Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » হাসতে হাসতে চোখে পানি আসে কেন




হাসতে হাসতে চোখে পানি আসে কেন বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা চলছে। হুট করে কেউ একজন দারুণ এক পাঞ্চ লাইন মেরে দিল। রসিকতা মানে রসিকতা, হাসি যেন আর থামতেই চায় না। দেখা গেল, হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরেছে, কারো কারো এমনকি চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এসেছে! এই অভিজ্ঞতা আপনারও হয়েছে নিশ্চয়ই। তীব্র হাসির মুহূর্তে চোখে পানি চলে আসাকে আমরা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছি। খনার বচনে আছে, রোদ-বৃষ্টি একসঙ্গে হলে নাকি শেয়ালের বিয়ে হয়। কিন্তু হাসি-কান্না একসঙ্গে হওয়ার মতো এরকম অদ্ভুত ঘটনার পেছনের ব্যাখ্যা কী? হাসির মতো আনন্দময় আবেগের সঙ্গে কান্নার মতো দুঃখ প্রকাশের যোগাযোগ কোথায়? আছে, আছে। এই রহস্যের গভীরে যাওয়ার আগে আমাদের চোখের পানির উৎস সম্পর্কে জানতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের চোখের ওপরের পাতার ঠিক নিচে, বাইরের কোণায় একজোড়া ছোট্ট গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি আছে। এর নাম ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি। সহজ বাংলায় বলা হয়, অশ্রুগ্রন্থি। এটাকে আপনি চাইলে ‘চোখের পানির কারখানা’ বলতে পারেন। বেসাল টিয়ারস সারাক্ষণ অল্প অল্প করে তৈরি হয়। চোখের পলক ফেলার সঙ্গে সঙ্গে কাজে নামে এটি, আমাদের চোখকে ভেজা, পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখে। এই কারখানা মূলত দুই ধরনের অশ্রু তৈরি করে। একটির ইংরেজি নাম ‘বেসাল টিয়ারস’। এই অশ্রু সারাক্ষণ অল্প অল্প করে তৈরি হয়। চোখের পলক ফেলার সঙ্গে সঙ্গে কাজে নামে এটি, আমাদের চোখকে ভেজা, পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখে। আরেক ধরনের অশ্রুর নাম ‘রিফ্লেক্স অ্যান্ড ইমোশনাল টিয়ারস’। চোখে যখন ধুলোবালি পড়ে বা পেঁয়াজ কাটার সময় ঝাঁঝ লাগে, তখন প্রতিক্রিয়াবশত এই অশ্রু বেরিয়ে আসে। এটা হলো রিফ্লেক্স টিয়ারস। আর কষ্ট পেলে কিংবা খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লে যে অশ্রু বের হয়, তার ইংরেজি নাম ইমোশনাল টিয়ারস। মানে আবেগের কান্না। বুঝতেই পারছেন, হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলা এই দ্বিতীয় ভাগে পড়ে। তার মানে, কোনো কারণে আপনার অশ্রুগ্রন্থি এই হাসিকে কান্না নামক আবেগ থেকে আলাদা করতে পারে না। (কেন? সে উত্তরটাই জানব একটু পরে।) এ প্রসঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের বইতে বারে বারে উদ্ধৃত একটি উক্তি তুলে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না, ‘যত হাসি তত কান্না, বলে গেছেন রামসন্না।’ যাহোক, এবারে একটু গভীরে নামা যাক। হাসতে হাসতে চোখে যে পানি আসে, তার পেছনের প্রধান কারণ দুটি। এক, এই রহস্যের শিকড় লুকিয়ে আছে মুখের পেশিতে। আপনি যখন খুব জোরে, প্রাণ খুলে হাসেন; তখন শরীরে ঠিক কী কী ঘটে, খেয়াল করেছেন? আপনার ডায়াফ্রাম (বাংলায় বক্ষচ্ছদা বা মধ্যচ্ছদা লেখা হয়), অর্থাৎ বুকের এখানটায় কাঁপতে থাকে। এর ফলে আপনার বুক ওঠা-নামা করে, আর পুরো মুখের মাংসপেশিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। মূল ঘটনাটা ঘটে এখানেই। আমাদের চোখের চারপাশে যে পেশিগুলো আছে, হাসার সময় সেগুলো প্রচণ্ড চাপে সংকুচিত হয়। খেয়াল করলে হয়তো দেখেছেন আপনার বন্ধু-বান্ধবকে, হাসার সময় তারা চোখ ছোট ছোট করে ফেলে। হয়তো খেয়াল করেননি, কিন্তু জেনে রাখুন, প্রচণ্ড হাসি পেলে অজান্তেই আপনার চোখও ছোট ছোট হয়ে যায়। মুখের এই তীব্র সংকোচনের ফলে অশ্রুগ্রন্থি বা ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ডের ওপর সরাসরি চাপ পড়ে।

ব্যাপারটাকে একটা ভেজা স্পঞ্জ বা ফোম, কিংবা পানি ভর্তি বেলুনের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ভেজা স্পঞ্জকে জোরে চাপ দিলে যেমন ভেতর থেকে পানি বেরিয়ে আসে; ঠিক তেমনি প্রচণ্ড হাসির সময় মুখের পেশিগুলো অশ্রুগ্রন্থিকে চাপ দেয়, ফলে সেখানে জমে থাকা অশ্রু বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এটাই হাসতে হাসতে চোখে পানি আসার ‘যান্ত্রিক’ কারণ। যান্ত্রিক, কারণ আবেগের সঙ্গে এই কারণটার সম্পর্ক নেই। কিন্তু আপনার এই চোখে জল আসা তো আবেগের ফলেই। তার মানে, মস্তিষ্কেরও কিছু ভূমিকা আছে এর পেছনে। যখন আমরা হাসতে হাসতে আর থামতে পারি না, অনিয়ন্ত্রিত এই হাসির ফলে মস্তিষ্ক একরম ‘ওভারলোডেড’ হয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের মস্তিষ্ক তীব্র আবেগগুলোকে প্রায় একই ভাবে প্রসেস করে। তার মানে, চরম সুখ হোক বা চরম দুঃখ, মস্তিষ্ক দুটোকে প্রায় একই মনে করে। এর কারণ, মস্তিষ্কের যে অংশ (যেমন লিম্বিক সিস্টেম) আমাদের আবেগগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, তার কাছে তীব্র হাসির সংকেত আর তীব্র কান্নার সংকেত খুব কাছাকাছি ধরনের। যখন আমরা হাসতে হাসতে আর থামতে পারি না, অনিয়ন্ত্রিত এই হাসির ফলে মস্তিষ্ক একরম ‘ওভারলোডেড’ হয়ে পড়ে। বাংলায় কী বলা যায়? অতিরিক্ত উত্তেজিত বা বিভ্রান্ত বলতে পারেন। এটি তখন কান্নার জন্য নির্ধারিত স্নায়বিক পথটিকেই ভুল করে চালু করে দেয়! ঠিক ধরেছেন, মস্তিষ্ক আপনার হাসি বা আনন্দকে ‘আনন্দ’ হিসেবে আলাদা করে দেখে না, বরং ‘তীব্র আবেগ’ হিসেবে শনাক্ত করে। আর তীব্র আবেগের স্বাভাবিক শারীরিক প্রতিক্রিয়া হলো চোখে পানি আসা। হোক সেটা শুধু আনন্দ বা আপনজনের প্রতি পরম মমতা, কিংবা বাংলাদেশ দল খেলায় জিতে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া। এটা বোঝায়, আপনার এই আবেগ বিশুদ্ধ, অনিয়ন্ত্রিত। নির্মল। এ জন্যই আমরা হাসতে হাসতে কাঁদি। লেখক: শিক্ষার্থী, পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply