আমেরিকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বেতন ৫ হাজার ডলার এমপিওভুক্ত শিক্ষকের ১২ হাজার টাকা।
কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকার পাতাগুলোয় প্রকাশ হচ্ছে এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজের শিক্ষক–কর্মচারীদের আন্দোলনের খবর। দেশ গড়ার কারিগর এই শিক্ষকেরা বর্তমানে বাড়িভাড়া বাবদ সরকারি ভাতা পেয়ে আসছেন মাত্র এক হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে বর্তমান বাজারে দেশের একেবারে অজপাড়াগাঁয়েও দুই রুমের একটি বাসা পাওয়া যাবে না, যেখানে একজন শিক্ষক তাঁর পরিবার–পরিজন নিয়ে থাকতে পারবেন। উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও রাজধানী শহরের কথা তো বাদই দিলাম। তাহলে তাঁদের দাবিটি নিঃসন্দেহে যৌক্তিক। কিন্তু এমন একটি যৌক্তিক দাবি মেনে না নিয়ে সরকার উল্টো শিক্ষকদের ওপর লাঠিপেটা করার আদেশ দিয়েছে। রাস্তায় শিক্ষকদের রক্তমাখা শরীর আর তাঁদের অসহায় আর্তনাদ দেখে একজন শিক্ষক হিসেবে কিছু না লিখে পারছি না বলেই আজকের এই কলম ধরা। বাংলাদেশে বহুদিন ধরেই শিক্ষকদের জন্য বিদ্যমান বেতনকাঠামো ও সামাজিক মর্যাদা নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা চলে আসছে। আর এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষকের জন্য এই সংখ্যা মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকা। বাংলাদেশে যতগুলো মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় আছে, তার মধ্যে ৯৮ শতাংশ হচ্ছে এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়। অর্থাৎ দেশের সিংহভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রবেশকালীন মাসিক বেতন এই ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এই একটি সংখ্যা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, দেশের শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দকৃত বেতন–ভাতার সার্বিক চিত্র। আন্তর্জাতিক অনলাইন জরিপ সংস্থা স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুসারে, আমেরিকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বাৎসরিক বেতন ৬৮ হাজার ১৫৩ মার্কিন ডলার। স্ট্যাটিস্টার একই জরিপের তথ্য অনুসারে, ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে এই সংখ্যা বাৎসরিক যথাক্রমে ৫৪ হাজার ৫৫০ ও ৬২ হাজার ৫৮৪ মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক সংগঠন ওইসিডি (অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো–অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট)–এর তথ্য অনুসারে, ওইসিডিভুক্ত ৩৮টি দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাৎসরিক গড় বেতন ৫৭ হাজার ৩৯৯ মার্কিন ডলার। ওইসিডির অন্য একটি জরিপের তথ্য অনুসারে, জার্মানির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বাৎসরিক বেতন ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। অথচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তো দূরের কথা, বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক শেষ বয়সে মাসে সাকল্যে বেতন পান মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো! ইউরোপ ও আমেরিকার মতো চীনেও শিক্ষকদের বেতন–ভাতা অনেক বেশি। চীন ১৯৯০–এর দশক থেকেই শিক্ষা ও গবেষণার শক্তিকে জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার মূল প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ জন্য দেশটি শিক্ষকদের মাসিক উচ্চ বেতন প্রদানের পাশাপাশি গবেষণা প্রকল্প, সরকারি ভর্তুকি ও অতিরিক্ত ভাতা থেকে অধিক উপার্জনের সুযোগ রেখেছে। বিশ্বমানের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির লক্ষ্যে দেশটি ‘প্রজেক্ট ৯৮৫ ও প্রজেক্ট ২১১’ নামের ব্যয়বহুল প্রকল্প চালু করেছে। এ যুগের বিশ্বখ্যাত পিকিং ও সিংহুয়া ইউনিভার্সিটি তারই প্রতিদান। সে দেশের আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখন বিশ্বমানের হয়ে উঠছে। সরকারি এসব সুযোগ–সুবিধা মিলিয়ে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক মাসে কয়েক হাজার মার্কিন ডলার উপার্জন করতে পারেন। শুধু চীন কেন, আমরা যদি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কথা বলি, সেখানেও একজন শিক্ষক বাংলাদেশের একজন সমপর্যায়ের শিক্ষকের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি বেতন–ভাতা পেয়ে থাকেন। কিন্তু শিক্ষকদের ভাগ্য সেই একই থেকে যাচ্ছে। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ অবস্থা। বাংলাদেশের সর্বশেষ পে–স্কেল অনুযায়ী এখানকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক যোগদানের সময় মাসে সাকল্যে ১৮ হাজার থেকে ১৯ হাজার টাকার মতো বেতন পেয়ে থাকেন। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক মাসে পেয়ে থাকেন ২৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। ইউরোপ–আমেরিকার দেশগুলোয় শিক্ষকদের চেয়ে বেশি বেতন পেয়ে থাকেন সাধারণত চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী ও আইটি বিশেষজ্ঞরা। আর বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ক্ষেত্রবিশেষে ব্যক্তি বা কোম্পানির অধীনে চাকরিরত একজন গাড়িচালক বা বাসার দারোয়ানের চেয়েও কম বেতন পেয়ে থাকেন। এ থেকেই বোঝা যায় বাংলাদেশে সামগ্রিকভাবে শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মর্যাদা আজ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। বাংলাদেশের সর্বশেষ পে–স্কেল অনুযায়ী, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকের পদ দুটি তৃতীয় শ্রেণির (২০২৫ সালের জুলাইয়ে প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে), আর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির (১০ম গ্রেড)। এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী দেশ শিক্ষককে রাষ্ট্রীয় অর্গানোগ্রামের তৃতীয় শ্রেণিতে রেখে প্রথম শ্রেণির বিশ্বমানের নাগরিক তৈরি করতে পারে? এটা তো কখনোই সম্ভব নয়। বিশ্বমানের নাগরিক তৈরি করার জন্য প্রথমে শ্রেণিকক্ষে বিশ্বমানের শিক্ষক দিতে হবে। আর শ্রেণিকক্ষে বিশ্বমানের শিক্ষক পেতে হলে অবশ্যই এই পেশার বেতন–ভাতা, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মর্যাদা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করতে হবে। সংগত কারণেই আজ দেশের আনাচকানাচে জোরালো দাবি উঠেছে, সব স্তরের শিক্ষকদের চাকরিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার। হোক সেটা প্রাথমিক, মাধ্যমিক কিংবা উচ্চশিক্ষার স্তর। দেশের অনেক প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নীতিনির্ধারক বিভিন্ন সময়ে বলে এসেছেন যে শিক্ষার প্রকৃত উন্নয়ন ঘটাতে হলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের সমান কিংবা তার চেয়ে বেশি হওয়া উচিত। অতি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজও একই দাবি তুলেছেন। তবে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছে প্রস্তাবটি হাস্যকর কিংবা অবাস্তব মনে হলেও বিশ্বের অনেক দেশ, যেমন জাপান ও নরওয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেতন–ভাতা নির্ধারণ করার কথা ভাবছে। আর ফিনল্যান্ড তো এরই মধ্যে সে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে অন্য পেশাজীবীদের চেয়ে সর্বোচ্চ বেতনে নিয়োগ দিচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশেও সব পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রবেশ পদের বেতন–ভাতা ও রাষ্ট্রীয়–সামাজিক মর্যাদা প্রথম শ্রেণির নয় কেন?Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
Featured
» আমেরিকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বেতন ৫ হাজার ডলার এমপিওভুক্ত শিক্ষকের ১২ হাজার টাকা।
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: