Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » বৃটিশ আমলে চুয়াডাঙ্গা রেল ষ্টেশন হইতে আঠারো মাইল দূরবর্তী মেহেরপুর আসিতে গরুর গাড়ী ভিন্ন অন্য যান-বাহন ছিল না তন্মধ্যে দুইটি নদী পার হইতে হইত (আশি পর্ব )




বৃটিশ আমলে চুয়াডাঙ্গা রেল ষ্টেশন হইতে আঠারো মাইল দূরবর্তী মেহেরপুর আসিতে গরুর গাড়ী ভিন্ন অন্য যান-বাহন ছিল না তন্মধ্যে দুইটি নদী পার হইতে হইত (আশি পর্ব ) বৃটিশ আমলে কলিকাতা হইতে তখন মেহেরপুবে যাইতে হইলে পূর্ববঙ্গ রেলপথের চুয়াডাঙ্গা ষ্টেশনে নামিয়া, পথের কথা ভাবিয়া দুই চক্ষু কপালে তুলিতে হইত । কারণ, চুয়াডাঙ্গা ষ্টেশন হইতে ৯ ক্রোশ বা আঠারো মাইল দূরবর্তী মেহেরপুর যাইতে গরুর গাড়ী ভিন্ন অন্য যান-বাহন ছিল না । মধ্যে দুইটি নদী পার হইতে হইত । আমরা চুয়াডাঙ্গায় অপরাহ্ন পাঁচটার সময় কলিকাতাগামী “চাটগাঁ এক্সপ্রেস্' ট্রেন ধরিবার আশায় বেলা ৯টার পূর্বেব গরুর গাড়ীতে উঠিয়া ছৈয়ের ভিতর দীর্ঘদেহ প্রসারিত করিতাম, এবং গরুর গাড়ীর ঝাঁকুনীতে সব্বঙ্গি বেদনাপ্নুত করিয়া পাঁচটার কয়েক মিনিট পূর্বে চুয়াডাঙ্গা ষ্টেশনে উপস্থিত হইতাম ; নদী পার হইতে বিলম্ব হইলে ট্রেনের আশা ত্যাগ করিতে হইত । আর এখন মোটর-বাসের অনুগ্রহে অপরাহ্নে মেহেরপুর ত্যাগ করিয়া সন্ধ্যার পর কলিকাতায় আসিতে পারিতেছি। কিন্তু সেই দুর্দিনে শরত্বাধুর মত মহা সন্ত্রান্ত ব্যক্তি সদলে গরুর গাড়ীতে মেহেরপুর যাইবেন, ইহা আশা করা অন্যায় । এ জন্য মেলা সমিতি বহুব্যয়ে তাঁহাদের জন্য পাক্লীর ব্যবস্থা. করিয়াছিলেন । যেদিন অভিনয় আরম্ভ হইবার কথা. শরত্বাবু ও অন্যানা অভিনেতা তাহার কয়েকদিন পূর্ব্বেই মেহ

েরপুরে উপস্থিত হইয়া মহেন্দ্রবাবুর আতিথ্য গ্রহণ করেন ; কিন্তু তাঁহারা অধিক দৃশ্যপটাদি সঙ্গে লইয়া যাইতে পারেন নাই, এ জন্য শরৎবাবু স্থানীয় চিত্রশিল্পীর সাহায্যে মেহেরপুরেই কয়েকখানি দৃশাপট অঙ্কিত করাইয়াছিলেন । মহেন্দ্রবাবুর কনিষ্ঠ সহোদরের বৈঠকখানা-বাড়ীতে শরৎ্বাবুর উপদেশে সেই সকল পট অঙ্কিত হইতেছিল । আমরা ক্ষুধাতৃষ্ণা ভুলিয়া দূরে দাঁড়াইয়া অঙ্কন কৌশল নিবীক্ষণ করিতাম, এবং কি গভীর সন্ত্রমের সহিত শরৎবাবুর মৌমামৃর্তির দিকে চাহিয়া থাকিতাম | শরত্বাবু তখন যুবা পুরুষ, তীহার ন্যায় পুরুষ তাহার পূর্বেব আর একজনও দেখিয়াছিলাম কিনা স্মরণ নাই | যাহা হউক, নির্দিষ্ট দিনে রঙ্গমঞ্চে অভিনয় আরম্ভ হইল | টিকিটের মুল্য এক টাকার কম ছিল না : এক একখানি 'রিজার্ভড' আসনের মূল্য পাঁচ টাকা । মহকুমার অধিকাংশ জমীদার এবং পদস্থ রাজকর্মমচারীরা “রিজার্ভড' আসন আঁধকার করিয়াছিলেন : দুই টাকা ও এক টাকা মূল্যের টিকিট এত অধিক বিক্রয় হইয়াছিল যে. দরমার ঘেরের ভিতর তিল ধারণেরও স্থান ছিল না । বারো বৎসরের ন্যুন বয়স্ক বালকরা অদ্ধমূল্যে "হাফ টিকিট' পাইয়াছিল। কাকা আমাকে আট আনা দিয়া টিকিট কিনিয়া দিয়াছিলেন, আমি তাঁহার পাশে বসিয়া অভিনয় দেখিয়াছিলাম । সময় আর কাটে না, একতানিক বাদ্য নীরব হইলে যবনিকা উত্তোলিত হইল । শরৎবাবু মহামূল্য পরিচ্ছদে একটি বৃহৎ ওয়েলারে আরোহণ করিয়া ষ্টেজে প্রবেশ করিলেন । মনে হইল, ইনি সতাই জগৎ সিংহ । কিন্তু বালক আমরা, বিদ্যাদিগ্গিজের অভিনয়েই আমরা অধিক মুগ্ধ হইয়াছিলাম। এই মেলা উপলক্ষে, অর্থের অপবায়ও অল্প হয় নাই । বাবুরা বাই, খেমটা প্রভৃতির অয়োজনে বহু অর্থাবায় করিয়াছিলেন । এই উপলক্ষে কলিকাতা হইতে অনেকগুলি খেমটাওয়ালীর আবির্ভাব হইয়াছিল, বাইজীর সংখ্যাও অল্প ছিল না । সে কালে উচ্চশ্রেণীর পুরুষদের নীতিজ্ঞান একাল অপেক্ষা অল্প ছিল । গভীর রাত্রিতে মেলার আসরে খেমটা আরম্ভ হইলে সুরার স্রোত বহিয়াছিল, ছেলেদের কৌতুহল প্রবল, এক রাত্রিতে কয়েক বন্ধুতে চুরি করিয়া খেমটা দেখিতে গিয়াছিলাম, কিন্তু ধরা পড়িয়া কাকার কাছে যে প্রহার লাভ করিয়াছিলাম, তাহা বহুদিন স্মরণ ছিল । যিনি আগ্রহভরে আমাকে থিয়েটার দেখাইয়া আনিয়াছিলেন, ' খেমটা নাচ দেখিতে যাওয়ায় তিনি কি জন্য আমাকে কঠোর শাস্তি দিলেন, তাহা বুঝিবার মত তখন আমার বয়স হয় নাই, কিস্তু বাবুরা মদ্যপানে বিহূল হইয়া খেমটাওয়ালীদের সঙ্গে প্রকাশ্য আসরে সে অভদ্র রসিকতা করিতেছিলেন, তাহা দেখিয়া আমরা অত্যন্ত লজ্জাবোধ করিয়াছিলাম ৷ মেলাস্থলে নানা প্রকার আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা করা হইয়াছি। নাগরদোলা, ঘোড়াবাজি প্রভৃতি আসিয়াছিল । চাষীরা পান চিবাইতে চিবাইতে নাগরদোলায় উঠিয়া পাক খাইতেছিল। দুই তিন জন সমস্বরে গাহিতেছিল-_ “যায় বুজি যৈবনের তরী অকুল তুফানে, মদনেরই ঢেউ নেগেচে রাখতে পারিনে |” এক পয়সায় কুড়ি পাক, কেহ কেহ দুই তিন পয়সার পাক খাইতে লাগিল । কাহারও পাশে পল্লী বারবিলাসিনী । কালো কুচকুচে রং, পায়ে মল, কটিতটে রূপার গো বা চন্দ্রহার, দাঁতে মিসি, হাসিলে মনে হয় টিকায় আগুন ধরিয়াছে ! ত্রিশ বৎসরের গত যৌবনা অভাগিনীর নাকে নোলক ! কপালে টিপ,__কি বিশ্রী চেহারা ! মদনের ঢেউই বটে ! এই শ্রেণীর পতিতাদের জন্য মেলার এক অংশে কুটীর-শ্রেণী নির্মিত হইয়াছিল, তাহাদের প্রত্যেকের নিকট হইতে যথেষ্ট খাজনা আদায় হইত ; সেদিকে গ্রাম্য চাষীদের দলের কী ভীড় ! মেলায় নানা স্থান হইতে দোকানী-পসারী আসিয়াছিল । একদিন এক পয়সা দিয়া কাটামুগ্ডের কথা শুনিতে গিয়াছিলাম | বাড়ীর পাশেই মেলা, শেষ রাত্রিতে নহবতে যে সঙ্গীতালাপ হইত, আধঘুমে তাহা বড় মধুর মনে হইত | সকাল হইতে রাত্রি দশটা পর্যাস্ত জুয়ার আড্ডায় 'তেতাস' ও “কুপন খেলার ধূম-_আর সেই দিকেই পল্লীবিলাসিনীদের 'কোয়াটার' | আমার পিতাঠাকুর মহাশয়ের একটি যুবক বন্ধু তখন কৃঞ্ঠনগর কলেজের প্রতিভাবান ছাত্র, তিনি মুখুয্যে পরিবারের রত্বস্বরূপ ছিলেন ; পরে ত্রান্মধন্্ন অবলম্বন করিয়াছিলেন, এবং কলেজে অধ্যাপনা করিতে করিতে সরকারের বৃত্তি লইয়া বিলাতে কৃষি বিদ্যা শিখিতে গিয়াছিলেন । কৃষ্ণনগরের সুপ্রসিদ্ধ ব্যারিষ্টার মনোমোহন ও লালমোহন ঘোষ ভ্রাতৃদ্য তাঁহাকে সহোদরের মতই স্নেহ করিতেন । তিনি এই মেলায় অর্ধ্যের অপব্যয় ও দুর্নীতির ম্লোত দেখিয়া! অতান্ত অসন্তুষ্ট হইয়াছিলেন, এবং গুরুজনের কার্যের প্রতিবাদ করিবার জন্য একখানি ক্ষুদ্র কবিতা-পুস্তক প্রকাশিত করিয়াছিলেন, তাহার "টাইটেল" পৃষ্ঠার উপর হেমবাবুর একটি কবিতার কিয়দংশ “মটো' রূপে উদ্ধৃত হইয়াছিল__ “একদিন অনশনে যদি দিন যায়, জান না কি বঙ্গবাসী কি যাতনা তায় “-_ ইত্যাদি । আমরা ছেলের দল অবশেষে মেলার বিরুদ্ধে তাঁহার সহযোগিত! করিয়াছ/// ি”বৃটিশ আমলের খ্যাতনামা লেখক, দীনেন্দ্রকুমার রায়: গ্রন্থনা:অধ্যক্ষ মহসীন আলী আঙ্গুঁর ,সম্পাদক ও প্রকাশক, মুজিবনগর খবর ডট কম,মেহেরপুর।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply