মেহেরপুরের সাহিত্য:ফজলুল হক সিদ্দিকী: (জন্ম ১১ মার্চ ১৯৫৪) কবি , গীতিকার ও প্রকৌশলী

মেহেরপুরের সাহিত্য:ফজলুল হক সিদ্দিকী: (জন্ম ১১ মার্চ ১৯৫৪) কবি , গীতিকার ও প্রকৌশলী এক গুচ্ছ কবিতা - ফজলুল হক সিদ্দিকী

১.মাটির অনুভূতি লাথিতে আর হালচাষে সকলের গোলাভর্তি হয়না সোনার ফসলে অমানবিক অর্থে একান্ত সামর্থে উত্তপ্ত পাথর পীচে হৃদয়ের মাখামাখিতে যা কিছু হয় কেবলই বেচে থাকার ভাড়ামি মাত্র অপরিচিত পৃথিবীর ধূলি মলিন অথচ পৃথিবীর ধূলো মাটিতে যুগে যুগে মাটির নিয়মে জন্মেছে সোনার স্বার্থক জীবন। এমনই অসহ পাথরের নীচে চাপা পড়লো বিশ্বস্ত হাত অকথ্য হল সর্বনিম্ন বেঁচে থাকা-সুস্থ ভালবাসা একে একে দু'চোখে ভাল করে দেখা মানুষের মুখ । প্রথম রাত্রির ফাগুন উৎসবের জের টেনে অনুমতি বিহীন সহবাসে ইতিহাস সিদ্ধ প্রসিদ্ধ লোকজ মন অন্ধকার চ'ষে চ'ষে কখন যে দুঃসময়ের নাম ধরে ডাকলো ষাট বছর, পেলনা সুসময়ের কাঙ্খিত স্বপ্নের আশ্রয় । কবে কার বিধিবদ্ধ পুরুষ নারী পেতেছে ফাঁদ এখানে আকাশমুখি বলাকার আগামী যুগের মানচিত্রের পরিচিত পথ মুছে গেছে প্রথাগত অনুমতি বিহীন শুভেচ্ছা সহ অপবাদের নিষিদ্ধ মানুষ হতে হতে এই পর্যন্ত সাত হাজার বছরের অমোছনীয় দাগে খুঁজি ইট ছিল কি পাথর ছিল ঘুম ছিল কি স্বপ্ন ছিল। ২.তীর্থ ভূমি স্বাধীনতারসূর্য সন্তানেরা তোমার অতন্দ্র প্রহরী জীবনেরপ্রতিউচ্চারণে - নিয়তপ্রনামকরি এই মুজিবনগরেরভ‚মি - পৃথিবীরচির বিষ্ময় -চিরঅক্ষয় - জীবনমরনেরতীর্থভ‚মি । শপথে স্বপ্নরঙিন চোখ- রক্তাক্তহলপ্রত্যাশিতগণতন্ত্রেরউর্বরবুক- সে মহাশোকপরমায়ুদিলআজন্ম বাঙালির বঞ্চিতহাজারইতিহাস । একটি রক্তাক্ত পতাকানীলআকাশে নতুনসুনীলআকাশ । সূর্য-রাঙা রক্ত-রাঙা একটি স্বদেশ - বাংলাদেশ -স্বর্গ আমারপুণ্যভ‚মি । এই মুজিবনগরেরঅমলিনধূলি-মাটি - পৃথিবীরচির বিষ্ময় -চিরঅক্ষয় - গর্বিত তীর্থ ভূমি- নবজীবনের দুর্ভেদ্য -একাত্তরেরঅপরাজেয় এক ঘাঁটি । ৩.বিজয়ের সুখ-দু:খ স্বদেশের উর্বর মাটি-কাদা-জলে মহা জীবনের শ্লোগান -আনন্দ মিছিল আতঙ্কের আকাশে -বুকভরা নি:শ^াসের বাতাসে হাজার হৃদয়ের জোয়ার ¯œাত -রক্ত ¯œাত বাংলাদেশ- গর্বিত ইতিহাস একটি পতাকার ঠিকানায় - ’আমার সোনার বাংলা -আমি তোমায় ভালবাসি’ । কিছু-কিছু বৈরী কালো ছাঁয়াতে- ’৭১ এর ধর্ষক রাজাকার - বর্বর খুনি পাকবাহিনীর অমানবিক হিং¯্রতা দুলে ওঠে আজও --বারবার জীবনের সাঁকো দুলিয়ে দেয় ’করোনা কাল’ - ঝাপ দিই কষ্টের ভয়াল ¯্রােতে- অমর বিজয়ের রক্তাক্ত পাল-দড়ি-হাল আমাদেরই শক্ত কোটি হাতে । ৪.বিজয়ের কোরাস ফুট পাথে-বধ্য ভ‚মিতে রক্তাক্ত মলিন মানুষের বঞ্চিত হাহাকার- ধর্ষনের শিরোনাম বিদ্ধ - সোনার বাংলাদেশ - শহীদ মিনার স্তব্ধতায় পাথর হল - নীরব অশ্রæ জমে-জমে - লাল-সবুজ পাতার শিশির -ছলছল-টলটল - নড়েনা রাবীন্দ্রিক ছন্দে - জাতীয় পতাকা - ভাগদড়িতে দুলে ওঠে আত্মহত্যার লাশ- এবং খুদিরাম- খুদিরাম হয় যৌতুক বিদ্ধ গৃহবধূ । বিজয়ের মুক্ত হাওয়ায়-হাওয়ায় ঝড় ওঠে - দ্বিগুন হয় -মধ্যবিত্ত বুকের ছাই চাপা আগুন বিজয়ের আনন্দ-গান ফাগুন-ফাগুন হোলী - অন্য রকম রক্তরাঙা-প্রতিশোধের-গুলিবিদ্ধ ’৭১ এর আগুন । এই স্বাধীনতা -এই বিজয় হাজার -হাজার প্রাণ -বলিদান প্রতিক্ষার দীর্ঘ রাত -গভীর অন্ধকার গড়িয়ে-গড়িয়ে - গুড়িয়ে-গুড়িয়ে। ফজলুল হক সিদ্দিকী: (জন্ম ১১ মার্চ ১৯৫৪) কবি ,গীতিকার ও প্রকৌশলী। ফজলুল হক সিদ্দিকীর জন্ম মেহেরপুরের ঐতিহ্যবাহী আমদহ গ্রামে ১১ মার্চ ১৯৫৪ সাল। স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : মেহেরপুর ষ্টেডিয়ামপাড়া -বাসা নং-১২৩, ওয়ার্ড নং-৯, মেহেরপুর| বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যে এমএ এবং ইন্জিনিয়ারিং-ডিপ্লোমা। পেশায় প্রকৌশলী। ফজলুল হক সিদ্দিকী কবি পরিবারে জন্মগত কবি। বংশানুক্রমে প্রপিতামহ : আকালী বিশ্বাস একজন গীতিকবি। পিতামহ : গোলাপ বিশ্বাস একজন গীতিকবি এবং পিতা: বদরউদ্দিন বিশ্বাস একজন গীতিকবি। মাতার নাম: মোছা: রুমিজান| ফজলুল হক সিদ্দিকী বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের গীতিকার। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: জলোচ্ছ্বাসের কবিতা, দুর্ভিক্ষের কবিতা, ময়নার ময়না তদন্ত, আধুনিক প্রেমের কবিতা, তসলিমা একটি নগ্ন নারীর নাম,ইকারুসের ডানায় ভেসে, কিছু নীল গল্প,ত্রিমোহনা, কাব্য সমগ্র-১,কাব্য সমগ্র-২, ও আধুনিক ভালোবাসার কবিতা। যৌথ প্রকাশনা ::ত্রিমোহনা,ত্রিনয়ন,দেয়াল ও শ্বেত কপোত ডানায় ভেসে সংগীত গ্রন্থ: চোখের জল বুকের তলে-১, চোখের জল বুকের তলে-২, চোখের জল বুকের তলে-৩ ও চোখের জল বুকের তলে-৪। উপন্যাস : গিনি সোনা, সতত: মা, বড় খোকা এবং ফটোগ্রাফার। গল্পগ্রন্থ : অগল্প (প্রামাণ্য নারী-পুরুষ) প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ: কবিতার মাটি ও আকাশ, মানুষে বিশ্বাস নেই আমার, ওভার টেলিফোন ও আমি একটু একা থাকতে চাই। ফজলুল হক সিদ্দিকীর ১৩ টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। নারী, প্রকৃতি-গণতান্ত্রিক মুক্তি ও সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে তার কবিতাশ্লিলতা-অশ্লিলতা-তার কবিতায় থাকলেও ঔচিত্য বোধের প্রেক্ষিতে তার কবিতা মানুষের মর্মের কথা বলে।