প্রভাব ফেলবে না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি
ভারতের যেকোনো ব্যক্তি কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছে করলে তাদের পছন্দের রাজনৈতিক দলকে তহবিল দিতে পারে। এর পরিমাণ ১ হাজার থেকে ১ কোটি রুপি পর্যন্তও হতে পারে। তবে, ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি মোদি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনী এই তহবিলকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। যদিও এর আগে বৈধতা না থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো তা সংগ্রহ করতো।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এমন তহবিল ব্যবস্থাপনা বন্ধ রাখার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো কোথা থেকে কত টাকা পেয়েছে, এর একটি খতিয়ান প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, নির্বাচনী তহবিল ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় শাসক বিজেপি প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি রুপি পেয়েছে।
তবে বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। দেখা যাচ্ছে, যেসব প্রতিষ্ঠান মোদির দলকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে সেই ৪১টি প্রতিষ্ঠানে কোনো না কোনো সময় দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি, সিবিআই কিংবা আয়কর দফতর হানা দিয়েছিল। এমন প্রতিষ্ঠান থেকে বিজেপির ঝুলিতে গেছে ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এরপরই বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, সরকারি সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী ‘চাঁদাবাজি’ করছে বিজেপি।
আরও পড়ুন: মোদির বিরুদ্ধে একাট্টা বিরোধীরা
ঠিক লোকসভা নির্বাচনের আগে বিষয়টি নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে নেতিবাচক ভাবনা তৈরি হতে পারে এমন শঙ্কার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটির একটি গণমাধ্যমকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিরোধীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই ইস্যুতে যারা নাচানাচি করছেন, এক সময় তাদের আফসোস করতে হবে।’
শুধু তাই নয়, এ বছরের নির্বাচনে এই ‘চাঁদা’ কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন মোদি।
প্রসঙ্গত, শুধু বিজেপিই নয় দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম সংগ্রহকারী দল মমতার তৃণমূল কংগ্রেসও প্রায় দেড় হাজার কোটি রুপি তহবিল সংগ্রহ করেছে। আর তৃতীয় স্থানে রয়েছে সোনিয়া গান্ধীর কংগ্রেস। তারাও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে এক হাজার কোটি রুপির বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছে। তবে, এক্ষেত্রে বাম দলগুলোর অবস্থান আলাদা।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে উত্তপ্ত ভারতের রাজনীতি, চাপে মোদি সরকার!
দেশটির রাজনৈতিক সচেতনরা বলছেন, কম হোক কিংবা বেশি, দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলই নির্বাচনী তহবিলের নামে কার্যত ‘চাঁদাবাজি’ করেছে। মোদি সরকার সেই ‘চাঁদাবাজি’র বৈধতা দিয়েছিল। তাই মোদির বিরুদ্ধে বাকি দুটি রাজনৈতিক দল এই ইস্যুতে তেমন মুখ খোলেনি।
এই ব্যবস্থা দেশটির গণতন্ত্র এবং শুষ্ক রাজনৈতিক পরিবেশের পরিপন্থি। অনেক ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটে এর প্রভাব পড়বে বলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।
No comments: