আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি: চারদিকে নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্ক
বাংলাদেশে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি, গুম-খুন, অপহরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে নাগরিকদের মাঝে সার্বিক নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এরকম একটি প্রক্ষাপটে দেশের পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক আজ (মঙ্গলবার) বলেছেন, নাগরিকদের প্রত্যেকের নিরাপত্তাবোধ (সেন্স অব সিকিউরিটি) থাকতে হবে।
নিজস্ব নিরাপত্তাবলয় তৈরি করতে হবে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা থাকবে। রাজধানীর কলাবাগানে দুজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আজ দুপুরের দিকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আইজিপি।
গতকাল কলাবাগানের বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। জুলহাজ মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি-তে কর্মরত ছিলেন। সমকামীদের অধিকার বিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’-এর সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। আর তনয় মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শহীদুল হক বলেন, সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই হত্যার ধরন এক মনে হলেও একটির সঙ্গে আরেকটিকে মেলানো যাবে না। কলাবাগানের ঘটনা সম্পর্কে আইজিপি শহীদুল হক বলেন, হত্যাকাণ্ডটি সুপরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। খুনিরা অনেক দিন ধরে রেকি করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে মনে হয়। হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কি না- জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, তারা এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নন। তদন্ত শেষে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্ট বা স্বতন্ত্র বাড়ির সবাইকে তারা সিসিটিভি লাগানোর জন্য অনুরোধ করেছেন, চিঠি দিয়েছেন। প্রতিটি মহল্লার সমিতির সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন, সিসিটিভি লাগানোর জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সবাই যদি সিসিটিভি না লাগায় তাহলে তাদের বাধ্য করা যায় না। বাধ্য করতে হলে সরকারকে আইন করতে হবে।
শহীদুল হক বলেন, “আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির সেন্স অব সিকিউরিটি থাকতে হবে। তার নিজের নিরাপত্তা, তার প্রতিবেশীর নিরাপত্তা, এলাকার নিরাপত্তা- এটা শুধু ঘরে ঘরে পাহারা দিয়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পারবে না। নাগরিকদের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা, বলয় তৈরি করতে হবে। তাদের পাশে আমরা থাকব। কিন্তু তাদের এগিয়ে আসতে হবে।”
পুলিশ প্রধানের এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি বলেন, পুলিশ বা রাষ্ট্র যদি নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় তবে পরিস্থিতি আরো ভয়ানক রূপ নেবে।
এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এবং নারী সংহতির সভাপতি শ্যামলি শীল রেডিও তেহরানকে বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়া; কিন্তু বর্তমান সরকার তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই তাদের ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া উচিত।
ওদিকে রাজশাহী মহানগরীতে এ সপ্তাহে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য পুলিশের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি সেখানে “এন্টি টেরোরিস্ট ফোর্স” বা সন্ত্রাস দমন বাহিনী নিয়োগেরও পরামর্শ দিয়েছেন।#
No comments: