ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস কি ফ্যাসিবাদী সংগঠন? পৃথিবীতে এমন কোনও সংগঠন সম্ভবত নেই, যার সঙ্গে সাংগঠনিক কাঠামো বা কাজের ধরনের দিক থেকে আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আরএসএস-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসাবে, তবে সবসময়েই সংঘের দর্শনে থেকেছে হিন্দু জাতীয়তাবাদ। আরএসএস মনে করে হিন্দু শব্দটি কোনও জাতিকে বোঝায় না, ভারতে বসবাসকারী সবাইকেই হিন্দু বলা উচিত। আরএসএস-এর দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক (সঙ্ঘ-প্রধানকে এই সম্ভাষন করা হয়ে থাকে) মাধব সদাশিব গোলওয়ালকার মনে করতেন ভারতকে একটি মজবুত রাষ্ট্র হিসাবে গড়তে গেলে হিন্দুদের একজোট করা আর পুনরুত্থান ঘটানো জরুরি। সেভাবেই বিশ্বের উন্নয়ন-যজ্ঞে ভারত অংশ নিতে পারবে বলেই তাঁর মত ছিল। অ-হিন্দুদের সমান নাগরিক অধিকার দেওয়ারও বিপক্ষে ছিলেন মি. গোলওয়ালকার। তবে পরবর্তীকালে আরএসএস-এর রাজনৈতিক মঞ্চ বিজেপির অনেক নেতাই ওই মতামতকে সমর্থন করেননি। গোড়ার দিকের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মত থেকে আরএসএস সরে এসেছে। আগে তারা ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে অংশ নিতে চায়নি, কিন্তু সেই মতামতও বদলে গেছে সময়ের সঙ্গে। তবে যে বিষয়টায় কোন বদল আসেনি তাহলো ধর্ম নিয়ে তাদের অবস্থান - সেটাই তাদের জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি। ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা উগ্র জাতীয়তাবাদী বেশ কিছু সংগঠন অবশ্য পৃথিবীর অন্যান্য জায়গাতেও রয়েছে। সেগুলোর কোনটা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলকেই নিজেদের লক্ষ্য বানিয়েছে, কোন কোন সংগঠন আবার উগ্রপন্থার রাস্তায় হেঁটেছে। সংঘ আর ফ্যাসিবাদ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শামসুল ইসলামের মতে, "সংঘ এবং ফ্যাসিবাদ-নাৎসিবাদের সম্পর্ক অনেক পুরণো।" ইতালীয় গবেষক মার্জিয়া কাসোলারিকে উদ্ধৃত করে অধ্যাপক ইসলাম জানিয়েছেন সংঘের নেতাদের সঙ্গে মুসোলিনির সাক্ষাৎ হয়েছিল। তবে হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জ্যোতির্ময় শর্মা মনে করেন যে আরএসএস-কে কোন বিশেষ 'লেবেল' দেওয়া অথবা তাদের কোন বিশেষ শ্রেণীতে ফেলে দেওয়াটা 'বৌদ্ধিক আলস্য'। তিনি বলছিলেন, "আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবিরা আরএসএস-কে গালাগালি হিসাবে ফ্যাসিস্ট বলে থাকেন। এটা কোনও গভীর গবেষণা বা বৌদ্ধিক চর্চার ফসল নয়।" "এটা তো এক ধরণের বিচারধারার আলস্য। পৃথিবীতে এ রকম অনেক সংগঠন রয়েছে যারা ধর্ম আর রাজনীতির মিশেল ঘটিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব সামনে এনেছে," বলছিলেন মি. শর্মা। জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতি মি. শর্মা অবশ্য এটা স্বীকার করেন যে সংঘের যে দর্শন, তার মূল ভিত্তি হল উগ্র জাতীয়তাবাদ। আরএসএস-এর মতাদর্শের সঙ্গে ম্যাৎসিনির চিন্তাধারা তুলনা করছিলেন মি. শর্মা। "ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি মিশিয়ে দেওয়ার এই চিন্তাধারা ম্যাৎসিনিরও ছিল। ইতালির একীকরণ হওয়ার সময়েই তিনি বলেছিলেন যে ধর্ম ছাড়া কোনও জাতীয়তাবাদ বা রাজনীতি বিফল হয়ে যাবে। সেই ভাবনাটাই আরএসএস-এরও রয়েছে। সংঘের চিন্তাধারার মধ্যে এমন কোনও বিষয় নেই, যেটা আমাদের দেশের নিজস্ব। প্রতিটা ক্ষেত্রেই তারা পশ্চিমা চিন্তা নিয়ে এসেছে," মন্তব্য মি. শর্মার। যদি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের চিন্তাধারা ভারতীয় না হয়, তাহলে সেটা কী? কোনও কোনও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি যেভাবে সংঘকে দক্ষিণপন্থী বলে উল্লেখ করে থাকেন, সেটাই কি সত্যি? 'দা ব্রাদারহুড ইন স্যাফ্রন' নামের বইটির লেখক ওয়াল্টার অ্যান্ডারসান দীর্ঘদিন ধরে আরএসএস নিয়ে গবেষণা করেছেন। ওই বইতেই তিনি লিখেছিলেন, "পৃথিবীর অন্য কোনও সংগঠনের সঙ্গে আরএসএস-এর তুলনা চলে না।" "আরএসএস এবং বিজেপি মিলে যে কাজটা করে, তার সঙ্গে জাপানের বৌদ্ধ সংগঠন 'সাকা গাকাই'য়ের অনেকটা মিল রয়েছে। এ রকম সংগঠন বিশ্বে আর বোধহয় দ্বিতীয়টি নেই, যাদের সাংগঠনিক কাঠামো এত শক্ত পোক্ত," মন্তব্য মি. অ্যান্ডারসনের। ২০০৩ সাল অবধি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মি. অ্যান্ডারসন। তাঁর কথায়, "এরা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত, আদিবাসী আর মহিলাদের জন্য কাজ করে। আবার ভারতের অন্যতম বৃহৎ এবং শক্তিশালী শ্রমিক ইউনিয়ন বা ছাত্র সংগঠন - এগুলোও আরএসএস-এর নিয়ন্ত্রণাধীন।" তবে জ্যোতির্ময় শর্মার মতে, "অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে আরএসএস-এর মিল খুঁজে বের করা খুব কঠিন নয়। কিন্তু সংঘের জন্য নতুন কোনও শ্রেণী বা লেবেল খুঁজে বের করতে হলে আমাদের একটু পরিশ্রম করতে হবে, মাথা খাটাতে হবে।" "রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে গেলে আরএসএস 'লেফট অব সেন্টার'-এর মধ্যে পড়ে। ভারতে বিদেশী বিনিয়োগ আটকাতে বা স্বদেশী জাগরণের মতো ইস্যুগুলোতে আরএসএস শাখাগুলো তো সিপিআই-এম'এর মতোই কথা বলে। সেজন্যই বলছি যেসব রাজনৈতিক শ্রেণীবিভাজন রয়েছে, যেমন লেফট অব সেন্টার, রাইট অব সেন্টার, ফার রাইট, রিলিজিয়াস রাইট - এইসব শব্দগুলো আরএসএস-এর বেলায় খাটে না। তারা রাজনৈতিকভাবে দক্ষিণপন্থী ঠিকই, কিন্তু আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রগুলোতে তাদের দক্ষিণপন্থী বলা যাবে না," বলছিলেন মি. শর্মা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক গিরিজা শঙ্কর অবশ্য মনে করেন যে সংঘ হিন্দু জাতীয়তাবাদের নীতিতেই বিশ্বাসী, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তারা মনে করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখল করার পরে নিজেদের এজেন্ডা কার্যকর করতে হবে। "আমার তো মনে হয় না দুনিয়ায় অন্য কোনও সংগঠন রয়েছে, যারা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা দখল করার পরে নিজস্ব এজেন্ডায় কাজ করে।" তাহলে সংঘকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে? অধ্যাপক জ্যোতির্ময় শর্মা বলছেন, "আরএসএস-এর হিন্দুত্ববাদের ছায়া আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের মধ্যেও দেখা যায়। ১৯৪৭ সালের পরের যে সরকারি জাতীয়তাবাদ, যেটাকে আমি দূরদর্শনের জাতীয়তাবাদ বলি [দূরদর্শন ভারতের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন], সেখানে তো দলিতদের কথা নেই, নারীরা বাদ, আদিবাসীদের কথাও থাকে না। তিনি বলেন, "সমস্যাটা হলো, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমরা সেই সরকারি জাতীয়তাবাদকেই ধর্মের মতো করে মেনে নিয়েছি। এর বাইরে সংঘের জাতীয়তাবাদ হোক বা অন্য কোনও জাতীয়তাবাদ, সব কিছুকেই সরকারি জাতীয়তাবাদের সঙ্গেই তুলনা করে দেখতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।" "আরএসএস-এর জাতীয়তাবাদকে বুঝতে গেলে সরকারী জাতীয়তাবাদের বিচার বিশ্লেষণ প্রয়োজন," বলছিলেন অধ্যাপক জ্যোতির্ময় শর্মা।
Slider
দেশ
মেহেরপুর জেলা খবর
মেহেরপুর সদর উপজেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
যাবতীয়
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Home
»
»Unlabelled
» ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস কি ফ্যাসিবাদী সংগঠন?
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: