Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » স্মৃতিতে মেহেরপুর -মোহাম্মদ কুদ্দুস




স্মৃতিতে মেহেরপুর

-মোহাম্মদ কুদ্দুস আমি মোহাম্মদ কুদ্দুস। দীর্ঘ সময় পথ চলা জীবনের এক পর্যায়ে এসে -পিছন ফিরেই অতীত জীবনের কিছু স্মৃতিচারণ করছি। প্রায় চল্লিশ টি বছর পূরণ হতে চলেছে,আমি অষ্ট্রেলিয়াতে পাড়ী জমিয়েছি।এই সুদীর্ঘ সময়টা আমি অষ্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা শহরেই বসবাস করছি। দীর্ঘ সময় ধরে এখানে সরাসরি চাকরি জীবন কাটিয়ে এখন অবসর জীবন -যাপন করছি। পিছনের দিকে ফিরে গেলে মনে হচ্ছে সব কিছুই যেন স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঘটে গেছে। কিন্তু মন তো সেই একই রকম আছে, তবে আয়নার সামনে দাঁড়ালে বোঝা যায়-চেহারার পরিবর্তন? এখন ফিরে যাচ্ছি বাল্য জীবনের সেই মেহেরপুর ও তথা দারিয়াপুরের স্মৃতি চারণে। *আমার জন্ম মেহেরপুর জেলার দারিয়াপুর গ্রামে। মেহেরপুর থেকে দারিয়াপুরের দূরত্ব মাত্র ছয় কিলোমিটার।বাবা -মায়ের দশ সন্তানের মধ্যে আমি হচ্ছি ৫ম সন্তান আর ভাইদের মধ্যে আমিই দ্বিতীয় অর্থাৎ মেজ। দশ ভাই -বোনের মধ্যে ৫ ভাই ও ১ বোন মোট ৬ জনই আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেছিলাম। যদিও আমার এক ভাই পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেছিল।বড় ভাই ডঃ মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতার জীবন শুরু করেন।পরে কানাডা সরকারের স্কলারশীপ নিয়ে সেখানে লেকহেড বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার মাষ্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপরে অষ্ট্রেলিয়া সরকারের স্কলারশীপ নিয়ে নিউ ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেPhD করেন।আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, Social Work Dept থেকে অনার্স সহ মাষ্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করে পরে অষ্ট্রেলিয়াতে এসেAustralian Catholic University থেকে ২ বছরের Post Graduate Degree সম্পন্ন করি Social Work এ। আমাদের চতুর্থ ভাইটা মোহাম্মদ গোলাম ফুয়াদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে M.sc সম্পন্ন করে এবং পরে অষ্ট্রেলিয়ার সিডনি তে UTS থেকে MBA সম্পন্ন করে। ফুয়াদ এখন সিডনি শহরে বসবাস করে।*দারিয়াপুর প্রাইমারী স্কুল থেকেই আমার পড়াশোনার জীবন শুরু হয়।প্রাইমারী স্কুল শেষ করেই আমি দারিয়াপুর হাইস্কুল থেকে এস এস সি, মেহেরপুর সেন্টারের অধীনে শেষ করি। এরপরে আমি রাজশাহী কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা শেষ করি। দারিয়াপুর গ্রামে আমাদের বাড়ির সামনেই ছিল প্রাইমারী স্কুলটা -বেলা দশটার সময় ঘণ্টা বাজলেই দৌড়ে চলে যেতাম সরাসরি ক্লাসে। তারপর কয়েক বছর পরে দারিয়াপুরে বাজারের কাছে নূতন বিল্ডিং তৈরি হলে - সেখান থেকেই চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণী সম্পন্ন করি।*এরপরই হাই স্কুলে যাবার পালা,ঐ একই অবস্থা -বাড়ীর কাছেই ছিল আমাদের হাই স্কুল,যেটা বর্তমানে দারিয়াপুর Girls High School. তার পর পরই নূতন বিল্ডিং শুরু হলো -বর্তমানে দারিয়াপুর বাজারের পার্শে বড় রাস্তার ধারে, ওখান থেকেই নবম ও দশম শ্রেণীর লেখাপড়া করি এবং এস এস সি পাশ করি। মোহাম্মদ আবদুল কাশেম ছিলেন আমাদের হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং উনি সারা জীবন ই প্রধান শিক্ষকতা করেই অবসর গ্রহণ করেন।*সেই সময়কার কিছু শিক্ষকের কথা উল্লেখ করতেই হয়? প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের বলতে গেলে কোন ট্রেনিং- ই ছিলো না। একটা বাঁশের কুনচি বা বেতের ছড়ি (লাঠি) হাতে নিয়ে স্কুলে আসতো, মনে হতো যেন তারা ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য বললে ভূল হবে? বরঞ্চ রাখালের মতো গরু-ছাগল চরাতে আসতো? নাবালক ছেলে -মেয়েদের আদর যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে লেখা পড়া শেখানোর পরিবর্তে মুখস্থ বিদ্যা না করতে পারলে বেদম পিটানো বা টর্চার করতো।ফলে শুরুতেই শিক্ষকদের ভয়ে স্কুল পালানো বা অনেকের লেখা- পড়ার সমাপ্তি ঘটতো। হাই স্কুলের ক্ষেত্রেও কম বেশি কিছুটা একই অবস্থা ছিল। মুখস্থ বিদ্যা না করতে পারলে লাঠি- পেটা করাটাই ছিলো অনেক শিক্ষকের প্রধান কাজ ও বাহাদূরী। হাতে গোনা মাত্র দুই -তিন জন ছাড়া কোন শিক্ষকের বি,এড ট্রেনিং ছিলো না, ফলে শিক্ষা দেওয়ার কৌশলটাই তাদের জানা ছিল না। এসব কারণেই বহু ছেলে -মেয়েদের শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে যেত এস এস সি পাশ করার আগেই। তবে সেই যুগেও লেখা পড়ার সাথে সাথে প্রাইমারী ও হাই স্কুলে খেলাধুলা করার ব্যবস্থা বেশ ভালো ছিলো বলতে হবে।*হাডুডু , ফুটবল,ভলি বল, রিং বল,হকি ইত্যাদি নানারকম খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিলো দারিয়াপুর হাই স্কুল ফুটবল খেলার মাঠে। এমন কি মেহেরপুর সদর স্কুল সমূহ সহ আমঝুপি, কেদারগঞ্জ,যাদুখালি স্কুল গুলোতেও। বহু দূর-দূরান্ত গ্রামগঞ্জ থেকে বিশেষ করে ছেলেরা দারিয়াপুর হায় স্কুলে লেখাপড়া করতো-কেহ বা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতো,কেহবা বাই সাইকেলে করে যাতায়াত করতো, আবার অনেকে যাইগীর বা লজিং থাকতো দারিয়াপুর গ্রামে বা আশেপাশে গ্রামের অনেকের বাড়িতে। সত্যিই গর্ভ করেই বলতে পারি যে,দারিয়াপুরের শিক্ষার হার সব সময়ই অনেক ভালো ছিল - এমনকি সেই সময়ে মেহেরপুর জেলা শহর হিসেবে মেহেরপুরের চেয়ে কোন অংশেই কম ছিলো না। যদিও মেহেরপুর জেলা হয়েছে ১৯৮৪ সালে। এখানে আর একটু কথা বলতেই হয় যে,১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পূর্বে অর্থাৎ বৃটিশ পাক -ভারতের সময়ও কিন্তু মেহেরপুর ছিলো বর্তমান ভারতের নদীয়া জেলার একটা মহকুমা শহর এবং পশ্চিম বাংলার করিমপুর থানাও ছিলো মেহেরপুর মহকুমার মধ্যে। * আমরা যখন সবে মাত্র হাইস্কুলে পড়ি-তখন ই মেহেরপুর কলেজ শুরু হয় মেহেরপুরের বেশ কিছু গন্যমান্য ব্যাক্তি ও কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্যোগে এবং ক্রমান্বয়ে কলেজটা প্রতিষ্ঠিত হয়।যেটা বর্তমানে মেহেরপুর সরকারি কলেজ নামে পরিচিত। মনে পড়ে ঐ সময়ে মেহেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ ও বেশ কয়েকজন শিক্ষকের কথা। অধ্যক্ষ ছিলেন জনাব আব্দুল কাশেম, প্রভাষক হিসেবে ছিলেন আমার বড় ভাই ডঃ মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া,মুহা:আনছার-উল হক( আমঝুপির বাসিন্দা), জনাব বাশার সাহেব, শহীদুল্লাহ সাহেব, আলমগীর সাহেব (রাজশাহীর বাসিন্দা), আব্দুল হালিম, মন্জুর সাহেব, তালুকদার সাহেব,শুকেষ বাবু, আলাউদ্দিন সাহেব, প্রফুল্লচন্দ্র আরও অনেকে। মেহেরপুর সরকারি বয়েজ হাই স্কুলটা তখন পরিচিত ছিলো -মেহেরপুর মডেল হাই স্কুল নামে এবং তারপর পরই মেহেরপুরে নজরুল হাই স্কুলটা প্রতিষ্ঠিত হয়। মেহেরপুর সরকারি Girls High School টা তার আগে থেকেই ছিল এবং কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা আমার সঠিক জানা নেই? * দারিয়াপুর হাই স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার ও ভালো ব্যবস্থা ছিলো,সেরূপ লেখা পড়ার সাথে সাথে মেহেরপুরেও খেলাধুলায়ও বেশ অনুরাগী ছিলো। তখন বিভিন্ন মহল্লা ও গ্রামের সাথে নানা ধরণের খেলাধূলা প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো। বিশেষ করে -ফুটবল খেলা,হাডুডু ও হকি খেলা, লাঠি খেলা,নাকড়ী খেলা ইত্যাদি।মেহেরপুর শহরের"প্রগতি" নামে খুবই নাম করা একটা ফুটবল টিম ছিলো এবং ভীষণ সুনাম ছিলো ঐ টিমের। ঠিক তেমনি ভাবে দারিয়াপুর একাদশ নামেও খুব নাম করা একটা ফুটবল টিম ছিলো, অনেক সময়ই বছরের ফাইনাল খেলাটা হতো মেহেরপুর "প্রগতি" আর দারিয়াপুর "একাদশ"এর মাঝে কখনো দারিয়াপুর হাই স্কুল মাঠে আবার কখনো বা মেহেরপুর ফুটবল মাঠে ।জমকানো খেলা দেখার জন্য মাঠে ভীড় হতো হাজার-হাজার দর্শকের। এভাবেই বছরের বিভিন্ন সময়ে মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামে -গঞ্জে লেগে থাকতো নানারকম উৎসবের ফোয়ারা। *নাকড়ী খেলা,লাঠি খেলা,জারী গানের আসর, যাত্রা গানের আসর, নাটক ইত্যাদি সব সময় লেগেই থাকতো মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য । মেহেরপুর,দারিয়াপুর,গৌরিনগর, আমঝুপি, বুড়িপোতা ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানের অনেক গন্যমান্য ব্যাক্তিদের কথাও মনে পড়ে।বুড়িপোতার "ছাবদার মিয়া " খুব নাম করা ভদ্র লোক ছিলেন -বৃটিশ সরকারের সময়ে তিনি বি,এ পাশ করেন ,২০/৩০ মাইল দূরে থেকে মানুষ পায়ে হেঁটে"তাকে" দেখতে এসেছিলেন বলে গুরুজনদের কাছ থেকে শুনেছি। এমনকি বৃটিশ সরকারের অধীনে মরহুম"ছাবদার মিয়া" মেহেরপুর মহকুমাতে Honorary Magistrate এর দায়িত্বভার পালন করেন। পরে আজীবন তিনি মেহেরপুর মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন এরপর তিনি অবসর গ্রহণ করেন। এর পরবর্তী কালীন সময়ে বৃহত্তর মেহেরপুরের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অনেকেরই ভূমিকা রয়েছে,তারা হচ্ছেন মরহুম মাহতাব খাঁন, মরহুম মহীউদ্দীন সাহেব, মরহুম আওলাদ কন্ট্রাকটর, মরহুম আফসার মিয়া, মরহুম রশীদ ডাক্তার,শালিকা গ্রামের মরহুম গনী বিশ্বাস,গৌরীনগরের মরহুম জলীল মিয়া, ও তার বড় ছেলে মরহুম হায়াত উকিল সহ আরও অনেকেই। এছাড়াও সেই সময়ে মেহেরপুর শহর সহ ঐ অঞ্চলে দুই জন খুবই নাম করা ডাক্তার হিসেবে জনসেবামূলক কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁরা হলেন মরহুম ডাঃ আব্দুল বাকী ও মরহুম ডাঃ জাফর।*এরপরেও বিভিন্ন সময়ে বৃহত্তর মেহেরপুরের জনগণ শিক্ষা, সংস্কৃতি, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর পদে চাকরিতে সব সময় ভালো ভূমিকা রেখে চলেছে। তৎকালীন সময়ে মেহেরপুরের বেশ কয়েক জনের নাম উল্লেখ করছি: মরহুম ড. মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া , মরহুম গোলাম কিবরিয়া ( সরকারী কর্মকর্তা), মোহাম্মদ নয়মুদ্দীন মিয়া (( কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা), মরহুম আফতাব উদ্দিন মোল্লা (দারিয়াপুর), মরহুম আজিজুল হক ঘুরী, (ইন্জিনিয়ার , শ্যালিকা গ্রাম) , জনাব মোহাম্মদ ইসমাইল (শিক্ষক মেহেরপুর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়) , মরহুম জোহা সাহেব (আর্মি অফিসার,বুড়িপোতা গ্রাম) ,সহ অনেকেরই কথা মনে পড়ে।দারিয়াপুর গ্রামের মরহুম জোব্বার মোল্লার কয়েকজন ছেলেও সেই যুগে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকাতে চাকরি করতেন। ভালো স্কুল শিক্ষক হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম মনে পড়ে, মরহুম হাঁদু মিয়া,নুরু মিয়া,দারিয়াপুরের মরহুম ফয়জুল্লাহ সাহেব ( বি,বিএড), জনাব মোহাম্মদ আবুল কাশেম সাহেব সহ আরও অনেকেই। *১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও গোটা মেহেরপুরের অবদান চিরকাল ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। এজন্যই বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাজধানী মেহেরপুর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে বৈদ্যনাথতলাকেই নির্ধারণ করা হয়। তখন মেহেরপুরের এস ডি ও , ছিলেন জনাব তৈফিক এলাহি। সেই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং গুলো হতো প্রতিদিনই আমাদের দারিয়াপুর গ্রামের ক্লাবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা রকম ঘটনা কাহিনী (নিজ চোখে দেখা) মনে পড়লে এখনও গায়ের লোম শিহরিয়ে উঠে। * মেহেরপুর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে আমঝুপি নামক স্থানে বৃটিশ আমলে ও বৃটিশ সরকারের একটা কুঠিবাড়ি আছে,কাজলা নদীর তীরে অবস্থিত এক বিশাল এলাকা জুড়ে এই কুঠিবাড়ি যেটা এখনও বৃটিশ শাসন ও তাদের নীল চাষের সাক্ষী বহন করছে। মর্মান্তরে জানা যায়-লর্ড ক্লাইভ তার পলাশীর যুদ্ধের পরিকল্পনা নীল নকশা এই কুঠিবাড়ি থেকে করেন। তবে এটি অসত্য কাহিনী। ১৯৭১ সালের পর থেকে এই কুঠিবাড়ি সহ ঐ ক্যাম্পাসের অনেক উন্নয়ন করা হয় এবং বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করা হয়।সব সময়ই এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টুরিষ্টের সমাবেশ হয়। দারিয়াপুর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার এবং মেহেরপুর জেলা শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাংলাদেশের সেই অস্থায়ী রাজধানী বৈদ্যনাথ তলা । এই স্থানটি এখন বাংলা দেশের একটা উপজেলা এবং এখানে এখন অনেক সরকারি বিভিন্ন অফিস আদালত আছে । দেশের সেরা চমৎকার একটা স্মৃতিসৌধ রয়েছে এখানে। এছাড়াও এখানে রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে জড়িত নানান স্মৃতি মাখা দেখার মত অনেক কিছু। মেহেরপুর জেলার অনেক উন্নয়ন হয়েছে, রাস্তা -ঘাট, অফিস -আদালত, স্কুল-কলেজ সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়েছে, এইসব উন্নয়নের কাজ সত্যিই খুবই ভালো লাগে। মানুষের অনেক কর্মসংন্থান হয়েছে , শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে। আমাদের দারিয়াপুর গ্রামেও এখন একটা সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এছাড়াও মেহেরপুর ও গাংনীতে আরও কিছু সরকারি স্কুল -কলেজ সহ বিভিন্ন ধরণের বহু স্কুল -কলেজ,মাদ্রাসা ও নানা রকম কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়েছে। মেহেরপুর জেলার মানুষ ভীষণ কর্মঠ। এখানকার কোন মানুষ ই আর না খেয়ে বা কাপড়ের অভাবে মরে না বা কষ্ট পায় না। বাল্যকালে তৎকালীন মেহেরপুর ও দারিয়াপুর সহ ঐ অঞ্চলে নানারকম ফসল ও ফল উৎপাদন হতো , যেগুলো আমি সত্যিই খুবই মিস করি। যদিও অনেক ফসলই এখনও উৎপাদন হয়। বিশেষ করে ফজলি আম, বিখ্যাত ল্যাংড়া ও হিমসাগর আম, এবং দেশ বিখ্যাত লিচু। এছাড়াও পেয়ারা, পেঁপে,কলা,আমড়া,বরুই(কুল),তালশাঁস,ডাব-নারিকেল,জাম, জামরুল সহ নানান রকম সিজনাল ফলমূল পাওয়া যেত বলে মনে পড়ে। দারিয়াপুর ও মেহেরপুরের পাশ দিয়ে ভৌরব নদী বয়ে গেছে -ঐ নদীটি মেহেরপুর এলাকাবাসীর জন্য একটা বড় সম্পদ।বাল্যজীবনে দেখেছি ঐ নদীর বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে শরৎকালে ভরা নদীতে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হতো এবং হাজার -হাজার দর্শকের ভীড় জমতো ঐ প্রতিযোগিতা দেখার জন্য। ঐ ভৌরব নদীতে নানারকমের প্রচুর সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত, যেমন: টেংরা, পুঁটি,রাইগ,ফলুই,পাবদা, ষোল,গজাড়,জিয়ল ও মাগুর ইত্যাদি । ভরা নদীতে নিজেও সিপ-বড়সী দিয়ে নানারকম ছোট মাছ ধরার স্মৃতিগুলো আজও মনে পড়ে। শরৎকালে ভরা নদীতে নৌকা ভাড়া করে বন্ধুদের নিয়ে বনভোজন ও পিকনিক সহ মজাদার আড্ডা দেওয়ার স্মৃতি চারণগুলো এখনও মনকে নাড়া দেয়। দীর্ঘ প্রায় ৪০ টি বছর বিদেশে কাটিয়েও আমি এখনও মেহেরপুরকে মিস করি। আরও মিস করি বাল্য বন্ধুদের সবাই কে। আমি সমস্ত মেহেরপুর বাসীর জন্য কল্যাণ ও সর্বাঙ্গীন উন্নয়ন কামনা করি। মোহাম্মদ কুদ্দুস, ক্যানবেরা, অষ্ট্রেলিয়া। ১৫ ই জানুয়ারি,২০২৫ সাল। মোহাম্মদ কুদ্দুস: লেখক অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী সাবেক স্বাস্থ্য বিভাগের কর্ম কর্তা। তিনি অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা।মেহেরপুরের দারিয়াপুরের কৃতী সন্তান।তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।লেখাপড়া শেষ করে তিনি কুমিল্লার একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন।পরে তিনি রংপুরে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কিছুদিন কাজ করেন।এরপরে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি স্বাস্থ্য বিভাগ চাকরি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যান।এখনো তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পরিবার নিয়ে আছেন। মাঝে-মধ্যে দেশে আসেন। স্ত্রী এবং দুই মেয়ে নিয়ে তিনি সুখেই আসেন।তার ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও প্রতিভাবান শিক্ষক খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড: মোহম্মদ গোলাম কিবরিয়া।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply