Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » » ১৮৬৯ –১৯৪৩) বৃটিশ আমলে মেহেরপুর মুখার্জী পাড়ার মিষ্টির একমাত্র উৎস ছিল মানুষের খেজুর গুড় গৃহস্থ প্রত্যেক গাছের খাজানা স্বরূপ দুই সের খেজুর গুড় পাইত ( তেয়াত্তর পর্ব)




১৮৬৯ –১৯৪৩) বৃটিশ আমলে মেহেরপুর মুখার্জী পাড়ার মিষ্টির একমাত্র উৎস ছিল মানুষের খেজুর গুড় গৃহস্থ প্রত্যেক গাছের খাজানা স্বরূপ দুই সের খেজুর গুড় পাইত ( তেয়াত্তর পর্ব)

মেহেরপুর মুখার্জী পাড়া নবীন বাগ্দী শ্বীতকালে গুড় প্রস্তুত করিবার জন্য শতাধিক খেজুরগাছ 'কাটিত' ।একখানি বাঁশের বাঁকের দুই ধারে রসপূর্ণ ঠিলিগুলি ঝুলাইয়া লইয়া সে তাহার “বাইনে' উপস্থিত হইত | গৃহস্থ প্রত্যেক গাছের খাজানা স্বরূপ দুই সের খেজুর গুড় পাইত । সেই দুই সের গুড় দিয়া সে কার্তিক মাস হইতে ফাল্গুনের শেষ পর্যন্ত রস লইত | তিন দিন রস গ্রহণের পর তিন দিন গাছকে বিশ্রাম বা “জিরেন' দেওয়া হইত । চতুর্থ দিন যে রস সঞ্চিত হইত, তাহাই “জিরেন কাটে'র রস। সেই রস অতি মধুর | খেজুরের চারা-গাছের রস অপেক্ষা পরিণত বয়স্ক বৃক্ষের রস অনেক অধিক মিষ্ট ; তাহার পরিমাণও অধিক হইত । কোন কোন সতেজ গাছে এক রাত্রিতে প্রায় এক ঠিলি রস সঞ্চিত হইত । নবীন শীতকালে বেলা প্রায় তিনটার সময় গাছ বাঁধিতে আসিত | একগাছ৷ মোটা দড়ি মালার মত তাহার দুই কাঁধে ঝুলিত ; মনে হইত, তাহার উভয় স্কন্ধ বেষ্টন করিয়া একটা “দাঁড়াস' (টোঁড়া) সাপ ঝুলিতেছে। সে মালকৌচা আঁটিয়া কাপড় পরিত এবং অদ্ধহস্ত বিস্তৃত লোমাবৃত ছাগচম্ম কোমর-বন্ধের মত কোমরে জড়াইত ; তাহাতে আবদ্ধ চর্ম্মনি্মিত একটি থলি তাহার পশ্চাতে ঝুলিত । সেই থলির ভিতর বক্রমুখ তীক্ষধার কাটারী ও দুই চারিটি কঞ্চির নলি থাকিত । কঞ্চি চিরিয়া পাঁচ ছয় ইঞ্চি দীর্ঘ এক একটি নলি প্রস্তুত করা হইত । উক্ত থলির সঙ্গে কাষ্ঠনিম্মিত একটা বাঁকা 'ছুক' থাকিত ; নবীন খেজুরগাছে যে বিলি বাঁধিত, সেই বিলির গলার দড়ি সেই হুকে বাধাইয়া সে গাছে উঠিত কিন্তু গাছে উঠিবার সময় দুই হাত লম্বা একটি বংশদণ্ড তৎসংলগ্ন দীর্ঘরজ্জু তাহার সঙ্গে থাকিত । তাহার পর কাঁধে যে মোটা দড়ি থকিত, তাহা কাঁধে লইয়াই সে গাছে উঠিত : তাহার পর দুই হাত দীর্ঘ বংশদণ্ডটি গাছের সঙ্গে আড় করিয়া বাঁধিয়া তাহার দুইপাশে দুই পা রাখিয়া দাঁড়াই, এবং সেই মোটা দড়ি দিয়া গাছের সঙ্গে শরীর আবদ্ধ করিত ; সেই সময় সে পশ্চাতে ঈষৎ হেলিয়া পড়িত ও সেই ভাবে দাঁড়াইয়া ঠোঙ্গা হইতে কাটারী বাহির করিয়া গাছের হুক অপসারিত করিত । কিছুকাল চাঁচিবার পরস্থল “চৌচা অপসারিত হইলে ক্ষতস্থানে বিন্দু বিন্দু রস দেখা যাইত ; তখন সে বাঁশের নলিটি ঢালু করিয়া তাহাতে বিধাইয়া দিত । অতঃপর চামড়ার ঠোঙ্গাসংলগ্প আংটা হইতে মাটীর ঠিলি খুলিয়া লইয়া রজ্জুদ্বারা তাহা নলির নীচে ঝুলাইয়া দিত । নলি দিয়া রস গড়াইয়া বিন্দু বিন্দু করিয়া তাহা সারারাত্রি সেই ঠিলিতে সঞ্চিত হইত । ঠিলিটি নলির মুখ হইতে কোন কারণে সরিয়া যাইতে পারে, এই আশঙ্কায় সে খেজুর গাছের পশ্চাঘর্তী শাখা টানিয়া সম্মুখে আনিয়া তাহা চিড়িয়া তন্দ্ারা ঠিলির গলা গাছের সঙ্গে বাঁধিয়া রাখিত । তাহার ঠোঙ্গায় কখন কখন চাকা চাকা করিয়া কাটা মানকচু থকিত ; সে তাহা কোন কোন ঠিলির ভিতর ফেলিয়া রাখিত । সন্ধ্যার পর খ্রামের দুষ্ট ছেলেরা কোন খেজুর গাছে উঠিয়া রস চুরি করিত ; কিন্তু ঠিলিতে মানকচু থাকিলে কেহ সেই রস চুরি করিত না । মানকচু-সিক্ত রস পানের অযোগ্য | তাহা পান করিলে গলা কুট্কুটু করে। নবীন রাত্রিশেষে অন্ধকার থাকিতেই খেজুর গাছ হইতে ঠিলি খুলিয়া লইয়া যাইত । একখানি বাঁশের বাঁকের দুই ধারে রসপূর্ণ ঠিলিগুলি ঝুলাইয়া লইয়া সে তাহার “বাইনে' উপস্থিত হইত | সে ঠিলি সংগ্রহের জন্য গাছে উঠিবার সময় তাহার “ইউনিফত্্' সঙ্গে রাখিত না কেবল গাছ কাটিবার বা ঠেঁচিবার সময় এ সকল সরঞ্জাম সঙ্গে রাখিবার প্রয়োজন হইত । সে বাঁকের দুই দিকে দশ বারোটা ঠিলি ঝুলাইয়া লইতে পারিত । রস-সংগ্রহের জন্য এই সময় তাহাকে দুই একটি এপ্রেন্টিস বা সহকারী রাখিতে হইত ; তাহরাও ঠিলি পাড়িয়া বাইনে লইয়া আসিত, পারিশ্রমিক স্বরূপ কিছু কিছু গুড় পাইত । তাহারা নানাভাবে নবীনকে সাহায্য করিত । আমরা তখন বালকমাত্র ; নবীনের বাইনের টাট্কা গুড়ের লোভ সংবরণ করিতে পারিতাম না । বেলা আটটা না বাজিতেই আমরা পাড়ার একপাল ছেলে শীতবস্ত্রে সববঙ্গি আচ্ছাদিত করিয়া নবীনের বাইনে উপস্থিত হইতাম । তখনও সুলভ মূল্যের 'র্যাপার' বা রেল যারা পানিলা দা রেস ররর ছল নাগুড় প্রস্তুতের স্থানটির নাম বাইন | একটি বড় গর্ত খুঁড়িয়া রস জ্বাল দেওয়ার জন্য সেই 'বাইনে' উনন করা হইয়াছিল । বাইনের চারিদিকে বাঁশের খুটি, তাহার উপর খর্জুর-পত্রের আচ্ছাদন । উননের একপাশে রসের ঠিলিগুলি শ্রেণীবদ্ধভাবে সাজাইয়া রাখা হইত । নবীন উননে একখানি বৃহৎ মাটীর 'খোলা' চাপাইয়া তাহাতে সকল ঠিলির রস ঢালিয়৷ দিত তাহার পর শুক আস্যাওড়া, ভাট, কালকাশিন্দা প্রভৃতি আগাছা ছারা রস জ্বাল দিত । এই গুলপগুলি সে নানা স্থান হইতে কাটিয়া আনিয়া শুকাইয়া বাইনে সঞ্চিত রাখিত । রস অগ্রির উত্তাপে ঈষৎ ঘন ও লোহিতাভ হইলে তাহাকে “তাতরসা' বলা হইত । পল্লীরমণীদের অনেকে ঘটী আনিয়া নবীনের নিকট হইতে সেই রস চাহিয়া লইয়া যাইত । উহা ছ্বারা উৎকৃষ্ট পায়স হয়। শীতকালে অনেকেই রসের পায়স রাঁধিত। দুই ঘণ্টার মধ্যে খোলার রস ঘন গুড়ে পরিণত হইত । গুড় ঘন হইলে নবীন খোলা নামাইয়া তাহার ভিতর গুড়ের 'বীজ' দিত । এ 'বীজ' শুষ্ক গুড় ভিন্ন অন্য কিছুই নহে। খেজুর-শাখার দণ্ড ছ্বারা সেই শু গুড় খোলার গায়ে মাড়িয়া খোলার গুড়ের সহিত তাহা মিশ্রিত করিলে খোলার গুড় বেশ ঘন হইত | তখন নবীন ঠিলিগুলির মুখ একখানি ময়লা কাপড় দিয়া ঢাকিয়া এক এক হাতা গুড় ঠিলির মুখের কাপড়ের উপরে ঢালিয়া দিত, কয়েক মিনিটের মধ্যে তাহা জমিয়া শক্ত হইত | বাতাসার আকার-বিশিষ্ট সেই গুড় “সরাগুড়' বা 'গুড়মুচি' নামে প্রসিদ্ধ । নবীনের গুড় ভ্বাল দেওয়া শেষ হইলে সে আমাদের পাতা আনিতে বলিত ; আমরা জামাল-কোটার পাতা সংগ্রহ করিয়া তাহাকে ঘিরিয়া দাঁড়াইতাম । সে প্রত্যেক পাতায় অল্প-পরিমাণ গুড় দান করিত | আমরা পরম তৃপ্তির সহিত তাহা লেহন করিতে করিতে বাড়ী ফিরিতাম । ”বৃটিশ আমলের খ্যাতনামা লেখক, দীনেন্দ্রকুমার রায়: গ্রন্থনা:অধ্যক্ষ মহসীন আলী আঙ্গুঁর ,সম্পাদক ও প্রকাশক, মুজিবনগর খবর ডট কম,মেহেরপুর।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply