Sponsor



Slider

দেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » মেহেরপুরের সাহিত্য:যতীন্দ্রমোহন বাগচী (১৮৭৮-১৯৪৮)




মেহেরপুরের সাহিত্য:যতীন্দ্রমোহন বাগচী (১৮৭৮-১৯৪৮) খ্যাতনামা কবি ও সম্পাদক ---------------------------------------------------- কাজলা দিদি -যতীন্দ্রমোহন বাগচী বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?

পুকুর ধারে লেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই- মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই? সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;- দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো? খাবার খেতে আসি যখন, দিদি বলে ডাকি তখন, ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো? আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি করে থাকো? বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে? কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে! দিদির মত ফাঁকি দিয়ে, আমিও যদি লুকাই গিয়ে তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে, আমিও নাই-দিদিও নাই- কেমন মজা হবে। ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল, মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল। ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে, উড়িয়ে তুমি দিও না মা, ছিঁড়তে গিয়ে ফল,- দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল! বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই- এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই? লেবুর ধারে পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে’ ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতে জেগে রই রাত্রি হলো মাগো আমার কাজলা দিদি কই? অপরাজিতা – যতীন্দ্রমোহন বাগচী পরাজিতা তুই সকল ফুলের কাছে, তবু কেন তোর অপরাজিতা নাম? বর্ণ-সেও ত নয় নয়নাভিরাম | ক্ষুদ্র অতসী, তারো কাঞ্চন-ভাতি ; রূপগুণহীন বিড়ম্বনার খ্যাতি! কালো আঁখিপুটে শিশির-অশ্রু ঝরে— ফুল কহে—মোর কিছু নাই কিছু নাই, ফুলসজ্জায় লজ্জায় যাই নাক, বিবাহ-বাসরে থাকি আমি ম্রিয়মাণ | মোর ঠাঁই শুধু দেবের চরণতলে, পূজা-শুধু-পূজা জীবনের মোর ব্রত ; তিনিও কি মোরে ফিরাবেন আঁখিজলে— অপরাজিতা ---------------------- পরাজিতা তুই সকল ফুলের কাছে, তবু কেন তোর অপরাজিতা নাম? বর্ণ-সেও ত নয় নয়নাভিরাম | ক্ষুদ্র অতসী, তারো কাঞ্চন-ভাতি ; রূপগুণহীন বিড়ম্বনার খ্যাতি! কালো আঁখিপুটে শিশির-অশ্রু ঝরে— ফুল কহে—মোর কিছু নাই কিছু নাই, ফুলসজ্জায় লজ্জায় যাই নাক, বিবাহ-বাসরে থাকি আমি ম্রিয়মাণ | মোর ঠাঁই শুধু দেবের চরণতলে, পূজা-শুধু-পূজা জীবনের মোর ব্রত ; তিনিও কি মোরে ফিরাবেন আঁখিজলে— অন্ধ বধূ ----------------- পায়ের তলায় নরম ঠেকল কী! আস্তে একটু চলনা ঠাকুর-ঝি — ওমা, এ যে ঝরা-বকুল ! নয়? তাইত বলি, বদোরের পাশে, রাত্তিরে কাল — মধুমদির বাসে আকাশ-পাতাল — কতই মনে হয় । জ্যৈষ্ঠ আসতে কদিন দেরি ভাই — আমের গায়ে বরণ দেখা যায় ? —অনেক দেরি? কেমন করে’ হবে ! কোকিল-ডাকা শুনেছি সেই কবে, দখিন হাওয়া —বন্ধ কবে ভাই ; দীঘির ঘাটে নতুন সিঁড়ি জাগে — শেওলা-পিছল — এমনি শঙ্কা লাগে, পা-পিছলিয়ে তলিয়ে যদি যাই! মন্দ নেহাৎ হয়না কিন্তু তায় — অন্ধ চোখের দ্বন্ধ চুকে’ যায়! দুঃখ নাইক সত্যি কথা শোন্ , অন্ধ গেলে কী আর হবে বোন? বাঁচবি তোরা —দাদা তো তার আগে? এই আষাড়েই আবার বিয়ে হবে, বাড়ি আসার পথ খুঁজে’ না পাবে — দেখবি তখন —প্রবাস কেমন লাগে ? —কী বল্লি ভাই, কাঁদবে সন্ধ্যা-সকাল ? হা অদৃষ্ট, হায়রে আমার কপাল ! কত লোকেই যায় তো পরবাসে — কাল-বোশেখে কে না বাড়ি আসে ? চৈতালি কাজ, কবে যে সেই শেষ ! পাড়ার মানুষ ফিরল সবাই ঘর, তোমার ভায়ের সবই স্বতন্তর — ফিরে’ আসার নাই কোন উদ্দেশ ! —ঐ যে হথায় ঘরের কাঁটা আছে — ফিরে’ আসতে হবে তো তার কাছে ! এই খানেতে একটু ধরিস ভাই, পিছল-ভারি — ফসকে যদি যাই — এ অক্ষমার রক্ষা কী আর আছে ! আসুন ফিরে’ — অনেক দিনের আশা, থাকুন ঘরে, না থাক্ ভালবাসা — তবু দুদিন অভাগিনীর কাছে! জন্ম শোধের বিদায় নিয়ে ফিরে’ — সেদিন তখন আসব দীঘির তীরে। ‘চোখ গেল ঐই চেঁচিয়ে হ’ল সারা। আচ্ছা দিদি, কি করবে ভাই তারা — জন্ম লাগি গিয়েছে যার চোখ ! কাঁদার সুখ যে বারণ তাহার — ছাই! কাঁদতে গেলে বাঁচত সে যে ভাই, কতক তবু কমত যে তার শোক! ’চোখ’ গেল– তার ভরসা তবু আছে — চক্ষুহীনার কী কথা কার কাছে ! টানিস কেন? কিসের তাড়াতাড়ি — সেই তো ফিরে’ যাব আবার বাড়ি, একলা-থাকা-সেই তো গৃহকোণ — তার চেয়ে এই স্নিগ্ধ শীতল জলে দুটো যেন প্রাণের কথা বলে — দরদ-ভরা দুখের আলাপন পরশ তাহার মায়ের স্নেহের মতো ভুলায় খানিক মনের ব্যথা যত ! এবার এলে, হাতটি দিয়ে গায়ে অন্ধ আঁখি বুলিয়ে বারেক পায়ে — বন্ধ চোখের অশ্রু রুধি পাতায়, জন্ম-দুখীর দীর্ঘ আয়ু দিয়ে চির-বিদায় ভিক্ষা যাব নিয়ে — সকল বালাই বহি আপন মাথায় ! — দেখিস তখন, কানার জন্য আর কষ্ট কিছু হয় না যেন তাঁর। তারপরে – এই শেওলা-দীঘির ধার — সঙ্গে আসতে বলবনা’ক আর, শেষের পথে কিসের বল’ ভয় — এইখানে এই বেতের বনের ধারে, ডাহুক-ডাকা সন্ধ্যা-অন্ধকারে — সবার সঙ্গে সাঙ্গ পরিচয়। শেওলা দীঘির শীতল অতল নীরে — মায়ের কোলটি পাই যেন ভাই ফিরে’! যতীন্দ্রমোহন বাগচী (১৮৭৮-১৯৪৮) কবি, সম্পাদক। অবিভক্ত মেহেরপুরের করিমপুরে জমশেরপুর গ্রামে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২৭ নভেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন।১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের আগে মেহেরপুর, গাংনী, করিমপুর, তেহট্ট ও চাপড়া নামক পাঁচটি থানা মেহেরপুর মহকুমা ছিল। . তাঁর পৈতৃক নিবাস হুগলি জেলার বলাগড় গ্রামে। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতার ডাফ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। পরে বিভিন্ন সময়ে তিনি বিচারপতি সারদাচরণ মিত্রের সচিব, নাটোরের মহারাজার সচিব, কলকাতা কর্পোরেশনের লাইসেন্স-ইন্সপেক্টর, এফ.এন গুপ্ত কোম্পানির ম্যানেজার প্রভৃতি পদে চাকরি করেন। যতীন্দ্রমোহন অল্প বয়স থেকেই কাব্যচর্চা শুরু করেন। ভারতী, সাহিত্য প্রভৃতি বিখ্যাত পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হলে তিনি কবি হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি মানসী পত্রিকার সম্পাদক (১৯০৯-১৯১৩), যমুনা পত্রিকার যুগ্ম-সম্পাদক (১৯২১-১৯২২) এবং পূর্বাচল পত্রিকার সম্পাদক ও স্বত্বাধিকারী (১৯৪৭-১৯৪৮) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যতীন্দ্রমোহন ছিলেন রবীন্দ্রোত্তর যুগের শক্তিমান কবিদের অন্যতম। পল্লিপ্রকৃতির সৌন্দর্য ও পল্লিজীবনের সুখ-দুঃখের কথা তিনি দক্ষতার সঙ্গে প্রকাশ করেন। ভাগ্যবিড়ম্বিত ও নিপীড়িত নারীদের কথা তিনি বিশেষ দরদের সঙ্গে প্রকাশ করেছেন। ‘কাজলাদিদি’ ও ‘অন্ধবন্ধু’ তাঁর এ ধরনের দুটি বিখ্যাত কবিতা। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো : লেখা (১৯০৬), রেখা (১৯১০), অপরাজিতা (১৯১৫), নাগকেশর (১৯১৭), জাগরণী (১৯২২), নীহারিকা (১৯২৭), মহাভারতী (১৯৩৬) ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ ও যুগসাহিত্য তাঁর একটি বিশেষ গদ্যগ্রন্থ। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply