Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » » এ পি জে আব্দুল কালাম: মহান ভারতীয় বিজ্ঞানী ও ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি




এ পি জে আব্দুল কালাম: মহান ভারতীয় বিজ্ঞানী ও ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম জন্মগ্রহণ করেন তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম শহরে। তিনি ছিলেন একটি দরিদ্র তামিল মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া সন্তান। তাঁর বাবা জয়নুলাবেদিন ছিলেন একজন ইমাম এবং নৌকার মালিক। তাঁর মা আশিয়াম্মা ছিলেন একজন গৃহিণী। পরিবারের ব্যবসা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় এবং ছোটবেলায় তাঁকে পরিবারের আর্থিক সহায়তার জন্য সংবাদপত্র বিক্রি করতে হতো। কিন্তু সব কষ্টের মধ্যেও তিনি পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন। গণিতে ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহ।

তিনি তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক হন এবং পরে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT) থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন। এখানেই একবার তাঁর ডিন তাঁকে একটি প্রকল্প শেষ করার জন্য মাত্র তিন দিন সময় দেন। আব্দুল কালাম কঠোর পরিশ্রম করে সময়মতো কাজ শেষ করেন এবং ডিনের প্রশংসা পান। বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মজীবন ১৯৬০ সালে তিনি প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO)-তে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে তিনি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (ISRO) যোগ দেন এবং ভারতের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী রকেট SLV-III-র প্রকল্প পরিচালক হন। ১৯৮০ সালে এই রকেট সফলভাবে “রোহিণী” স্যাটেলাইটকে মহাকাশে স্থাপন করে। তাঁর নেতৃত্বে ভারত ‘প্রজেক্ট ডেভিল’ এবং ‘প্রজেক্ট ভ্যালিয়েন্ট’-এর মাধ্যমে নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে থাকে। এ সময় ইন্দিরা গান্ধীর সরকার গোপনে এই প্রকল্পগুলিতে অর্থসাহায্য করে। তিনি সরকারকে এমন গোপন প্রকল্পে বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হন। তাঁর নেতৃত্বে ‘অগ্নি’ ও ‘পৃথ্বী’ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি হয়, যা ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মজবুত ভিত গড়ে তোলে। তিনি ১৯৯২ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীদের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ছিলেন এবং এই সময় ভারতের দ্বিতীয় পরমাণু পরীক্ষায় (পোখরান-II, ১৯৯৮) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। এছাড়াও, তিনি ডাক্তার সোমা রাজুর সঙ্গে কাজ করে একটি সস্তা হৃদরোগের স্টেন্ট তৈরি করেন, যার নাম হয় “কালাম-রাজু স্টেন্ট”। পরে তাঁরা মিলে “কালাম-রাজু ট্যাবলেট” তৈরি করেন, যা গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত হয়। রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম ২০০২ সালে আব্দুল কালাম ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনিই প্রথম বিজ্ঞানী ও প্রথম অবিবাহিত ব্যক্তি যিনি রাষ্ট্রপতি হন। তিনি শাসক দল ও বিরোধী দলের সম্মিলিত সমর্থনে নির্বাচিত হন এবং সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সবাই তাঁকে ভালোবেসে ডাকতে শুরু করেন “জনতার রাষ্ট্রপতি”। তিনি একটি অভিন্ন নাগরিক আইন (Uniform Civil Code) চালুর পক্ষে মত দেন এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে কাজ করার সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। তবে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অবসরের পর জীবন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব শেষ করার পর তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করেন। তাঁর শিক্ষাদানের জায়গাগুলোর মধ্যে ছিল IIM শিলং, IIM আহমেদাবাদ, IIM ইন্দোর এবং আন্না বিশ্ববিদ্যালয়। মৃত্যু ২৭ জুলাই ২০১৫ সালে, কালাম শিলং-এ IIM-এ এক বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন। বক্তৃতার কিছুক্ষণ পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মঞ্চেই অচেতন হয়ে যান। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৮৩ বছর। তাঁর মৃতদেহ দিল্লিতে নিয়ে আসা হয় এবং সেখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি শ্রদ্ধা জানান। পরে তাঁর দেহ রামেশ্বরমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ৩০ জুলাই ২০১৫ সালে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ করা হয়। ৩.৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ তাঁর শেষ যাত্রায় অংশ নেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ ও বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া ভারতজুড়ে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। সরকার সাতদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করে। বাংলাদেশ, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দক্ষিণ এশীয় দেশের নেতারা তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে “জনতার রাষ্ট্রপতি” বলে উল্লেখ করেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন প্রমুখও তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। স্মৃতিসৌধ ২০১৭ সালে রামেশ্বরমের পেই কারুম্বু এলাকায় ডঃ এ. পি. জে. আব্দুল কালাম জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধন করেন। এখানে কালামের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের ছবি, তাঁর বানানো রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রের মডেল, এবং বীণা বাজানোর ভঙ্গিতে তাঁর একটি মূর্তি রয়েছে। উপসংহার: ডঃ এ. পি. জে. আব্দুল কালাম ছিলেন একজন অনুপ্রেরণাদায়ক মানুষ, যিনি কঠোর পরিশ্রম, সততা, ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ ভারতীয়ের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি আজও আমাদের প্রেরণার উৎস।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply