মেহেরপুরের বীরাঙ্গনা
মেহেরপুরের বীরাঙ্গনা ও বীরাঙ্গনা কন্যা স্বাধীনতা পরবর্তী যাদের জীবন কঠিন বাস্তবতার মধ্যে চলে মেহেরপুরের দুই বিরাঙ্গনা মারা গেছে। এক বিরাঙ্গনা বিভিন্ন বাড়িতে ঠিকে ঝিয়ের কাজ করে। আরেক বিরাঙ্গনার কন্যা নিজেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কণ্যা বলে দাবী করে। এবং সে বীরাঙ্গণা কণ্যা পরিচয়ে গর্ব করে। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য অনেকে অনেক খেতাব পেয়েছেন। কেউ বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীর প্রতীক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। কিন্তু মেহেরপুরে মুক্তিযুদ্ধে ভাষাণ ঘরামির মেয়ে বুড়ি, ফৌজদারি পাড়ার মফে শেখের মেয়ে ঈষা (জাহানারা), একই পাড়ার সুরমান হকের স্ত্রী সাজি খাতুন ও কাশ্যব পাড়ার কাঠফাড়ায় মিস্ত্রি ইছারদির মেয়ে মুনজুরা খাতুনদের বীরাঙ্গণা হিসেবে চিহ্নিত করা হযনি। পাকসেনারা আদিম উন্মত্ততার ফসল বিরাঙ্গনা মুনজুরার মেয়ে ছেপি খাতুন। এই বীরাঙ্গনা কন্যা ও বীরাঙ্গনাদের ভাগ্যে আজও জোটেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। কালের গহ্বরে তাদের অবদান যেন ছাইচাপা পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও এরা উপেক্ষিত। কঠিন বাস্তবতার মধ্যে তারা বসবাস করছে। এরমধ্যে মারাগেছে মুনজুরা ও বুড়ি। স্বাধীনতার পর বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৭২ সালে প্রতিটি জনসভায় বীরাঙ্গনাদের উদ্দেশে বলেন, “কেউ যদি বীরাঙ্গনার সন্তানদের পিতার নাম জিজ্ঞেস করে, তবে বলে দিও তাদের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। আর তাদের ঠিকানার পাশে লিখে দিও ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর।” মুক্তিযুদ্ধের সময় লাঞ্ছিত, নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। অথচ মেহেরপুরের বীরাঙ্গণাদের স্থানীয সমাজ তখা রাষ্ট্র মূল্যায়ন করেনি। স্বাধীনতা পরবর্তী এদের জীবন চলছে কঠিন বাস্তবতার মধ্যে। পাকসেনাদের লালশায় মুনজুরার গর্ভে জন্ম হয় একটি কন্যা সন্তানের। বীরাঙ্গণা জননী মুনজুরার মেয়ে ছেপি বলেন ‘দেশের মধ্যে থেকে আমার মা একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছে। আমার জন্ম পাক সেনাদের ঔরসে। অথচ কোন সরকারই আমার মায়ের আত্মত্যাগের কোন মূল্য দেয়নি। দেয়নি তার ত্যাগের স্বীকৃতি। চিকিৎসার অভাবে মায়ের মৃত্যু এখনও তাকে কুরে কুরে খায়। ছেপি খাতুন একথা বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে জন্ম হয় ছেপি খাতুনের। বর্তমানে ছেপি কাশ্যব পাড়ায় বসবাস করলেও সে তার পিতার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার ঠিকানা ধানমণ্ডি- ৩২ নম্বর বলে জানায়। কারণ হিসেবে বলেনÑ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বীরাঙ্গণার কন্যাদের এই পরিচয়ে পরিচয় দেয়ার জন্য বলেছে বলে লোকমুখে শোনা কথা অনেকের কাছেই জাহির করে। ছেপি জানায় জন্ম নিয়ে তার ক্ষোভ নেই। বরং তার মা জন্মকালে মেরে না ফেলে তাকে লালন পালন করেছে এটা তার বড় গর্বের। ছেপি স্বীকার করে বলেন তার মা মুনজুরা খাতুনের স্বাধীনতা পরবর্তী আছে এক কালো অধ্যায় (শরীর বিক্রি)। সেই কালো অধ্যায় থেকেই ভরণ পোষণ করেছেন ছেপির। পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে শাড়ি বিক্রি করতেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় মেহেরপুর শহরে বড়বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকের একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতো মুনজুরা। একদিন পাকসেনারা তার বাড়িতে এসে জোরপূর্বক কয়েকজন পাকসেনা পালাকরে তাকে ধর্ষণ করে । পরবর্তীতে গুলি করে হত্যা করবে বলে ভয় দেখিযে পাকসেনারা নিয়মিত ধর্ষণ করতো। মুনজুরা খাতুন নিজ প্রাণের সাথে দেশের জন্য তাদের দাবী মেনে নেয়ার কথা শুনিয়েছেন বেঁচে থাকা কালে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুনজুরাকে সমাজ মেনে নেয়নি। মেনে নেয়নি বাবা-মা ও আত্বীয় স্বজন। তবে সিরাজুল ইসলাম নামে এক যুবক তাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়। কিন্তু সেই সংসার বেশীদিন টেকেনি। পরবর্তীতে অর্থকষ্টে চিকিৎসার অভাবে ১৯৯৮ সালের ২৫ মে মারা যায়। মুনজুরা খাতুন মেহেরপুরের মন্ডল পাড়ার কাঠফাড়ায়ের মিস্ত্রি ইছারদ্দির মেয়ে। এই বীরাঙ্গনার কন্যা ছেপি তার মায়ের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির দাবী করে। পাক সেনাদের আরেক গণধর্ষণের শিকার মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মফের শেখের কন্যা জাহানারা খাতুন (ঈশা)। কথা হয় জাহানারার সাথে। জাহানারা বলেনÑ গ্রামের রাজাকার আবুল খাঁর সাথে তার বিয়ে হয় ১৯৭০ সালে। তখন বয়স ১৭। এরই মধ্যে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। স্বামী রাজাকারে নাম লেখায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন মে মাসের দিকে রাজাকার স্বামীর শারীরীক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে মেহেরপুরে। এসময় পাকসেনারা তাকে ধরে নিয়ে যায় মেহেরপুর কোর্টচত্বরে পাকসেনা ক্যাম্পে। সেখানে পাকসেনারা পালাক্রমে ধর্ষন করে। এই লজ্জায় সে আর গ্রামে ফিরতে পারিনি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গ্রামে একমাত্র ভাই ফরজ আলীর কাছে গিয়ে আশ্রয় মেলেনি পাকিস্তানী সেনাদের ধর্ষিতা বলে। ফিরে আসে মেহেরপুর শহর। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিয়ে হয় মান্নান খা নামে এক মোটর সাইকেলের মেকারের সাথে। সেই স্বামীর সাথে মনোমালিন্য হবার কারণে সম্পর্ক ছেদ করতে হয়েছে। জাহানারা এখন শিল পাটা ফেরি করে বিক্রি করেন। মান্নান খার ঔরসে জন্ম নেয়া একমাত্র ছেলে মোটর সাইকেলের মেকার। পাকসেনাদের ধর্ষনের স্বীকার জাহানারা জানায় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমাণ্ডারের কাছে বিভিন্ন সময়ে সাহায্য সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছে কিন্তু কোন সাহায্য সহযোগিতা মেলেনি। মেহেরপুর শহরের ফৌজদারি পাড়ার সুরমান আলীর স্ত্রী সাজি খাতুন। মুক্তিযুদ্ধের জুনমাসের প্রথম দিকে অসুস্থ স্বামীর সেবা শুশ্রষা করছিলো। বাড়ির পাশ দিয়ে পাকসেনাদের একটি দল যাবার সময় সাজিকে চোখে পড়ে । তার বাড়িতে প্রবেশ করে পাকসেনাদের দল। বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা আছে বলে সাজিকে মারধর শুরু করে। এ সময় হাঁপানীর রোগী স্বামী সুরমান বাধা দিতে গিয়ে স্ট্রোক করে মারা যায়। মৃত স্বামীর পাশে সেই পাকসেনারা সাজিকে নিয়ে আদিম উন্মত্ততায় মেতে ওঠে। পরবর্তীতে তাকে প্রতিদিন পাকসেনাদের কলেজ ক্যাম্পে যাতায়াত করতে হতো। এমনই তথ্য দেন সাজি। মুক্তিযুদ্ধের পর সাজি ভেবেছিল স্বাধীন দেশ আর দেশের মানুষই তার নতুন অবলম্বন হয়ে উঠবে। কিন্তু এই দেশ বা দেশের মানুষ কেউই তাকে মনে রাখেনি। তার অবলম্বনও হয়ে ওঠেনি। এ পর্যন্ত কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। সাজি এখন বিভিন্ন বাড়িতে ঠিকে ঝিয়ের কাজ করে। মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কামাণ্ডার বশির আহমেদ জানানÑ জাহানারা, মুনজুরা ও সাজি পাকসেনাদের ধর্ষনের স্বীকার। তারা দেশের ভেতর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে। মুনজুরা বেঁচে থাকাকালে এবং ঈষা কয়েকবছর আগে তাদের বর্তমান দুরাবস্থার কথা জানিয়ে সাহায্য সহযোগিতা চেয়েছিল। তাদের পরামর্শ দেয়া হয় সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে আবেদন করতে। কিন্তু তারা আবেদন করেনি।Slider
বিশ্ব
জাতীয়
মেহেরপুর জেলা
গাংনী উপজেলা
মুজিবনগর উপজেলা
ফিচার
খেলা
মেহেরপুর সদর উপজেলা
ছবি
ফেসবুকে মুজিবনগর খবর
Mujibnagar Khabor's Admin
We are.., This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Labels
- Advertisemen
- Advertisement
- Advertisementvideos
- Arts
- Education
- English News
- English News Featured
- English News lid news
- English News national
- English News news
- English Newsn
- Entertainment
- Featured
- games
- id news
- l
- l national
- li
- lid news
- lid news English News
- lid news others
- media
- national
- others
- pedia
- photos
- politics
- politics English News
- t
- videos
- w
- world
- Zilla News
No comments: