মরা গাছে কাক ডাকা সহ ১৫টি প্রচলিত কিছু কুসংস্কার
নিজেকে প্রশ্ন করুন তো, আদৌ কি কোন যুক্তিযুক্ত সম্ভাবনা আছে আপনাদের আলোচনায় কাকতালীয়ভাবে কারো আগমনের কারণে তার আয়ু বৃদ্ধির? না, এবং একদমই না। শূন্যের কাছাকাছি সম্ভাবনাও নেই এমন কিছু ঘটার! এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসা একটা কুসংস্কার। যেমনটা জ্যোতিষশাস্ত্র!গ্রহ নক্ষত্রের গতির সাথে যেমন আপনার ভবিষ্যতের কোনো সম্পর্ক নেই, তেমনি আপনাদের কারো আলোচনায় থাকা ব্যক্তির কাকতালীয় আগমনেও তার বেঁচে থাকা বা মারা যাওয়ার প্রভাব নেই। এমন কিছু কুসংস্কারের সাথে আজ পরিচয় করিয়ে দিবো আপনাদের। আর পরামর্শ দিবো যথাসম্ভব এগুলোকে নর্দমায় ফেলতে! ১) খেতে খেতে মৃদু কাশিঃ একইরকম একটা কুসংস্কার হলো, কিছু খেতে খেতে গলায় বেঁধে যাওয়া বা কাশি হওয়া। এই ঘটনায় বলা হয়, “কেউ হয়তো আমার নাম করছে বা গালি দিচ্ছে তাই এমনটি হলো!”। এইসব কথার না আছে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা না আছে কোনো বিন্দুমাত্র শক্ত যুক্তি। শক্ত যুক্তিই বা বলছি কেন? বরং, কোনরকম যুক্তিই নেই এমন হাস্যকর দাবির। আপনার হোঁচট খাওয়া,গলায় কাটা বিঁধে যাওয়া বা কাশি হওয়ার সাথে কারো কথার কিভাবে সম্পর্ক থাকে? অথচ, আমরা প্রতিনিয়ত এমন কথা বলে থাকি ও শুনি! ২) দরজায় বাধা পাওয়াঃ ঘর থেকে বের হয়েছেন কোন জরুরি কাজে। অসাবধানতা বশত হোঁচট খেলেন ঠিক ঘরের দরজাতে! আপনার বাবা-মা বা দাদী বাধা দিয়েছেন,”বাবা, আজ যেতে হবে না। হয়তো বিপদ আছে কোনো!” এমন সমস্যার মুখোমুখি আমরা হয়তো প্রায়ই হই। এখানে একটা যুক্তি দেওয়া যেতে পারে, “দরজায় হোঁচট খেলেন, আরেকটু সাবধান হোন।” কিন্তু, আপনার ভবিষ্যৎ বিপদ বা ভালো কিছু অর্জনের পিছনে দরজায় হোঁচট কোনো প্রভাব রাখবে কিভাবে? আপনি কেন এমন তুচ্ছ ও স্বাভাবিক ঘটনার কারণে যাত্রা-ই বন্ধ রাখবেন? এটা আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত কুসংস্কার, যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই! ৩) মরা গাছে কাক ডাকাঃ অনেকে মনে করেন, মরা গাছে কাক ডাকলে নাকি কারো মৃত্যু সংবাদ আসে। এ ধারণায় বিশ্বাসীরা সঙ্গে সঙ্গে কাক তাড়াতে নেমে পড়েন। কিন্তু কাক তাড়িয়ে মৃত্যুর সংবাদকে কতটা দূরে সরিয়ে রাখা যায়? এমন পাগলামির কি কোনো যুক্তি আছে? আর আমাদের সমাজে কাক ও কুকুরকে সবসময়ই ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা হয়। এটাকে নিছক মস্তিষ্কবিকৃতি ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে? ৪) শেষ রাতে শিয়াল ডাকাঃ কাক ডাকা দুঃসংবাদের হলেও শেষ রাতের শিয়ালের ডাককে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়! কারণ শেষ রাতে শিয়ালের ডাক ফসলের ভাল দাম পাওয়ার সংকেত। যারা এমনটাই বিশ্বাসী, তারা বেশির ভাগই কুকুরের ডাককে খারাপ সংকেত ভাবলেও শেয়ালের ডাককে শুভ সংকেত ভেবে থাকেন। শেষ রাতে শেয়ালের ডাক শুনে ফসলের ভালো দাম পাওয়ার স্বপ্নে আশার জাল বুনতে থাকেন। হয়তো কখনো কখনো সকালে উঠে মুরগীর ঘরের বিক্ষিপ্ত অবস্থা দেখে সেই ভোরের শেয়ালকেই গালি দিতে থাকেন! গ্রামের কৃষক সম্প্রদায়ের ভিতরে এই কুসংস্কারের ভক্তি খুব ভয়ংকরভাবে পরিলক্ষিত হয়। ৫) গভীর রাতে পেঁচার ডাকঃ পেঁচা তো রাতেই ডাকবে! তার পরও গভীর রাতে পেঁচার ডাককে অনেকে ঝগড়া-বিবাদের সংকেত মনে করেন। পেঁচা রাতে মাটি কামড়ে নাকি ঝগড়া বাড়িয়ে দিতে চায়! বাস্তবে ইঁদুর শিকারের জন্য রাতে পেঁচা মাটিতে নেমে আসে, কোনো মানুষের ভিতর ঝগড়া বাঁধাতে না। ৬) যাত্রাপথে খালি কলস দেখাঃ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় যদি সামনে খালি কলস পড়ে বা কেউ খালি কলস নিয়ে গেলে অনেকে যাত্রা বন্ধ রাখেন। কারণ যাত্রাপথের খালি কলস কাজে ব্যর্থ হওয়ার লক্ষণ। আবার অনেকে এটাকে অভাবের আগাম সংকেত হিসেবে ধরে নেন। যেমনটা দরজায় হোঁচট খাওয়া! বাস্তবে এটার সাথে বিপদের কোনো সম্পর্ক নেই। ৭) পিছন থেকে ডাকাঃ যখন আমি কুসংস্কারের তালিকা তৈরি করছি, তখন হঠাৎ আম্মুর ভিতরে এই কুসংস্কারের ছোঁয়া দেখে অনেক অবাক হয়েছিলাম। কেউ যাত্রা পথে পিছন থেকে ডাকলে নাকি বিপদ হয়! ভাবুন, আপনার পিছন থেকে কোনো গাড়ি এসে ধাক্কা দিবে, এমন অবস্থায় কেউ পিছন থেকে আপনাকে ডেকে সতর্ক করে দিলো, সেটা কি বিপদে ফেললো নাকি উদ্ধার করলো? ভিত্তিহীন ও চরম অবৈজ্ঞানিক ধারণার মধ্যে এটা একটা। ভেবে অবাক হতে হয়, আমি প্রচুর মানুষের ভিতরে এই ধরনের অন্ধ বিশ্বাস দেখেছি! ৮) হাতের তালু চুলকানোঃ ডান হাতের তালু চুলকালে টাকা আসবে। আর বাম হাতের তালু চুলকালে বিপদ আসবে! এমন হাস্যকর বিশ্বাস অনেকের ভিতরে অবস্থান করছে। যখন এটি লিখছি, তখন আমার হাতের তালু চুলকাচ্ছিলো, বাম হাতের তালু। বারবার চুলকানো দেখে এক ভাই বলেছিলো, বিপদ হতে পারে আমার! তৎক্ষণাৎ চমৎকার কিছু যুক্তি ছাড়া আমার কাছে কোনো বিপদ আসেনি! আর, বিপদ আসার সম্ভাবনাও দেখিনা এই স্বাভাবিক চুলকানির জন্য! মানুষের সহ যে কোন প্রাণীর কোনো ভালো কিছু অর্জন বা বিপদের জন্য কোনো চুলকানি, কলস, হোঁচট নয়, বরং তার কর্ম দায়ী। ৯) কথার মাঝে টিকটিকি ডাকাঃ দু’জনে বসে কথা বলার সময় হঠাৎ টিকটিকির আওয়াজকে ‘কথা সত্য’ এমন সাক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়। অনেকে এটাকে সত্যের ডাক বলে থাকেন। অনেকে তো একধাপ এগিয়ে গিয়ে টিকটিকির “টিক টিক” ডাকটা “ঠিক ঠিক” এ অনুবাদ করে বসেন! ১০) রাতে বিশেষ কিছু হস্তান্তর না করাঃ শুনে অবাক হলেও এটাই সত্যি যে, প্রচুর এলাকায় রাতের বেলা কাউকে সুঁই-সুতা, টাকা, চুন, হলুদ জাতীয় কিছু না দেওয়ার রেওয়াজ আছে। তাই গেঞ্জি ও গামছা ছিঁড়ে গেলে রাতে সেলাই করেন না অনেকে। রাতের বেলা কাউকে চুন ধার দিলে চুন না বলে দই বলা হয়! আমি অবাক হয়েছিলাম, নানা বাড়িতে গিয়ে অনেকের ভিতরে এমন কুসংস্কারের ছোঁয়া দেখে। নানি তো এটাতে খুব বিশ্বাসী! অনেক চেষ্টা ও যুক্তি দিয়ে তাঁকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম আমি। ১১) রাতে ঘরের বাইরে পানি না ছোড়াঃ গ্রামে রাতের খাওয়ার পর হাত ধোয়ার পানি সাধারণত ঘরের বাইরে ছুঁড়ে ফেলা হয় না। কুসংস্কার আছে, রাতে এভাবে পানি ফেলা ঠিক না। এতে নাকি অমঙ্গল হয়! কেমন অমঙ্গল? এটা জানতে চাইছিলাম এক ভদ্র মহিলার কাছে। তিনি বললেন, “এরূপ করলে ঘরে শয়তানের আনাগোনা বাড়ে। কারণ, কুকুর উঠানে উপস্থিত হয়। আর, কুকুর খারাপ!” আমি ব্যক্তিগতভাবে এলোমেলো পানি ছোঁড়া পছন্দ করি না, রাত হোক বা দিন। কারণ, সেটা অন্যকে অসুবিধায় ফেলতে পারে। আর, যত্রতত্র পানি কেন, কিছুই ফেলা উচিৎ না। কিছু ফেলার জন্য যথাযথ স্থান তৈরি করা উচিৎ। আমরা যদি বাইরে পানি না ফেলতে চাই, সে ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত কারণটি মানা উচিৎ, অদ্ভুত বিশ্বাস না। ১২) পুরুষের যৌন চিন্তাঃ বলা হয়ে থাকে যে অন্তত প্রতি সাত সেকেন্ডে একবার করে পুরুষদের মনে যৌন সংসর্গের খেয়াল আসে। কিন্তু এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা অজস্র গবেষণার পরে বলছেন যে, এই বিষয়টির পক্ষে কোনোরকম তথ্য ও বাস্তবতা নেই। এ গবেষণার পেছনে গবেষক আলফ্রেড কিনজির দিকে অনেকেই আঙুল তুললেও আসলে তিনি এমন কিছু বলেননি। তিনি তার একটি গবেষণায় বলেছিলেন যে প্রায় ৫৪ শতাংশ পুরুষ দিনে কয়েকবার এ ধরনের চিন্তা করে থাকেন। তাই যৌন সংসর্গের বিষয়ে নারী, নাকি পুরুষ- কারা বেশি আগ্রহী এ বিষয়ে যদিও বা তর্ক করা যেতেও পারে, কিন্তু প্রতি সাত সেকেন্ডে একবার পুরুষদের যৌন বিষয়ে চিন্তা একেবারেই অদ্ভুত দাবি। যেন পুরুষদের এছাড়া আর কোনো কাজ নেই! ১৩) মগজের ১০% ব্যবহারঃ ১৮০০ সালে বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন মানুষের মগজ কতটুকু ব্যবহৃত হয় তা নিয়ে বিপুল তর্ক-বিতর্কের পর উইলিয়াম জেমস এক প্রবন্ধে বলেন যে মানুষের মগজের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি অংশ তার পুরো জীবদ্দশায় ব্যবহৃত হয়, আর গুজব ছড়িয়ে যায় যে এই অংশটি সম্পূর্ণ মগজের মাত্র ১০%। প্রকৃতপক্ষে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য মগজের ভিন্ন ভিন্ন নির্দিষ্ট অংশ কাজ করে। কাজ ভেদে অনেক বেশি ব্যবহার করে থাকি। ১৪) মাথা ন্যাড়া করলে চুল লম্বা হয়ঃ আমার মনে পড়ে সেই ৬ কি ৭ বছর আগের কথা। যখন আমি শেষবার টাক করেছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিলো, ন্যাড়া হলে চুল ঘন হয়! আমি বিশ্বাস করেছিলাম। পরে জেনেছি সত্য কী! অনেকেই বিশ্বাস করেন মাথা ন্যাড়া করলে নাকি চুল পরেরবার গজানোর সময় আরো ঘন, কালো আর মোটা হয়ে ফেরত আসে, আর লম্বাও হয় খুব তাড়াতাড়ি! কিন্তু বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রমাণিত যে আসলে এগুলোর কিছুই ঘটে না। প্রকৃত সত্য হলো চুলের গোড়ার একটুখানি অংশ বাদে বাকি অংশটুকু পুরোটাই প্রাণহীন। তাই প্রাণহীন চুলের বৃদ্ধি সম্ভব না বলে চুল কেটে লাভ নেই। কারণ চুল লম্বা হয় গোড়া থেকে। আর নতুন চুল গজানোর পরে সূর্যের আলো পড়ে তাকে কিছুদিনের জন্য ঘন, কালো বা মোটা দেখালেও বিভ্রান্তি ছাড়া তা কিছুই নয়। ১৫) চীনের মহা প্রাচীর নাকি মহাকাশ থেকে দেখা যায়ঃ চীনের মহাপ্রাচীর বিশ্বের সব স্থাপত্যকলার মধ্যে অন্যতম। রিচার্ড হ্যালিবার্টন নামের একজন ইতিহাসবিদ দাবি করেছিলেন যে এই মহাপ্রাচীর নাকি এতটাই বিশাল এবং আশ্চর্যজনক যে তা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়! অবশ্য নাসা’র মহাকাশযান এই দাবিকে ভুল প্রমাণিত করেছে। কিন্তু তারপরেও মানুষের মধ্যে এখনো একটি ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে যে পৃথিবীর কাছাকাছিতে অবস্থানরত একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথ থেকে আসলেই এই স্থাপনাটি দেখা যায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীর সবচাইতে কাছের কক্ষপথ যেটা পৃথিবী থেকে মাত্র ১৮০ মাইল দূরে অবস্থিত, সেখান থেকেও যথেষ্ট লম্বা হওয়ার পরেও চীনের মহাপ্রাচীরের রঙকে এর আশেপাশের অন্যান্য প্রাকৃতিক রঙ থেকে আলাদা করে বোঝা যায় না। বরং বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দর আর হাইওয়ে সড়ক কিছুটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। মুসলিমদের পবিত্র স্থান কাবা শরীফ নিয়েও এরকম একটা মিথ চালু আছে। শত-সহস্র গুজব ও সামাজিক কুসংস্কারের মধ্যে কয়েকটা এখানে উল্লেখ করার চেষ্টা করলাম। আমরা নিজেদেরকে বেশি বেশি প্রশ্ন করতে পারি। বিশ্লেষণ করে দেখতে পারি, কোনটি বৈজ্ঞানিক, কোনটি অবৈজ্ঞানিক। আমরা বিজ্ঞান চর্চা করতে পারি, এবং এর দ্বারা নিজেদেরকেও উন্নতও করতে পারি। পারি নিজ নিজ অবস্থান হতে এসব কুসংস্কার ও গুজবের বিপক্ষে সঠিক যুক্তি দিয়ে, সত্য উপস্থাপন করে সমাজটাকে দ্রুত এগিয়ে নিতেSlider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: