Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » মুর্শিদাবাদের নবাব আমলেে মেহেরপুরের আমদহ গ্রামে তিন কিলোমিটার দূরে সুড়ঙ্গপথে মেহেরপুর গড়ের পুকুরের বিপদে পাতালঘরে আশ্রয় গ্রহণ করিতেন ( একাশি পর্ব )




মুর্শিদাবাদের নবাব আমলেে মেহেরপুরের আমদহগ্রামেতিন কিলোমিটার দূরে সুড়ঙ্গপথে মেহেরপুর গড়ের পুকুরের বিপদে পাতালঘরে আশ্রয় গ্রহণ করিতেন ( একাশি পর্ব ) মুর্শিদাবাদের নবাব রাজু ঘোষানীর উত্তরাধিকারীরা দস্যুভয়-নিবারণের জন্য মেহেরপুর গড়ের পুকুরের জমিদার গড়বাড়ির প্রাসদের নীচে একটি 'পাতালঘর' নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন ; সেই পাতালঘর কিরূপ আমদহ গ্রামের প্রাসাদে বিস্তৃত ছিল, তাহা জানিবার উপায় নাই।বিপদের সম্ভাবনা দেখিলে তাঁহারা সপরিবার সুড়ঙ্গপথে পাতালঘরে আশ্রয় গ্রহণ করিতেন। রাজু ঘোষানীর বংশধররা দীঘি খনন করাইয়া তাহার পশ্চিম পার্থে পাতালঘর নির্ম্মাণ করাইলেও তাঁহারা সেখানে সর্বদা বাস করিতেন না; প্রায় তিন মাইল দক্ষিণে অবস্থিত আমদহ নামক গ্রামে তাঁহারা প্রাসদোপম বাসভবন নির্ম্মাণ করাইয়া সেই স্থানে বাস করিতেন । এখন সেখানে তাঁহাদের বাস্তৃভিটার চিহ্নমাত্র নাই : একটা জলাশয়ের ধারে একটি উচ্চ টিপি সেই অট্টালিকা অস্তিত্বের স্মৃতি বহন করিতেছে; কিন্তু প্রায় দুইশত বৎসর পূর্বে যেখানে প্রাসাদোপম অক্টালিকা ছিল-_সেই স্থানের অবস্থা দেখিয়া তাহা অনুমান করা কঠিন । মেহেরপুর জেলা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আমদহ গ্রামের স্থাপত্য নিদর্শন গুলোর অবস্থান। পরীখা ঘেরা আমদহ গ্রামের স্থাপত্য (Architecture of Amda Village) নিদর্শনর্শ স্থানেরআয়তন প্রায় ১ বর্গকিলোমিটার। আমদহ গ্রামের এই স্থাপত্য নিদর্শনর্শ লোকে রাজা গোয়ালাচৌধুরীর সাথে বগা দস্যুদের যুদ্ধে ধ্বংসপ্রা আবাসল হিসাবে মনে করা হয়।

বর্তমানে এই স্থানের তেমন কোন নিদর্শন অবশিষ্ট নেই তবে আমদহ গ্রামের স্থাপত্য মাটির নীচ থেকে প্রাপ্ত একটি প্রত্নতত্ব পুরাতন জেলা শাসকের ভবনের সামনে স্থাপিত রয়েছে।মেহেরপুর জেলা সদর থেকে ইজিবাইক বা রিকশায় চড়ে আমদহ গ্রামের স্থাপত্য দেখতে যেতে পারবেন।কৃষকরা এখন সেখানে ধান্য এবং অরহর, সর্ষ, ছোলা প্রভৃতি রবিশস্যের আবাদ করে | আমার ভ্রাতা শ্রীমান সুরেন্দ্রনাথ সেই টিপির ভিতর হইতে বিস্তর অনুসন্ধানের ফলে দুইখানি ইঞ্টক আবিষ্কার করিয়াছিলেন ; তাহাতে দেবনাগরী হরপে কাহারও নামের আদ্যক্ষর লিখিত ছিল । এই সকল স্থান প্রত্ুতত্ববিদ্গণের গবেষণার যোগ্য । শুনিয়াছি, গোয়ালা চৌধুরীদের আমদহের এই বাসভবনের সহিত মেহেরপুরস্থ উক্ত পাতালঘরেব যোগ ছিল । তাঁহারা সুড়ঙ্গপথে তাঁহাদের বাসভবন হইতে অন্যের অদৃশ্য ভাবে গড়ের পাতালঘরে যাইতে পারিতেন । দস্যুর আক্রমণ হইতে ধন-সম্পত্তি রক্ষা করিবার জন্য তাহারা তাঁহাদের টাকা, মোহর ও অলঙ্কারাদি উক্ত পাতালঘরে লুকাইয়া রাখিতেন । বিপদের সম্ভাবনা দেখিলে তাঁহারা সপরিবার সুড়ঙ্গপথে পাতালঘরে আশ্রয় গ্রহণ করিতেন, এরূপ কিংবদস্তীও বাল্যকালে শুনিতে পাইতাম ।নবাব বাহাদুর পরদিন প্রভাতে দেখিলেন, ঝড়-বৃষ্টি বন্ধ হইয়াছে, আকাশ নির্মল, আর কোন দুর্যোগের আশঙ্কা ছিল না । নবাব রাজুর নিকট বিদায় গ্রহণের সময় রাজুকে নিজের পরিচয় দিয়া তাহার উপকার করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন । এ কাল হইলে রাজু তাহার সহৃদয়তার পুরস্কার স্বরূপ হয়ত একখানি “সার্টিফিকেট অফ অনর' বা তাহার পুত্র “রায় বাহাদুর অথবা এরকম খেতাব ছাড়া সম্বর্ধিত হইত ; কিন্তু সে কালের নবাব-বাদশাহদের বুদ্ধি কিছু স্থুল ছিল, তাঁহাদের পুরস্কার দানের প্রণালীও বিভিন্ন রকম ছিল । নবাব বাহাদুরের আদেশ শুনিয়া রাজু ঘোষানী করজোড়ে নিবেদন করিল, তাহার পরম সৌভাগ্য যে, সে এক রাত্রি নবাব বাহাদুরের সেবা করিয়া ধন্য হইতে পারিয়াছিল ; সে গৃহস্থের কর্তব্য পালন করিয়াছিল । সে সাধারণ গৃহস্থ রমনী, নবাব বাহাদুরের মর্যাদা রক্ষা করিতে পারে, সে শক্তি তাহার নাই ; এ জন্য সে কুষ্ঠিত। সে কোনরূপ পুরস্কার গ্রহণে সম্মত হইল না। যাহা হউক, অনেক পীড়াপীড়ির পর সে অবশেষে বলিল, তাহার বিস্তর গরু-বাছুর ও মহিশ আছে, কিন্তু সেগুলিকে সে চরাইতে পারে, এরূপ বিস্তৃত গোচারণ ক্ষেত্র নাই । নবাব ইচ্ছা করিলে তাহাকে গোচারণের উপযুক্ত কিছু জমী দান করিতে পারেন । সেই জমীতে তাহার গরুর পাল চরিয়া বেড়াইবে । * অতঃপর নবাব বাহাদুরের আদেশে রাজু ঘোষানীর গো-চারণের জন্য বিনা করে একটি বৃহৎ পরগণা প্রদত্ত হইল ; রাজু ঘোষানীর নামানুসারে এখন সেই পরগণা “রাজপুর পরগণা' নামে পরিচিত । রাজু ঘোষানী বিনা করে এই সুবিস্তীর্ণ ভূসম্পত্তি পাইয়া অল্পদিনে বহু অর্থের অধিকারিণী হইল । তাহার আর্থিক অবস্থা পূর্বেই স্বচ্ছল ছিল, এইবার সে রাজার মত সমারোহে বাস করিতে লাগিল । রাজু ঘোষানীর মৃত্যুর পর তাহার উত্তরাধিকারীরা “গোয়ালা চৌধুরী' নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন । তাঁহারা মেহেরপুরে একটি গড় নির্ম্মাণ করেন । সেই গড় এখন বর্তমান নাই, কিন্তু যে স্থানে সেই গড় নির্মিত হইয়াছিল, সেই স্থান এখনও “গড়বাড়ী' নামে পরিচিত । তাহা “গড়ের পু্করিণী' নামে পরিচিত এবং এখন তাহা মিউনিসিপালিটার সম্পত্তি, “রিজার্ভড ট্যাঙ্ক' । আমাদের বাল্যকালে এই গড়ের কিয়দংশ খুড়িয়া দেখা হইয়াছিল । শুনিয়াছিলাম, সেই সময় মেহেরপুরের কোন ইংরাজ সিভিলিঘান ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে এই কার্যা আরম্ভ হইয়াছিল ; কিন্তু তিনি সেই কাজটি শেষ করিয়া যাইতে পারেন নাই । তিনি কে, মিঃ এফ, এ, শ্যাক. কি, জে, ডি, এগু্ারসন-_তাহা স্মরণ নাই ; মিঃ এগুারসন বঙ্গসাহিত্যে সুপণ্ডিত ছিলেন ; তিনি ইন্দ্র সেন” বলিয়া নিজের নাম স্বাক্ষর করিতেন এবং ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরিত্যগ করিয়া অক্সফোর্ডে আমাদের দেশীয় ভাষার অধ্যাপক নিযুক্ত হইয়াছিলেন ৷ তিনি সদাশয় ও দেশীয়দের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন রাজ-পুরুষ ছিলেন। আমরা বাল্যকালে গড়-বাড়ীর ভূগর্ভস্থ অংশ কিছু কিছু পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছিলাম | ছোট ছোট পাতলা ইট বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত ছিল । তাহা দেখিয়া পাতালঘরের ছাদ বলিয়াই মনে হইয়াছিল, কিন্তু ছাতের নীচে যে অংশ ছিল, তাহা কোন দিন খুঁড়িয়া দেখা হয় নাই। দীর্ঘকাল তাহা একই ভাবে পড়িয়াছিল। এতকাল পরে তাহা খুড়িয়া দেখিলে পাতালঘরের অনাবিষ্কৃত অংশের সন্ধান হইতে পারে ; কিন্তু সে জন্য আর কেহ কোন চেষ্টা করেন নাই । বর্তমান মিউনিসিপাল অট্রালিকার অদূরে 'কালাচাঁদ মেমোরিয়াল' হলের পূর্বে যেখানে এখন একটি ছোটখাট কাঁটাল বাগানের অস্তিত্ব বিরাজিত, এবং যাহার ছায়ায় মিউনিসিপালিটীর অনুগ্রহে একটি ক্ষুদ্র উপনিবেশ স্থাপন করিয়াছে, সেই স্থানে মাটীর নীচে উল্লিখিত পাতালঘরের অস্তিত্ব বর্তমান ছিল | এখন তাহা সমভূমিতে পরিণত হইয়াছে ।।”বৃটিশ আমলের খ্যাতনামা লেখক, দীনেন্দ্রকুমার রায়: গ্রন্থনা:অধ্যক্ষ মহসীন আলী আঙ্গুঁর ,সম্পাদক ও প্রকাশক, মুজিবনগর খবর ডট কম,মেহেরপুর।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply