জমি এবং কৃষক ছাড়াই যেভাবে কৃষিকাজে বিপ্লব আনছে জাপান
ফলমূল এবং সবজি মাঠে চাষ করেন না ইয়ুচি মোরি। তার ক্ষেত্রে আসলে মাটি বলে কোন জিনিস নেই। বরং এই জাপানি বিজ্ঞানী চাষাবাদের জন্য এমন একটি জিনিসের ওপর নির্ভর করেন, যেটি আসলে মানুষের বৃক্ক বা কিডনির চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হতো- আর তা হছে পরিষ্কার এবং সহজ ভেদ্য পলিমারের ঝিল্লি। ওই ঝিল্লির ওপরে উদ্ভিদ বড় হয়ে ওঠে, যা তরল এবং পুষ্টি মজুদ করে রাখে। যেকোনো পরিবেশে সবজি গাছগুলোকে বড় হওয়ার সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি, এই প্রযুক্তি প্রচলিত কৃষিকাজের তুলনায় ৯০ শতাংশ কম পানি ব্যবহার করে। সেই সঙ্গে কীটনাশকও ব্যবহার করতে হয় না- কারণ পলিমার নিজেই ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। এটি একটি উদাহরণ মাত্র, যা দিয়ে ভূমি এবং কর্ম শক্তির ঘাটতিতে থাকা জাপান কৃষি কাজে বিপ্লব ঘটিয়ে দিচ্ছে। ''কিডনি ডায়ালাইসিসের কাজে যে ঝিল্লি ব্যবহার করা হতো, আমি সেসব বস্তু এখানে ব্যবহার করছি,'' বিবিসিকে বলেছেন এই বিজ্ঞানী। তার কোম্পানি মেবাইওল প্রায় ১২০টি দেশে এই আবিষ্কারের পেটেন্ট বা স্বত্বাধিকার নিশ্চিত করেছে। এটা আসলে জাপানের অব্যাহত একটি কৃষি বিপ্লবকে সামনে তুলে ধরেছে। মাঠগুলো এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট আর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একেকটা টেকনোলজি সেন্টারে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তি অদূর ভবিষ্যতে ভালোভাবে ফসলের নজরদারি এবং রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দেবে। এ বছর পানিসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘের বিশ্ব প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে যে, বর্তমানে যে হারে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে এবং পানির ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৪০ শতাংশ শস্য উৎপাদন এবং ৪৫ শতাংশ বিশ্বের দেশজ পণ্য উৎপাদন ঝুঁকিতে পড়বে। ইয়ুচি মোরির আবিষ্কৃত কৃষি পদ্ধতি এর মধ্যেই জাপানের ১৫০টি এলাকায় ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আরব আমিরাতের মতো অনেক দেশ এই প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে। বড় ভূমিকম্প প্রবণ এবং ২০১১ সালের মার্চে পারমাণবিক বিপর্যয়ে পড়া এলাকাগুলোয় নতুন করে কৃষিকাজ শুরু করার জন্য এই পদ্ধতি বিশেষভাবে সহায়তা করছে। রোবট ট্র্যাক্টর ধারণা করা হয়, বিশ্বের জনসংখ্যা সাতশো সত্তর কোটি থেকে বেড়ে ২০৫০ সাল নাগাদ নয়শো আশি কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে। ফলে বিশ্বের খাদ্য চাহিদা মেটানোর বিষয়টিকে বড় ব্যবসায়িক সুযোগ হিসাবে দেখছে কোম্পানিগুলো, পাশাপাশি যন্ত্রপাতির বড় বাজারও তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে বিশ ধরণের রোবট তৈরির ব্যাপারে ভর্তুকি দিয়ে সহায়তা করছে জাপানের সরকার, যেগুলো কৃষিকাজের নানা পর্যায়ে সহায়তা করতে পারবে। নানা ধরণের ফসলের বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহের কাজ করবে এসব রোবট। হাক্কাইডো ইউনিভার্সিটির সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মেশিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইয়ানমার একটি রোবট ট্র্যাক্টর তৈরি করেছে, যেটি এর মধ্যেই ক্ষেতে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। একজন ব্যক্তি একই সময়ে দুইটি ট্র্যাক্টর চালাতে পারবে। সেন্সরের কারণে এসব ট্র্যাক্টর সামনে বাধা সনাক্ত করতে পারে এবং সংঘর্ষ এড়িয়ে যেতে পারে। এ বছরের শুরুর দিকে গাড়ি নির্মাতা নিশান সৌর শক্তি চালিত একটি রোবট তৈরি করে যেটি জিপিএস এবং ওয়াইফাই রয়েছে। ডাক নামের ওই বাক্স আকৃতির রোবটটি বন্যার শিকার হওয়া ধান ক্ষেতে ঢুকে পানি নিষ্কাশন, কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস আর পরিবেশগত প্রভাব নির্ণয়ে সহায়তা করেছে। কম মানুষকে নিয়ে খামারের কাজ প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে জাপানের সরকার তরুণ প্রজন্মকে আকর্ষিত করতে চায়, যাদের সরাসরি কৃষি ক্ষেতে কাজ করার আগ্রহ নেই, কিন্তু প্রযুক্তিতে দক্ষতা রয়েছে। এটি আসলে অর্থনীতির এমন একটি খাতকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা, যেখানে শ্রম শক্তি হারিয়ে যেতে বসেছে। গত এক দশকে জাপানে কৃষিকাজের সাথে জড়িত জাপানির সংখ্যা বাইশ লাখ থেকে কমে সতেরো লাখে দাঁড়িয়েছে। আরো জটিল ব্যাপার হলো, এখন একজন কৃষকের গড় বয়স হলো ৬৭ বছর এবং বেশিরভাগ খামারি খণ্ডকালীন কাজ করেন। জমির সংকট জাপানের কৃষিকাজের আরেকটি বড় সীমাবদ্ধতা, যেখান থেকে দেশটির মোট খাদ্য চাহিদার মাত্র চল্লিশ শতাংশ এসে থাকে। দেশটির প্রায় ৮৫ শতাংশ জমি হচ্ছে পাহাড়ি। চাষযোগ্য বেশিরভাগ জমিতে ধান চাষ করা হয়। ধান জাপানের প্রধান খাদ্য এবং এটি চাষের জন্য ধানচাষীদের ভর্তুকি দিয়ে থাকে সরকার। কিন্তু মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলে গেছে। আকাশ থেকে ছিটানো ১৯৬২ সালে একজন জাপানি বছরে ১১৮ কেজি চাল খেতেন। ২০০৬ সালে সেটি নেমে দাঁড়িয়েছে ৬০ কেজিতে। এর ফলে জাপানের কৃষিকাজেও ধানের বাইরে গিয়ে বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংখ্যা কম থাকায় জাপানের কৃষকদের যন্ত্র এবং জৈবপ্রযুক্তির দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। চালক বিহীন যান বা ড্রোনের মাধ্যমে আকাশ থেকে বীজ বা কীটনাশক জমিতে ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছে। একটি ড্রোন যা মাত্র আধঘণ্টা করতে পারে, একজন মানুষের হয়তো সেটা করতে পুরো একটি দিন লাগবে। উন্নত প্রযুক্তির ফলে এমনকি জমি ছাড়াই ফসলের বিস্তৃতিও ঘটানো যায়। গ্রিনহাউজ প্রযুক্তি এবং জল-চাষ প্রযুক্তি (যাতে মাটির পরিবর্তে খনিজ সমৃদ্ধ পানিতে উদ্ভিদ চাষ করা হয়) প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাপান ফলমূল এবং সবজি উৎপাদন করছে। চিবার একটি প্রতিষ্ঠান, মিরাই গ্রুপ মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত তাক তাক করে খাদ্যশস্য উৎপাদন শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে প্রতিদিন ১০ হাজার লেটুস সংগ্রহ করছে। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এভাবে প্রায় একশোগুণ বেশি ফসল পাওয়া যায়। একটি সেন্সর যন্ত্রের মাধ্যমে কোম্পানি কৃত্রিম আলো, তরল পুষ্টি, কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা এবং তাপমাত্রা পরিমাপ করতে পারে। কৃত্রিম আলো এসব উদ্ভিদকে দ্রুত বেড়ে উঠতে সাহায্য করে এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা রোগবালাইয়ের সম্ভাবনা দূর করে দেয়। তবে অতিরিক্ত শক্তি খরচের পরেও, জাপানে এ ধরণের ' উদ্ভিদ কারখানা গত এক দশকে তিনগুণ বেড়ে গেছে। বর্তমানে এরকম দুইশো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশ্ব বাজারে বর্তমানে জল-চাষ প্রযুক্তিতে দেড়শ কোটি ডলারের ব্যবসা হচ্ছে। কিন্তু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যালিয়েড মার্কেট রিসার্চ ভবিষ্যতবাণী করেছে যে, ২০২৩ সাল নাগাদ এই বাজারের আকার দাঁড়াবে ছয়শ চল্লিশ কোটি ডলারে। প্রযুক্তির হস্তান্তর জাপান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে আফ্রিকান দেশগুলোর বার্ষিক ধান উৎপাদনের হার দ্বিগুণ করে বছরে পাঁচ কোটি টনে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য বেশ কিছু প্রকল্পও গ্রহণ করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, সেনেগালে জাপান কৃষি প্রযুক্তি প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ করেছে এবং সেচ বিষয়ক প্রযুক্তি হস্তান্তর করেছে। ফলে, দেশটিতে প্রতি হেক্টরে ধানের উৎপাদন চার টন থেকে বেড়ে সাত টন হয়েছে এবং কৃষকদের আয় বিশ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাপানের কৌশল হলো, বেসরকারি বিনিয়োগ বিস্তারে সহায়তা করা এবং আফ্রিকা মহাদেশে টেকসই কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবসা বিস্তৃত করা। ভিয়েতনাম, মিয়ানমার এবং ব্রাজিলের সঙ্গেও দেশটির সহযোগিতার নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু জাপানের কৃষি বিপ্লবের আসল উদ্দেশ্য হলো নিজেদের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটি মোট খাদ্য চাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ নিজেরা উৎপাদন করতে চায়। আর সেটি তারা প্রযুক্তির সহায়তায় বাস্তবায়ন করতে চায়।Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News

No comments: