ভাষা আন্দোলনে বিশেষভাবে জড়িত ছিলেন মেহেরপুরের এডভোকেট আবুল হায়াত
গণমানুষের নেতা এডভোকেট আবুল হায়াত (১৯২২-১৯৮৭) মেহেরপুরের রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং তিনি ভাষা আন্দোলনে বিশেষভাবে জড়িত ছিলেন। সৈয়দ আমিনুল ইসলাম তার মেহেরপুরের ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,“তিনি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৮ সালে তিনি কুষ্টিয়া কলেজ ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।” এসময়ে তিনি ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর মহকুমা হিসেবে মেহেরপুরের অস্তিত্ব বিপর্যয়ের মুখে তিনি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তখন তিনি কুষ্টিয়া কলেজ ইউনিয়ন নেতা। তার নেতৃত্বে মেহেরপুরবাসীর একটি প্রতিনিধি দল সেসময়ে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জাকির হোসনের দেখা করেন এবং মেহেরপুরকে পুনরায় মহকুমা করার দাবি জানান। এর ফলে মেহেরপুর পুনরায় মহকুমা হিসেবে তার মর্যাদা ফিরে পায়।
পরে তিনি XvKv wek¦we`¨vjq †_‡K AvBb বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫১- 1952 সালে তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন। সেসময়েও তিনি ভাষা আন্দোলনে শরিক ছিলেন। ১৯৫১- 1952 সালে ঢাকাস্থ কুষ্টিয়া সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। 1952 mvj XvKv wek¦we`¨vjq †_‡K AvBb বিভাগ †_‡K এলএল বি ডিগ্রী নিয়ে AvBb †ckvq Ges mwµq ivRbxwZ‡Z hy³ nb|
এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। মেহেরপুরের সর্বস্তরের মানুষ তাই তাকে চিরকাল শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। ১৯৬২ সালে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (মেহেরপুর, গাংনী, দামুড়হুদা ও দৌলতপুর) নির্বাচিত হন। গবেষক-লেখক রফিকুর রশীদ তার মেহেরপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন , এডভোকেট আবুল হায়াত মেহেরপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এডভোকেট আবুল হায়াতের পিতার নাম আব্দুল জলিল বিশ্বাস। মাতার নাম লুৎফুননেছা। ১৯২২ সালে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর ইউনিয়নের গৌরিনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতা আব্দুল জলিল বিশ্বাসও অবিভক্ত নদীয়া জেলার বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আবুল হায়াত ছাত্র জীবনেই রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাশের পর ১৯৫২ সাল থেকে আইন পেশায় এবং সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন।
১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর একটি প্রাচীন প্রশাসনিক একক তথা মহকুমা হিসেবে মেহেরপুরের অস্তিত্ব বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ১৯৪৮ সালের প্রথমার্ধে মেহেরপুর মহকুমাকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। মেহেরপুর সদর থানাকে নব গঠিত কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গা মহকুমার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অপর থানা গাংনীকে কুষ্টিয়া সদর মহকুমার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। কিছুদিন পরে গাংনীকেও চুয়াডাঙ্গা মহকুমার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। মেহেরপুর থেকে মহকুমা সদর উঠে যাওয়ায় জনগণ দূর্ভোগের শিকার হতে থাকেন এবং মেহেরপুরে মহকুমা সদর প্রতিষ্ঠার দাবীতে অচিরেই ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। সৈয়দ আমিনুল ইসলাম তার মেহেরপুরের ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘এ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবুল হায়াত (তৎকালীন ছাত্রনেতা) ,আব্দুর রহিম, কিয়ামউদ্দিন খান, নলীনাক্ষ্য ভট্টাচার্য, সতিনাথ গোপ্তি, বিনয় মোক্তার, সাখাওয়াৎ মুনসী, ইদ্রিস আলী প্রমুখ। ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জাকির হোসেন কুষ্টিয়াতে সফরে এলে নেতৃস্থানীয় উক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধি দল তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে মেহেরপুরবাসীর দূর্ভোগ এবং মেহেরপুরে মহকুমা পুন:প্রতিষ্ঠার দাবীর কথা জানান। জনগণের দাবীর প্রেক্ষিতে মেহেরপুর পুনরায় মহকুমা হিসেবে তার মর্যাদা ফিরে পায়।’
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে মেহেরপুর থেকে নির্বাচিত হন এডভোকেট আব্দুল হান্নান। তাকে নির্বাচিত করতে আবুল হায়াত অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। এরপর তিনি মেহেরপুরে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সূচনা করেন।
গবেষক-লেখক রফিকুর রশীদ তার মেহেরপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থে(৪৪ পৃষ্ঠা) মেহেরপুরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে এডভোকেট আবুল হায়াতের ভূমিকার কথা বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ১৯৫৫সালে ডিসেম্বরে শেষ দিকে মেহেরপুর পৌরসভার কালচাঁদ মেমোরিয়াল হলে আওয়ামী লীগের বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়।এই বৈঠকে কুষ্টিয়ার কফিলউদ্দিন আহমেদ ও মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের ও কৃষক প্রজা পার্টির অনেক সদস্যদের উপস্থিতিতে ডা: জাফর আলীকে সভাপতি এবং ছহিউদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে আওয়ামী লীগের মেহেরপুর মহকুমা কমিটি গঠিত হয়। পরের বছর এডভোকেট আবুল হায়াতকে সভাপতি এবং মফিজুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে মহকুমা কমিটি পূন গঠিত হলে ছহিউদ্দিন সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬২ সালে এডভোকেট আবুল হায়াত (এমপিএ) প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (মেহেরপুর, গাংনী, দামুড়হুদা ও দৌলতপুর) নির্বাচিত হন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ থেকে। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি তিনি নিষ্ঠার সাথে বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে মেহেরপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ছিলেন পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন মেহেরপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি। ১৯৭৩-৭৫খ্রি. তিনি মেহেরপুর সাংগঠনিক জেলা আওয়ামী লীগের ১নং নির্বাহী সদস্য ছিলেন। ১৯৮৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আমরা মহান দেশ প্রেমিক ও রাজনীতিক এডভোকেট আবুল হায়াতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং মহান আল্লাহ-তায়ালার কাছে প্রার্থনা করছি, তাকে জান্নাতুল ফেরদেীস দান করা হোক। মেহেরপুরের মানুষ চিরকাল এই মহান নেতা ও সমাজসেবককে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
Tag: videos
No comments: