রক্তঃ
মানুষের শরীরের রক্ত নালিকাগুলোর মাঝে দিয়ে নিরন্তন প্রবাহমান লাল বর্ণের, সামান্য ক্ষারীয়, চটচটে, লবণাক্ত, অসচ্ছ প্রকৃতির তরল যোজক টিস্যুকে রক্ত বলে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে প্রায় ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্ত সামান্য ক্ষারীয়। রক্তে নানা ধরনের অজৈব লবণ উপস্থিত থাকে যার ফলে এর স্বাদ নোনতা। রক্তের উপাদানঃ সেন্ট্রিফিউগাল নামক যন্ত্রে মিনিটে তিন হাজার বার করে ত্রিশ মিনিট ঘুরালে রক্ত দুটি প্রধান স্তরে বিভক্ত হয়ে পরে। হালকা হলুদ বর্ণের একটি অংশ থাকে যাকে রক্তরস বা প্লাজমা বলে। বাদবাকি গাঢ়তর অংশকে রক্তকণিকা বলে। রক্তে রক্তরস ও রক্ত কণিকার শতকরা পরিমাণ যথাক্রমে ৫৫% ও ৪৫%। সাধারণ ভাবে রক্তকণিকা গুলো রক্তরসে ভাসতে থাকে। রক্তে লোহিত রক্তকণিকা বেশি পরিমাণে থাকার কারণে রক্ত লাল হয়ে যায়। রক্তরস বা প্লাজমাঃ প্লাজমা বা রক্ত রস হচ্ছে রক্তের হালকা হলুদ অংশ। রক্ত রসে পানির পরিমাণ ৯০-৯২% এবং কঠিন পদার্থ রয়েছে ৮-১০%। রক্তরসে কঠিন পদার্থের জৈব ও অজৈব উপাদানের শতকরা পরিমাণ যথাক্রমে ৭-৯% এবং ০.৯%। কয়েক প্রকারের গ্যাস ও রক্তরসে পাওয়া যায়। রক্তরসের কাজঃ রক্তে বিদ্যমান রক্তকণিকা সহ অন্যান্য দ্রবীভূত পদার্থ পরিবহনে প্লাজমা কাজ করে। রক্ত যে তরল পদার্থ এটা রক্ষার্থে প্লাজমা কাজ করে। পরিপাকের ফলে যে খাদ্যসার উৎপন্ন হয় তা রক্তের প্লাজমায় দ্রবীভূত হয়ে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে বাহিত হয়। শরীরের টিস্যু থেকে যেসকল বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয় তা রেচনের জন্য বৃক্কে পরিবহন করে। সামান্য পরিমাণ অক্সিজেন ও রক্ত রসের মাধ্যমে বাহিত হয়। প্লাজমার মাধ্যমে হরমোন, এনজাইম, লিপিড বিভিন্ন অঙ্গে বাহিত হয়। রক্তে অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে রক্তরস। রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান পরিবহন করে। যকৃত ও পেশি থেকে উৎপন্ন তাপ শক্তিকে সমগ্র দেহে পরিবহন করে দেহের তাপের সমতা রক্ষা করতে পারে। রক্তকণিকাঃ রক্তরস বা প্লাজমায় যেসব কোষ ভাসতে থাকে তাদেরকে রক্তকণিকা বলা হয়। ইহা তিন প্রকার। যথা- লোহিত রক্তকনিকা, শ্বেত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা। লোহিত রক্তকণিকা বা এরিথ্রোসাইটঃ মানব দেহের পরিণত লোহিত রক্তকণিকা গোল, দ্বিঅবতল হয়ে থাকে। এতে নিউক্লিয়াস থাকে না এবং দেখতে চাকতির মতো যার রং লাল। পূর্ণবয়স্ক পুরুষের প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে রক্ত কণিকার সংখ্যা ৫০ লাখ এবং স্ত্রী দেহে ৪৫ লাখ। ভ্রুণ দেহে ৮০-৯০ লাখ এবং শিশুদেহে ৬০-৭০ লাখ। প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা ৫০ লাখ এর চেয়ে ২৫ শতাংশ কম হলে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। কিন্তু এ সংখ্যা কোন কারণে ৬৫ লাখের বেশি হলে তাকে পলিসাইথেমিয়া বলে। হিমোগ্লোবিনের হিম গ্রুপের জন্যই রক্ত লাল দেখায়। অস্থি মজ্জায় অবস্থিত স্টেম কোষ থেকে লোহিত রক্ত কণিকার জন্ম হয়। এরা ৪ মাস পর্যন্ত বাঁচে। লোহিত রক্তকণিকা যকৃত ও প্লীহায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। লোহিত রক্ত কণিকার কাজঃ লোহিত রক্তকণিকা তে হিমোগ্লোবিন থাকে। এই হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে অধিকাংশ অক্সিজেন দেহের বিভিন্ন কোষে পরিবহন করে এবং সামান্য পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড ও পরিবহন করে। রক্তের সান্দ্রতা ও ঘনত্ব রক্ষা করে। রক্ত গ্রুপিংয়ের জন্য দায়ী অ্যান্টিজেন লোহিত রক্ত কণিকায় থাকে। লোহিত রক্তকণিকা রক্তে বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন উৎপন্ন করে। রক্তের অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করে। শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইটঃ মানুষের শরীরের পরিণত শ্বেত কণিকার হিমোগ্লোবিন থাকে না তবে নিউক্লিয়াস থাকে যা নিঃসন্দেহে অনিয়তাকার বড় কোষ। প্রকৃতপক্ষে শ্বেত রক্তকণিকা বর্ণহীন। তবে এতে কোন রঞ্জক পদার্থ থাকে না। ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংস করতে পারদর্শী এই কণিকা। মানুষের শ্বেত রক্ত কণিকার নির্দিষ্ট আকার নেই। মানুষের শরীরের প্রতি ঘনমিলিমিটারে গড়ে ৭৫০০ শ্বেত রক্তকণিকা থাকে। শিশু ও অসুস্থ মানুষের শরীরে ইহা বেড়ে যেতে পারে। গঠনগতভাবে ও আকৃতিতে শ্বেত রক্তকণিকা দুই প্রকার। যথা- দানবিহীন বা অ্যাগ্রানুলোসাইট এবং দানাদার বা গ্রানুলোসাইট। দানাবিহীন শ্বেত রক্তকণিকা আবার দু প্রকার। যথা-লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট। লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং কিছু অনুজীব ধ্বঃস করে। মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে রোগ জীবাণু ভক্ষন করে। দানাদার শ্বেত রক্তকণিকাকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-ন নিউট্রোফিল, ইউসিনোফিল এবং বেসোফিল। শ্বেত রক্তকণিকার কাজঃ লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং কিছু অনুজীব ধ্বঃস করে। মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে রোগ জীবাণু ভক্ষন করে। নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ করে। ইউসিনোফিল দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। বেসোফিল হেপারিন নিঃসরণ করে রক্তকে রক্ত নালীর মধ্যে জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে এবং হিস্টামিন নিঃসরণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইটঃ থ্রম্বোসাইট বা অনুচক্রিকা অন্যান্য রক্তকণিকার তুলনায় ক্ষুদ্রতম। দেখতে গোল, ডিম্বাকার রডের মতো দানাদার কিন্তু নিউক্লিয়াস বিহীন। পরিণত মানবদেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তের থ্রম্বোসাইট এর সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ। অসুস্থ শরীরে অনুচক্রিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। এতে প্রোটিন ও প্রচুর পরিমাণে সেফালির নামক ফসফোলিপিড থাকে। কিছু বিজ্ঞানীর মতে লাল অস্থি মজ্জার বড় মেগাক্যারিওসাইট থেকে অনুচক্রিকার উৎপত্তি আবার কিছু বিজ্ঞানী মতে শ্বেত রক্তকণিকা থেকে থ্রম্বোসাইট সৃষ্টি। অনুচক্রিকা সাধারণত পাঁচ থেকে দশ দিন বাঁচে। আয়ু শেষ হলে এন্ডোথেলিয়াল কোষে বিনষ্ট হয়। অণুচক্রিকার কাজঃ ক্ষতস্থানে হিমোস্ট্যাটিক প্লাগ গঠন করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে বা রক্ত তঞ্চন ঘটায়। রক্তনালীর ক্ষতিগ্রস্ত এন্ডোথেলিয়াল আবরণ পুনরায় গঠন করে। সেরাটনিন নামক রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন করে যা রক্তনালীর সংকোচন ঘটিয়ে রক্তপাত হ্রাস করে। ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কার্বন কণা, ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ও ভাইরাসকে ভক্ষন করে।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: