ইরানে ১৯৭৯ সালে শাহের পতন কীভাবে হয়েছিল? ং ইসলামি বিপ্লবকে দেশটির ইতিহাসে এক মোড়বদলকারী ঘটনা হিসেবে ধরা হয়। আয়াতোল্লাহ খোমেনি ফ্রান্সে তার নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফিরে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল সেটি। যুগান্তকারী ইসলামি বিপ্লবের কারণে প্রায় আড়াই হাজার বছর ক্ষমতায় থাকার পর ইরানের রাজবংশের পতন ঘটে ১৯৭৯ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি।
ইরানে একচ্ছত্র শাসন করা রাজবংশের এই পতন আয়াতোল্লাহ খোমেনির হাতেই ঘটে। কিন্তু এর আগে বেশ কয়েকটি ঘটনা ইরানের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং পারস্য রাজত্বের আড়াই হাজার বছরের শাসনকে পরিসমাপ্তির দিকে নিয়ে যায়। রেজা শাহ পাহলভি’র সিংহাসনে আরোহন শাহ বংশের সবশেষ শাসক ছিলেন মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। রাজধানী তেহরানে ১৯১৯ সালের ২৬শে অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ইরানের ভবিষ্যত শাহকে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয় সুইজারল্যান্ডে। সেখানেই তিনি তার প্রাইমারি স্কুলের পাঠ শেষ করেন। এরপর হাইস্কুলের ডিগ্রি নিয়ে তিনি ১৯৩৫ সালে ইরানে ফিরে আসেন। পরর্বতীতে তেহরানের সামরিক একাডেমিতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৩৮ সালে। এরপর তিনি বিয়ে করেন ১৯৩৯ সালে মিশরের রাজার বোনকে। তবে ১৯৪৯ সালে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। তিনি দ্বিতীয় বিয়েটি করেন ১৯৫০ সালে আর তৃতীয় বিয়ে ১৯৫৯ সালে। পশ্চিমা দেশগুলোকে পছন্দ করতেন মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। আর পশ্চিমা দেশগুলোও চাইতো তাদের মতো কেউ একজন ইরানের শাসক হোক। তার প্রথম তিনটি বিয়ে নিয়ে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ গণমাধ্যম। মোহাম্মদ রেজা পাহলভি তার ২২তম জন্মদিনের আগেই ১৯৪১ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর সিংহাসনে বসেন। সে সময় অ্যাংলো সোভিয়েত বাহিনী তার পিতা রেজা শাহকে জোরপূর্বক ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সঙ্গে রেজা শাহের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারা রেজা শাহকে পদত্যাগে বাধ্য করলেও কার্যকর বিকল্পের অভাবেই তার ছেলে মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে সিংহাসনে বসায়। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক সমস্যা ও খাদ্য সংকটের মতো পরিস্থিতির মধ্যেই রাজত্ব শুরু করেন শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। পুত্র হিসেবে পিতার সংস্কার নীতি অব্যাহত রেখেছিলেন শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। বিশ্লেষকদের মতে, তার শাসনামলে ইরানে নারীদের অর্জন ছিল উল্লেখযোগ্য। সে সময় তাদের উচ্চশিক্ষা, পেশাগত উৎকর্ষ, ভোটাধিকার, সরকারি দপ্তরের দায়িত্ব, পুরুষের সমান বেতনের আইন, স্বাস্থ্যসেবা ও সন্তান নেওয়া বা না নেওয়ার অধিকার ছিল। নারীদের বিষয়গুলো দেখভালের জন্য মন্ত্রিসভায় পদও রাখা হয়েছিল, যা ছিল বিশ্বে দ্বিতীয়। নারীরা কেমন পোশাক পরবেন, তা তারা নিজেরাই পছন্দ করতে পারতেন। ইরানের ১৯৬৭ সালের পারিবারিক সুরক্ষা আইন এবং পরর্বর্তীতে ১৯৭৫ সালে এ আইনের সংশোধিত রূপ ছিল ইসলাম বিশ্বে এ ধরনের সবচেয়ে উদার আইনগুলোর অন্যতম। এই আইনে সমতা রক্ষা করে নারীর বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ ও উত্তরাধিকার নিশ্চিত হয়েছিল। বহুবিবাহও বহুলাংশে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এতসব সংস্কার কাজের মধ্যেও বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে ধীরে ধীরে জনসমর্থন হারান রেজা পাহলভি। সাংবিধানিক সম্রাট হিসেবে কাজ করার কথা ছিল তার। কিন্তু তারপরেও তিনি সরকারী নানা বিষয়ে নিজেকে জড়িয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর কাজের বিরোধিতা করেছেন। তিনি নেতৃত্বমূলক কাজের তুলনায় কৌশলে বেশি বিশ্বাসী ছিলেন। সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানোর দিকে মনোনিবেশ করেন এবং রাজতন্ত্রের প্রধান শক্তির ভিত্তি হিসেবে সেনাবাহিনী রাজকীয় নিয়ন্ত্রণে থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন তিনি। ক্ষমতা গ্রহণের সময় তার বয়স ছিল কম। কমবয়সী শাহ পরিপক্ক মন্ত্রীদের পরামর্শ তেমন নিতেন না। সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তিনি। ইরানে ১৯৪৯ সালে তাকে হত্যার একটি পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। এরপর তিনি সোভিয়েতপন্থী দল তুদেহ পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে তার সাংবিধানিক ক্ষমতারও সম্প্রসারণ ঘটে। আঞ্চলিক অস্থিরতা আর স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে শাহ নিজেকে পশ্চিমের অপরিহার্য মিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝান যে ইরানে মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় তার কোনো বিকল্প নেই। পশ্চিমাদের নজর ছিল তেলের খনিগুলোর দিকে ইরানে যে ইসলামি বিপ্লব ঘটেছিল তার সূচনা হয়েছিল ১৯৫৩ সালের অভ্যুত্থানে। বিশ্লেষকদের মতে, ওই অভ্যুত্থান ইরানের রাজনৈতিক ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর ইরানের ভূখণ্ডে প্রচুর তেল সম্পদ আবিষ্কার হয়, যা একসময় ইরানের অন্যতম প্রধান একটি সম্পদ হয়ে দাঁড়ায়। ইরানের ভূখণ্ডে এত তেল সম্পদ আবিষ্কারের মূলে ছিল বিভিন্ন ব্রিটিশ কোম্পানি। ফলে যত তেলের খনি আবিষ্কার হয়েছে তার অধিকাংশের মালিকানা ছিল ব্রিটিশদের হাতে। এসব তেল বিক্রির টাকার কোনো উপকারিতা পেতেন না ইরানের সাধারণ নাগরিকরা। অন্যদিকে ইরানের শাহ বংশ বিলাসী জীবনযাপন করছে এবং ব্রিটিশদের কাছ থেকে নানাবিধ সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে চলেছে। পশ্চিমারাও নিজেদের নানা সুবিধা আদায় করে নিতে পারতো ইরানের সম্রাটের কাছ থেকে। ওই সময়ে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আবির্ভাব ঘটে মোহাম্মদ মোসাদ্দেকের। তিনি শাহের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে চেষ্টা করেন। তেল সম্পদ জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এমন জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় ইরানিদের বিপুল সমর্থন পেয়ে পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয় পান মোহাম্মদ মোসাদ্দেক। পছন্দের শাসক রেজা পাহলভি ইরানের সিংহাসনে থাকলেও পশ্চিমাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ান দেশটির তৎকালীন জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক। কারণ তার জয়ের ফলে ইরান থেকে ব্রিটেন ও আমেরিকায় স্বল্প দামে তেল আমদানির বিষয়টি হুমকির মুখে পড়ে। মোসাদ্দেক দৃঢপ্রতিজ্ঞ ছিলেন যে তেলের একটা বড় অংশ ইরানের জনগণের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। এ জন্য তিনি এ্যাংলো-ইরানিয়ান তেল কোম্পানিটি জাতীয়করণ করেছিলেন - যা পরিচালনা করতো ব্রিটিশরা। এই সিদ্ধান্ত ক্ষিপ্ত করে তোলে ব্রিটেনকে। ক্রুদ্ধ ব্রিটেন ইরানের তেল উৎপাদন ও রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তখন স্নায়ুযুদ্ধের যুগ। লন্ডন থেকে ওয়াশিংটনকে এটা বোঝানো হয় - এমন ঝুঁকি আছে যে ইরান হয়তো কমিউনিস্ট শিবিরে যোগ দিতে পারে। তখন আমেরিকা সিদ্ধান্ত নেয় যে এ ব্যাপারে তাদের কিছু একটা করতে হবে। ইরানের শহুরে জনগোষ্ঠীর মধ্যে মোসাদ্দেকের প্রতি জোর সমর্থন ছিল। কিন্তু ইরানী সমাজের কিছু শক্তিশালী অংশের সাথে তার একটা বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছিল। সিআইএ বুঝতে পারলো যে ইরানের শাহ ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব উস্কে দিয়ে সহজেই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে। প্রথম দফা অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়, শাহ তার স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে বাগদাদ চলে যান। তবে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতির মধ্যে দ্বিতীয় দফা অভ্যুত্থানে মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ক্ষমতাচ্যুত হন। প্রধানমন্ত্রী হন জেনারেল জাহেদি। ইরানের তৎকালীন জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেক ১৯৫৩ সালের অভ্যুত্থানে উৎখাত হয়েছিলেন, আর ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। এই অভ্যুত্থানের পেছনে কলকাঠি নেড়েছিল মার্কিন ও ব্রিটিশ দুই গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ ও এম আই সিক্স। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন চাইছিল যেন তেল সমৃদ্ধ দেশটির সর্বময় নিয়ন্ত্রণ পশ্চিমা সমর্থক শাহের হাতেই থাকে আর সেটিই অর্জন হয়েছিল। অভ্যুত্থানের পর ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন। নিজেকে ‘সম্রাট’ (রাজাদের রাজা) ঘোষণা মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ১৯৬৭ সালে নিজেকে ইরানের সম্রাট (রাজাদের রাজা) এবং স্ত্রী ফারাহ দিবাকে সম্রাজ্ঞী ঘোষণা করে মুকুট পরেন। তার এমন ঘোষণায় সমাজের বিভিন্ন স্তরে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। হোয়াইট রেভলিউশন মোহাম্মদ রেজা পাহলভি সংস্কার নীতির পক্ষে ছিলেন। ফলে ১৯৬৩ সালে তিনি এক কর্মসূচি চালু করেন যেটি ‘হোয়াইট রেভলিউশন’ নামে পরিচিত। যার মধ্যে ছিল ভূমি সংস্কার, নারীদের ভোটাধিকার সম্প্রসারণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণের মতো কার্যক্রম। আয়োতোল্লাহ খোমেনির সঙ্গে দ্বন্দ্ব মোসাদ্দেকের পতনের পর আবারও ক্ষমতায় ফেরা শাহ পাহলভি তার প্রতিপত্তি বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকেন। ইরানের উন্নয়নে নিজের অবদান কীভাবে রাখা যায় সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকে তার। কিন্তু শাহ পুরোপুরি পশ্চিমা সংস্কৃতি ভাবধারার হয়ে উঠেছিলেন। সেসময় ইরানে ধীরে ধীরে পশ্চিমা সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, অভ্যাস প্রভাব ফেলতে শুরু করে। যদিও তেহরানের বাইরে পশ্চিমা প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি তিনি। শাহের বিভিন্ন পদক্ষেপ ধর্মীয় নেতাদের শঙ্কিত করে তোলে। অনেকেই রাজবংশের নানা আচার-আচরণ সহজভাবে দেখতেন না। ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খোমেনি ইরানের শাহের পশ্চিমাপন্থী শাসনের বিরোধিতা করেছিলেন। ধর্ম থেকে দেশের শাসনব্যবস্থা আলাদা করতে শাহের প্রচেষ্টা খোমেনিকে ক্ষুব্ধ করে তুলে। বৈদেশিক শক্তিকে দেশের ভেতর লুটপাটের সুযোগ করে দেয়ার জন্য শাহের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা করেন খোমেনি। শাহ যখন ইরানে আমেরিকান সৈন্যদের দায়মুক্তির সুযোগ করে দেন, তখন খোমেনির উচ্চকণ্ঠ বিরোধিতা আরো জোরালো হয়ে ওঠে। ইরানের পরিচয় আর রাষ্ট্রের গতিপথ কী হবে তা নিয়ে দু'জনের দ্বন্দ্ব ছিল। শাহের শাসনের তীব্র বিরোধিতার জন্য ১৯৬৪ সালে খোমেনিকে নির্বাসনে যেতে হয়। তিনি প্রথম যান তুরস্কে, তারপর ইরাকে, শেষে ফ্রান্সে। সেখান থেকেই তিনি শাহকে উৎখাত করার জন্য তার সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান। ইরান থেকে ১৪ বছর ধরে বাইরে থাকার বিষয়টি আয়াতোল্লাহ খোমেনিকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। অন্যদিকে ধীরে ধীরে শাহের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। ইসলামিক ক্যালেন্ডার প্রতিস্থাপন শাহের শাসনামলে স্বেচ্ছাচারিতা যেভাবে বাড়ছিল তাতে ধর্মীয় নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছিলেন। ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী যারা গণতান্ত্রিক সংস্কার চেয়েছিল তাদের মধ্যে ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়। সংবিধানে রাজকীয় ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে কিন্তু মার্কিন অনুগত শাহ যেভাবে রাষ্ট্র চালাচ্ছিলেন তা সংবিধানের লংঘন বলে অনেকে শাহের সমালোচনাও করেন। প্রাচীন ইরানের একজন উত্তরাধিকারী হিসেবে ১৯৭১ সালে পারস্য রাজতন্ত্রের আড়াই হাজার বছর উদযাপন অনুষ্ঠান করেছিলেন শাহ। ১৯৭৬ সালে তিনি ইসলামিক ক্যালেন্ডারের পরিবর্তে ‘ইমপেরিয়াল’ (সাম্রাজ্যিক) ক্যালেন্ডার চালু করেছিলেন। তার এই কাজগুলোকে দেখা হয়েছিল ইসলামবিরোধী হিসেবে এবং এর ফলে ধর্মীয় বিরোধিতাও তৈরি হয়ে যায়। সাভাক গোয়েন্দা সংস্থা শাহ পাহলভি সাভাক নামে ইরানের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা গড়ে তোলেন ১৯৫৭ সালে । মোসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করার পর শাহ দেশটির পুলিশ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে সাভাক গড়ে তোলেন। উদ্দেশ্য ছিল তার শাসনকালকে শক্তিশালী করার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নজরদারীর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন যাতে মাথাচড়া দিয়ে না ওঠে সেদিকে নজর রাখা। বিশ্লেষকরা বলেন শাহের শাসনের বিরোধিতা কেউ করছে কিনা সেই নজরদারি চালাতো সংস্থাটি। শাহ বিরোধীদের প্রতি দমন-পীড়ন বেড়ে যায় সাভাকের সহায়তায়। ইরানজুড়ে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো সাভাক। ১৯৫৭ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত সাভাকের কার্যক্রম চলেছিল। শাহ ইরানের সামাজিক সংস্কার ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করে এটিকে শক্তিশালী আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ক্রমাগত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এড়িয়ে গেছেন এবং জনমতের প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব দেননি। তিনি নাগরিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাও দেননি, ফলে তার প্রতি জনরোষ ধীরে ধীরে বেড়েছে। খোমেনির প্রত্যাবর্তন ও ইসলামি বিপ্লব ১৯৭৮ সালে ইরানে যখন চরম অস্থিরতা ও সহিংসতা শুরু হয়, আয়াতোল্লাহ খোমেনি তখন ইরাকে শিয়াদের পবিত্র নগরী নাজাফে কড়া পাহারায় নির্বাসিত জীবনে ছিলেন। ইরাকে তখন সাদ্দাম হোসেনের শাসন। ইরানের শাহ আয়াতোল্লাহ খোমেনিকে ইরাক থেকে বহিষ্কারের জন্য সাদ্দাম হোসেনকে অনুরোধ করেন। তখনই চরম ভুল করেছিলেন শাহ। বহিষ্কৃত আয়াতোল্লাহ ফ্রান্সে পাড়ি জমালেন এবং সেখান থেকে সহজেই সারা পৃথিবীর উদ্দেশ্যে কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেলেন। তার আপোষহীন ও জোরালো সব বক্তব্যের কারণে দ্রুত তিনি সারা বিশ্বের নজর কাড়েন। আয়াতোল্লাহ খোমেনি ইরানের শাহের বিরুদ্ধে ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে এক সমাবেশের ডাক দেন ইরানের তেহরানে। রেজা শাহ ভাবতেই পারেননি যে বিপ্লব এমন আকার ধারণ করতে পারে। শাহের প্রতি জনগণের মধ্যে জমা হওয়া অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে শাহকে উৎখাতের আহ্বান জানান ইসলামপন্থী নেতারা। প্রায় ৪০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। ইরান ১৯৭০ সাল পরবর্তী দশকে বিশ্বের ৪র্থ বৃহত্তম তেল উৎপাদক দেশ, এবং একই সঙ্গে মার্কিন সমরাস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে ওঠে। স্নায়ু যুদ্ধের সেই সময়টায় যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিজম ঠেকাতে ঐ অঞ্চলে ইরানকে এক বিরাট প্রাচীর হিসেবে দেখতো। একই সঙ্গে তারা ইরানের মাটি থেকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর গুপ্তচরগিরিও করতো। কিন্তু ১৯৭৯ সালের শুরু হতেই পরিস্থিতি ওয়াশিংটনের আয়ত্বের বাইরে চলে যায়। ইরানে শাহের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বাড়ছিল। দেশব্যাপী দাঙ্গা, ধর্মঘট, আর বিক্ষোভের মধ্যে ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসে জনপ্রিয়তা হারানো ইরানের শাহের সরকার ভেঙে পড়ে। তিনি ও তার পরিবার দেশ ছেড়ে পালান। শাহের দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে রাস্তায় নেমে আসে জনতা, তারা খুশিতে-উল্লাসে ফেটে পড়ছিল। দুই সপ্তাহ পর জনতা আবার রাস্তায় নামে। এবার আয়াতোল্লাহ খোমেনিকে স্বাগত জানাতে, যাকে ইরানের শাহ ১৪ বছর আগে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। কারণ খোমেনি তার পশ্চিমাপন্থী নীতির কট্টর সমালোচক ছিলেন। সেই সময় উইলিয়াম সুলিভান তেহরানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। রাষ্ট্রদূত সুলিভান চেষ্টা করেছিলেন খোমেনির বাহিনীর সঙ্গে শাহের বাহিনীকে যুক্ত করতে। কিন্তু কোনো পক্ষই অপর পক্ষকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। কাজেই সরকার দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেল। ইরানের সামরিক টেকনিশিয়ানরা ১১ই ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ করে এবং সেটাই ছিল বিপ্লবের চরম মূহুর্ত। ইরানে শাহের শাসন শেষ হয়ে যায়। তার ঘনিষ্ঠ সামরিক ও বেসামরিক লোকজন সবাই দেশ ত্যাগ করে। শাহ ও তার স্ত্রী প্রথমে যান মিশরের আসওয়ানে। সরকারি খবরে বলা হয়, শাহ সেখানে "ছুটি কাটাতে ও চিকিৎসা করাতে গিয়েছেন।" এরপর তিনি মরক্কো, বাহামা, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র ও পানামায় সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অবস্থান করেন। শেষ পর্যন্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮০ সালের ২৭শে জুলাই কায়রোতে মারা যান মোহাম্মদ রেজা পাহলভি।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: