রাখাইনে তীব্র লড়াই, ফের বাস্তুচ্যুত হওয়ার হুমকিতে রোহিঙ্গারা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শক্তিশালী জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জান্তার সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান লড়াই ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। ফলে আবারও হামলা ও বাস্তুচ্যুত হওয়ার হুমকিতে পড়েছে এই অঞ্চলের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। জাতিসংঘ ও ত্রাণ সংস্থাগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। রয়টার্স।
সংঘাতের কারণে চলতি মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে এরই মধ্যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাস করছে যারা বিভিন্ন সময় সংঘাতের কারণে পালিয়ে এসেছিল। ঢাকা নতুন করে আরও রোহিঙ্গাকে দেশে ঢুকতে দিতে অনাগ্রহী।
রাখাইনে যেসব রোহিঙ্গা রয়ে গেছেন তাদের বেশিরভাগ মূলত বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বাস করছে। এরা ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হলেও সংঘাতের কারণে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছে না। ফলে তীব্র মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।
মে মাসের শুরুর দিকে বুথিডং শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দাবি করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। সম্প্রতি গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদায়ের সঙ্গে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে তারা।
আরও পড়ুন: পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা: জাতিসংঘ
রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, আরাকান আর্মি এখন সীমান্ত শহর মংডু দখলে চেষ্টা করেছে। এই শহরে একটি বৃহৎ রোহিঙ্গা জনসংখ্যা বসবাস করছে। এই শহর ধরে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে জান্তা। ফলে সেখানে আরও ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের এক মুখপাত্র বলেছেন, বর্তমানে সেখানে সহিংসতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার স্পষ্ট ঝুঁকি দেখতে পাচ্ছি আমরা। কেননা পাশের মংডু শহর দখল নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এখানে সামরিক বাহিনীর ফাঁড়ি রয়েছে এবং একটি বৃহৎ রোহিঙ্গা সম্প্রদায় বাস করে।
গত কয়েক দশক ধরেই নজিরবিহীন নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছেন রোহিঙ্গারা। নোবেলজয়ী গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির শাসনামলে ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক অভিযান শুরু করে।
আরও পড়ুন: দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আহ্বান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের
সে সময় রোহিঙ্গাদের শত শত গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়। নারী ও শিশুসহ হত্যা করা হয় হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে। গণহত্যা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ সীমান্তে জড়ো হয় লাখ লাখ রোহিঙ্গা। মানবিক দিক বিবেচনায় সেবব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে বাস করছে এমন একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ তাহের বলছেন, সম্প্রতি মংডুতে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হয়েছে তার। সেই বন্ধু তাকে জানিয়েছেন, রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গারা বর্তমানে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
No comments: