গানই আমার জীবন:আধুনিক গানের কিংবদন্তি শিল্পী মান্না দে আধুনিক গানের কিংবদন্তি শিল্পী মান্না দে ২০০৯ সালে ঢাকায় এসেছিলেন। সাক্ষাৎকারটি ২০০৯ সালের ৬ মার্চ ‘গানই আমার জীবন: মান্না দে’ শিরোনামে ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোর সাময়িকীতে। মান্না দে ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর ভারতের বেঙ্গালুরুর নারায়ণন হৃদয়ালয়ে ৯৪ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ মান্না দের প্রয়াণ দিবস প্রথম আলো: প্রথম প্রশ্নটা গান নিয়ে নয়, আপনার বয়স নিয়ে। এই যে প্রায় ৯০ বছর বয়সেও আপনি দেশ-বিদেশে ঘুরে গান গেয়ে যাচ্ছেন। কীভাবে পারেন, বলুন তো! মান্না দে: গান আমার একটা প্যাশন। গানই আমার জীবন। এ কারণেই হয়তো পারি। এই বয়সেও গান করতে পারার পেছনে আর একটা ব্যাপারও হয়তো আছে। আমি স্পোর্টসম্যান ছিলাম। কুস্তিটুস্তি করে নামও করেছিলাম। সেই জন্য আমার শরীরটার বাঁধুনি শুরু থেকেই একটু শক্ত ছিল। আমার বাবাকেও কৃতিত্ব দেব এ জন্য। তিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন, শরীর ভালো রাখতে হলে শরীরের যত্ন করতে হবে। যতটুকু খাওয়া দরকার, ততটুকু খাবে। সময়মতো খাবে, সময়মতো শোবে, সময়মতো এক্সারসাইজ করবে, সময়মতো কাজ করবে। জীবনের এই ডিসিপ্লিনটা আমাকে খুব সাহায্য করেছে। এ কারণেই আমি ৯০ বছর বয়সেও গান করতে পারছি। এখনো প্রতিদিন সকালে আমি দুঘণ্টা রেওয়াজ করি। রেওয়াজ করতে না পারলে মনে হয়, দিনটাই খারাপ গেল। এখনো কানটাকে সব সময় ভীষণ টিউন করে রাখি যে কে ভালো গাইছে এবং তাদের কাছে কিছু শেখার আছে কি না! আমি বিশ্বাস করি, যত দিন শেখা যায়, শেখা উচিত। আমি এখনো শিখছি। প্রথম আলো: এখনো শিখছেন! তা কত বছর হলো এই ‘শিক্ষাজীবন’? ষাট বছর। ষাট বছরই আমার সংগীতজীবন। লেখাপড়া ভালোভাবেই করেছিলাম। তবে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর সিঙ্গার হওয়াটাকেই আমি আমার জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে নিই। কারণ ছিল হয়তো এটাই যে কৃষ্ণচন্দ্র দে ছিলেন আমার কাকা। কাকা বিয়েটিয়ে করেননি, নিজের ছেলের মতো মানুষ করেছিলেন আমাদের। কাকার দৌলতে ভারতবর্ষের সেরা সেরা গাইয়ে-বাজিয়ে আমাদের বাড়িতে আসতেন, পারফর্ম করতেন। বাড়িতে বসেই আমরা তাই ভারতবিখ্যাত সব শিল্পীর গান শোনার সুযোগ পেয়েছিলাম। সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি-সা আমি শুনতে শুনতে নিজেই শিখেছিলাম। পড়াশোনা শেষ করার পর কাকা আমাকে শেখাতে শুরু করলেন। শিক্ষক হিসেবে কাকা ছিলেন খুব কড়া। কাকা কখনো দুটো মেডেল আর একটা কাপ পাওয়ার জন্য গান শেখাতেন না, কাকার তত্ত্বাবধানে শুরু করার পর আমি কাকার ওস্তাদ দবীর খাঁ সাহেবের কাছে গান শিখলাম। এরপর কাকার হাত ধরে বোম্বেতে যাওয়ার পর ওখানে কাকা আমাকে বড় বড় ওস্তাদের কাছে দিয়ে দিলেন। এর পাশাপাশি ফিল্মেও কাজ করতে লাগলাম। ভেতর থেকে একটা তাড়না ছিল, আমাকে সর্বভারতীয় গাইয়ে হতেই হবে। আমি শুধু বাংলা গান করতে চাই না, ভারতবর্ষে যত রকম গানবাজনা আছে, আমি তা করতে চাই। আর বোম্বে ছিল এমন জায়গা, যেখানকার মূলমন্ত্র হলো: সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট। নিজেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। আমি চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম। প্রথম আলো: আপনার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে শুনেছি, আপনি নাকি এখনো নিজের সব কাজ নিজেই করেন। বাজার করা, কাপড়চোপড় কাচা পর্যন্ত... মান্না দে: হ্যাঁ, আমি আমার নিজের কাজ নিজেই করতে ভালোবাসি। আমি খুব সেলফ-সাফিশিয়েন্ট। আমি আতিশয্যে বিশ্বাস করি না। আর্টিস্ট হয়েছি তাতে কী, আমি খুবই প্র্যাকটিক্যাল লোক। আমি জানি, নিয়মিত রেওয়াজ না করলে আমি ভালো করে গাইতে পারব না। আমি তাই রেওয়াজ করি। জানি, না শিখলে আমি এগোতে পারব না। আমি শিখি। কম খেলে শরীর ভালো থাকবে। আমি কম খাই। সব মিলিয়ে আমি খুবই ডিসিপ্লিনড মানুষ। মান্না দে: আমার জীবনে সক্কলের চেয়ে বড় পাওয়া আমার স্ত্রী। ও কেরালার মালাবারের মেয়ে। উচ্চশিক্ষিত, বোম্বে ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি ভাষায় এমএতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। ওকে দেখে প্রথম দর্শনেই প্রেম বলতে যা বোঝায়, তা-ই হয়েছিল আমার। এরপর আমরা একে অন্যকে জানলাম, বিয়ে করলাম। এই ৫৫ বছরের বিবাহিত জীবনে সব সময়ই ওকে আমার সঙ্গী হিসেবে যেমন সেরা মনে হয়েছে, তেমনি বন্ধু হিসেবেও সেরা, যেকোনো কিছু নিয়ে আলোচনা করার জন্য সেরা। ও শুধু আমার স্ত্রী-ই নয়; আমার ফ্রেন্ড, ফিলোসফার অ্যান্ড গাইড। আমার সবচেয়ে বড় সমালোচকও। প্রথম আলো: এটা তো পুরো জীবনের পাওয়া। শুধু সংগীতজীবনটা যদি আলাদা করে নিই, তাহলে সবচেয়ে বড় পাওয়া মানেন কোনটিকে? মান্না দে: সেই চাওয়া-পাওয়ার তো আর শেষ নেই। আমি যা হতে চেয়েছিলাম, সেই সর্বভারতীয় টপ সিঙ্গার হতে গেলে গোটাকতক জিনিস দরকার। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমি কোন অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করছি। আমি প্রতিনিধিত্ব করছি বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের যে গানবাজনা—রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, অতুলপ্রসাদের গান, বাউল, ভাটিয়ালি—এগুলো তো সর্বভারতীয় হয় না। আমার সমসাময়িক যাঁরা ছিলেন, মোহাম্মদ রফি, মুকেশ, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোসলে—সবারই এমন একটা পরিমণ্ডলে জন্ম হয়েছিল, যেখানে সর্বভারতীয় গানবাজনা হতো। ওঁরা সেখানেই জন্মেছিলেন বলে ওঁদের একটা অ্যাডভান্টেজ ছিল। একটা বাঙালির ওঁদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটা খুব মুশকিল ছিল। তা সত্ত্বেও আমি সহজে হার মেনে নিইনি, ভালো ভালো ওস্তাদের কাছে শিখেছি। এ কারণেই আমি একটু অন্যভাবেও গাইতে চেয়েছি। আমার যে গায়কি, তাতে সব সময়ই একটা ক্ল্যাসিক্যাল বেজ থাকত। বাংলা গানেও আমি এসব ইন্ট্রোডিউস করেছি। সুখের কথা, আমার বাঙালি শ্রোতারা সেটি দুহাত ভরে গ্রহণ করেছে। বাংলা ভাষায় আমি যত শক্তই গান করি, সে গানগুলো পপুলার হতো ও লোকে গ্রহণ করত। তবে এটা হিন্দি ফিল্ডে হয়নি। কারণ, হিন্দি ফিল্ডে আই ওয়াজ অ্যান আউটসাইডার। একজন বাঙালি, যে হিন্দি বা উর্দু গান গাইছে। সেখানে যাদের এটি নিজেদের ভাষা, তারা অনেকটাই এগিয়ে ছিল। যেমন রফি ছিলেন পাঞ্জাবি, হিন্দি-উর্দু ওঁর স্বাভাবিকভাবেই আসত। আমি সেটা মেনে নিয়েছিলাম। কারণ, রফির মতো গাইয়ে ভারতবর্ষে হয়নি। আমি বলছি লাইট মিউজিকের কথা... এতে রফির মতো সিঙ্গার হয়নি। আমি তাই মেনে নিয়েছিলাম, রফির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামলে আমি হয়তো কিছুটা এগোতে পারব, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারব না। এ কারণেই বললাম, আমি মেনে নিই। যেমন কিশোর কুমার, ও যদিও বাঙালি, গাঙ্গুলি পদবি, তবে ওর জন্ম মধ্যপ্রদেশে। সেখানে ওদের কথাবার্তা চলত হিন্দিতে। ওই একটা অ্যাডভান্টেজ পেয়ে গেল সে। তার পর ছিল কিশোরের ওই গলা। অদ্ভুত রকমের একটা গলা ভগবান তাকে দিয়েছিলেন। অত বিউটিফুল ভয়েস খুব কম এসেছে। কিশোর, রফি, বাংলা গানে হেমন্ত—ওঁদের যে ঈশ্বরদত্ত অপূর্ব গলা ছিল, আমি তা পাইনি। আমার গলার মধ্যে অত আকর্ষণীয় কিছু ছিল না। কিশোরের গলা শুনলেই যেমন মনে হতো, ‘হোয়াট আ ভয়েস!’ হেমন্তবাবুর অত মিষ্টি ভয়েস; আর রফি—ওর গায়কি, গান করার ঢং, ওটা ছিল দারুণ। এ কারণেই নিজের জায়গা করে নেওয়ার জন্য আমাকে ক্ল্যাসিকের দিকে ঝুঁকতে হয়েছিল। ভারতবর্ষে যে ক্ল্যাসিক্যাল গানবাজনা, সেটি ভালোভাবে রপ্ত করে আমি ওদের সঙ্গে কমপিট করতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর যা দেখলাম, আমার জন্য মিউজিক ডিরেক্টররা যে গান তৈরি করতেন, সে গান আমিই গাইতাম, অন্য কাউকে দিয়ে গাওয়ানো যেত না। প্রথম আলো: যেকোনো শিল্পীর জন্য নিজের ভাষার গান দিয়ে শুরু করাটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি বাংলা গান করলেন অনেক পরে, বোম্বেতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর। এটা কেন? মান্না দে: আমার প্রথম বাংলা গান রেকর্ড করার ঘটনাটা খুব মজার। আমি আর লতা ‘অমর ভূপালী’ বলে একটা ছবির গান করছিলাম। ওই ছবিতে আমি আর লতা যখন গান রেকর্ড করছি, লতা আমাকে বলল, ‘মান্নাদা, আমি বাংলা গানের রেকর্ড বের করতে চাই।’ লতার জন্য গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা দুটি গান আমি সুর করে লতাকে শেখালাম। এরপর রেকর্ডিংয়ের জন্য তৈরি হলাম। কিন্তু জানি না কেন, লতা গাইতে পারল না অথবা গাইল না। তো আমি গেয়ে দিলাম ওই দুটি গান—‘কত দূরে আর নিয়ে যাবে বল’ এবং ‘হায় হায় গো রাত যায় গো’। ওই দুটি গান শুরুতে তেমন সাড়া না ফেললেও পরে দারুণ হিট হলো। এটাই বাংলা গানে আমার প্রথম পদার্পণ। ওই দুটি গান ভালো চলার পর এইচএমভি আমাকে বলল, প্রতিবছর পুজোয় রেকর্ডিং করতে হবে। আর তখন আমি যে গানেরই সুর করি, দেখি তা হিট হয়ে যায়। আমি ভেবে দেখলাম, আমার সুর করার ধারাটা গতানুগতিক যেটা চলছিল, তার চেয়ে আলাদা এবং সেটিই পাবলিক খুব পছন্দ করছে। আমি সর্বভারতীয় একটা টাচ দিয়ে সুর করতাম। লোকেও দেখল, আরে, এর সুরটা বা গায়কিটা তো আলাদা। এই যে অন্য রকম একটা দিক যোগ করা, এটা আমি জেনে-বুঝেই করেছিলাম। কারণ, হেমন্তবাবুর অমন সুন্দর গলা, ভাষাটা এমন সুন্দর বলেন তিনি এবং মিষ্টি মিষ্টি গান করেন, আমি দেখলাম, এই ধারায় আমি তাঁর সঙ্গে কমপিট করতে পারব না। আমাকে যেটা করতে হবে, সর্বভারতীয় সাংগীতিক রূপটাকে এনে গানটাকে পরের ধাপে নিয়ে নিতে হবে। সেটি করেই আমি সফল হলাম। প্রথম আলো: আমার প্রশ্ন ছিল, শুরুটা কি নিজের ভাষার গান দিয়ে হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল না? মান্না দে: না, আমি কখনোই বাংলা গানের শিল্পী হতে চাইনি। আমার মনে আছে, শচীন কর্তা (শচীন দেববর্মন) আসতেন কাকার কাছে গান শিখতে। উনি বহুদিন কাকার কাছে গান শিখেছেন। শচীন কর্তার গান শুনে ভালো লাগত, কেমন অন্য রকম গান করেন। কথার উচ্চারণগুলো নাকে নাকে। আমার খুব পছন্দ হতো। ওগুলো নকল করে করে আমি কলেজে গাইতাম, ‘তুঁমি যে গিঁয়াছ বঁকুল বিঁছানো পঁথে, নিঁশীথে যাঁইও ফুঁলবনে’। তবে তখন আমার সর্বভারতীয় শিল্পী হওয়ার লক্ষ্য। কাকা সবকিছু গাইতেন—ধ্রুপদ, খেয়াল, ঠুমরি, গজল, নাত, কীর্তন। আমাদেরও কাকা সেভাবেই তৈরি করেছিলেন যে একটা ধ্রুপদ গাইতে হলে ধ্রুপদ গাইতে হব প্রথম আলো : আপনার সমসাময়িক বা আগে-পরে বাংলা গানের যেসব শিল্পী ছিলেন, যেমন সতীনাথ... মান্না দে: না, না, না, সতীনাথ... এঁদের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না। এঁদের গানের ব্যাপারেও না। এঁরা পপুলার আর্টিস্ট ছিলেন, পপুলার থাকতে দিন। তবে গান করার যে জায়গাটা, সেখান থেকে আমি এঁদের মোটেই পছন্দ করি না। আমি পছন্দ করতাম হেমন্তবাবুর গান। এত সাদাসিধে গান করতেন আর এমন মিষ্টি গান... যেন লোকেদের কাছে আস্তে করে গানটা তুলে দিতেন তিনি আর লোকেরাও দু হাত বাড়িয়ে তা লুফে নিত।
প্রথম আলো: হিন্দি-বাংলা সব মিলিয়ে আপনার সবচেয়ে প্রিয় শিল্পী কে? মান্না দে: মোহাম্মদ রফি আর লতা মঙ্গেশকর। আমি তো বলব, গানের জগতে মোহাম্মদ রফির থেকে বেটার সিঙ্গার হয়নি। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, লতার মতো আর্টিস্ট আর জন্মাবে না। লতা মঙ্গেশকর যেভাবে গান করে গেছেন, তাতে তিনি নিজেই একটা ইনস্টিটিউশন। ‘কীভাবে ভালো গাইতে হয়’—বাকি সিঙ্গারদের একটা গাইডলাইনও দিয়ে গেছেন লতা। লতার আগে কত গাইয়ে ছিলেন... জোহরাবাই আম্বেলেওয়ালি, আমিন ভাই কর্নাটকি, পারুল ঘোষ, নূরজাহান, শামসাদ বেগম, গীতা দত্ত... লতা আসার পর সবাই হারিয়ে গেলেন। লতার মতো গাইয়ে...আহ্ হা হা...ওই যে বললাম, লতা হচ্ছেন গানের একটা টোটাল ইনস্টিটিউশন। আমার যেটা মনে হয়, শিখে কেউ লতা মঙ্গেশকর হতে পারে না। এটা ভগবানের অদ্ভুত রকম একটা আশীর্বাদ তাঁর ওপরে। নইলে কী করে একটা মারাঠি মেয়ে এভাবে গান করতে পারে! মান্না দে: খুব সত্যি কথা। সব সময় এটাই হয়। একটা গান গাইলে ‘কেয়া গানা গায়া মান্না দে’। আরে, মান্না দে কেয়া গায়া? গানটা যদি কেউ না লিখত, যদি ওইভাবে সুর না হতো, তো মান্না দে কী গাইত! আমার ওসব গানের জন্য আমি কৃতিত্ব দিই পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ও যেভাবে গান লিখেছে... ‘এ তো রাগ নয়, এ যে অভিমান। এ শুধু তোমায় কাছে পাওয়ার ছল ভরা গান।’ যখন এইভাবে কথা লেখা হয়, তখন সেটিতে সুর করতে বসলে তা বুকের ভেতর থেকে উঠে আসে। আমি এই গানটার সুর করেছি একটু ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড রেখে। এটাই আমার গানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। সব গানের পেছনে একটু ক্ল্যাসিক্যাল কিছু থাকবেই। প্রথম আলো : আপনার আত্মজীবনীতে রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে যা লিখেছেন, সেটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে। রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে ওই ‘গেল গেল’ রব তোলার সংকীর্ণতা না থাকলে এটি আরও বেশি গণমানুষের গান হতে পারত। মান্না দে: খুব সত্যি কথা। ওরা এই যে রবীন্দ্রসংগীতকে একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে ধরে রেখেছেন না, ধরে রেখে খুব অন্যায় করেছেন। আরে বাবা, এটা কেমন নিয়ম যে রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে গেলে ও রকম গলা চেপে চেপে গাইতে হবে। কেন? বাংলা ভাষায় লেখা গান, আমরা লেখাপড়া শিখেছি, গানবাজনা শিখেছি, নোটেশন পড়তে পারি, রবীন্দ্রনাথ যেভাবে অসাধারণ সুন্দর সুর করেছিলেন, সেভাবে গাইতে পারি। তাহলে এভাবেই গাইতে হবে নিয়ম কেন? ‘স্বপনে দোঁহে ছিনু কী মোহে, জাগার বেলা হলো।’ (প্রচলিত রাবীন্দ্রিক ঢঙে গেয়ে) এটা এইভাবে গাইতে হবে কেন? ‘ওই যে ঝড়ের মেঘের কোলে, বৃষ্টি আসে মুক্তকেশে আঁচলখানি দোলে।’ এটা কেন... (গলা চেপে গেয়ে) ওই যে ঝড়ের... আরে ননসেন্স... ঝড় কি ওইভাবে আসে? (গলা ছেড়ে গাইতে গাইতে) আহ্ হা... বৃষ্টি আসে মুক্তকেশে আঁচলখানি দোলে... কী... কী লিখেছেন! রবীন্দ্রনাথের কল্পনার পাখায় উড়ে যাওয়ার যে ক্ষমতা আর সেটিকে তিনি যেভাবে কথা আর সুরের মেলবন্ধন দিয়ে ব্যক্ত করেছেন... আমি এমন জিনিয়াস আর দেখিনি। আমি এত লোকের গান শুনেছি, এত গানবাজনা শুনেছি, গান নিয়ে এত লেখাপড়া করেছি, রবীন্দ্রনাথের ধারেকাছে ঘেঁষতে পারে এমন কারও দেখা আমি পাইনি। কী গানের কথা! কী করে লিখে গেছেন প্রেমের গান ওই রকম—‘তুমি একটু কেবল বসতে দিয়ো কাছে, আমায় শুধু ক্ষণেক তরে আজি।’ আহ্ হা, আহা, কী কথা! ‘হাতে আমার যা কিছু কাজ আছে, আমি সাঙ্গ করব পরে।’ আহ্ হা, কী কথা—আমি ভীষণ ইমোশনাল হয়ে যাই রবীন্দ্রনাথের গানের কথা উঠলে। আমি বাড়িতে বসে সব সময় রবীন্দ্রসংগীত গাই। আমার বউকে শেখাই, দুজন একসঙ্গে গাই।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: